ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের ১০ বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন শ’ শতাংশ

বিসিএসে ফের মেধাবীরা ঝুঁকছেন, দ্রুত পদোন্নতিও পাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮

বিসিএসে ফের মেধাবীরা ঝুঁকছেন, দ্রুত পদোন্নতিও পাচ্ছেন

তপন বিশ্বাস ॥ জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো ভালভাবে পূরণ এবং মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় মেধাবীরা আবার বিসিএসের দিকে ঝুঁকছেন। বর্তমান সরকারের ১০ বছরে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে তিনশ’ শতাংশ। এছাড়া রয়েছে আবাসন, গাড়ি এমনকি বাড়ি করার জন্য স্বল্প সুদে লোনের ব্যবস্থা। এখন দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বিসিএসের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন মেধাবীরা। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ জনকণ্ঠকে বলেন, জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো ভালভাবে পূরণ হচ্ছে। নানা সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি দ্রুত পদোন্নতি হওয়ায় মর্যাদাও পাচ্ছেন কর্মকর্তারা। যে কারণে আগের তুলনায় বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন তরুণ ও মেধাবীরা। তিনি বলেন, সিভিল সার্ভিসকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করতে সরকার কাজ করছে। আগামীতে এটি আরও আকর্ষণীয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিসিএসের প্রতিবার আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ৪০তম বিসিএসের জন্য আবেদন করেছেন রেকর্ডসংখ্যক চার লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ চাকরি প্রার্থী, যা ইতিহাসের যে কোন বিসিএসের তুলনায় বেশি। এর আগে বিসিএসে রেকর্ড আবেদন ছিল ৩৮ বিসিএসে। সেখানে আবেদন করেছিলেন ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ প্রার্থী। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন তরুণ প্রজন্মের বিসিএসে আগ্রহ বাড়ার বেশ কিছু কারণ আছে। বিসিএস পরীক্ষা এখন শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে। যেখানে পিএসসি স্বাধীন সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে। কারণ সরকার কমিশনকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছে। কোন বিতর্ক নেই বিসিএস পরীক্ষায়। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের মাঝে বিসিএসে আস্থা বেড়েছে শতভাগ। এছাড়া সরকার চাকরিজীবীদের সুযোগ সুবিধাও বাড়িয়েছে। মেধাবীরা এখন এ পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরি নিয়ে অনেক ভাল করতে পারছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ভাল একটি চাকরি নিয়ে দেশসেবার মানসিকতাও এখন তরুণদের মাঝে প্রবল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে বিসিএস আকর্ষণীয় হওয়ার বেশি কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কারণ বেতনভাতা বৃদ্ধি। মহাজোট সরকারের বিগত ১০ বছরে (২০০৯ ও ২০১৫ স্কেলের হিসেবে) বিসিএসের প্রবেশ পদে (নবম গ্রেডে) বেতন বেড়েছে ৩২৩ শতাংশেরও বেশি। তিনি বলেন, আগে আবাসন ব্যবস্থা ছিল আট শতাংশ মাত্র। বর্তমানে এটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ’১৯ সালে আবাসন সুবিধা দাঁড়াবে ৪০ শতাংশে। গাড়ির সুবিধা রয়েছে প্রায় অধিকাংশ কর্মকর্তা কমাচারীদের। এর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য রয়েছে সরকারী বাসের ব্যবস্থা। দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের শ্রেণীভেদে ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারী ব্যবস্থায় তাদের জন্য রয়েছে গাড়ি। এছাড়া উপসচিব ও তদোর্ধ কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে প্রাধিকার ভুক্ত গাড়ির ব্যবস্থা। এতে একজন কর্মকর্তা বিনা সুদে গাড়ি ক্রয় বাবদ পাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা। এখানেই শেষ হয়, গাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিমাসে পাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা করে। এ টাকা দিয়ে গাড়ির জ্বালানি ও চালকসহ সবকিছু রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এতে সরকারও যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি কর্মকর্তারাও লাভবান হচ্ছেন। সরকারের লাভ নতুন করে কোন চালককে নিয়োগ দিচ্ছে না, একজন চালকের বেতনভাতা অন্যান্য সুবিধাদি এবং গাড়ির জ্বালানি, সংরক্ষণ মিলে এই ৫০ হাজার টাকায় কোন মতে গাড়ি পরিচালনা সম্ভব হতো না। ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার নিচে এটি যেমন সম্ভব ছিল না, তেমনি নতুন গাড়ি দ্রুত অকেজো হয়ে পড়ত। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দ্রুত এটি নষ্ট হয়ে যেত। এটি টিকিয়ে রাখা ছিল সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করায় সরকারের পাশাপাশি কর্মকর্তারাও লাভবান হচ্ছেন। এই ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি পরিচালনা করে অনেকে গাড়ির মাসিক কিস্তি পরিশোধ করছেন। আবার গাড়িটির কিস্তি পরিশোধের পর নিজের হওয়ায় এর ওপর বাড়তি যতœ নিচ্ছেন। এতে গাড়িটিও ভাল চলছে। সরকার এখন সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য গৃহঋণ চালু করেছে। মাত্র পাঁচ শতাংশ সুদে এই ঋণ দেয়া হচ্ছে। এই ঋণ পাওয়াও অনেক সহজ। এতে কোন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী চাইলে সহজে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে যেতে পারেন, এমনকি কয়েকজন মিলে জমি কিনে ডেভেলপার দিয়ে বাড়ি বানিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। তিনি বলেন, এছাড়া আগে যেখানে বিলম্বে পদোন্নতি হতো এখন সেখানে দ্রুত পদোন্নতি হচ্ছে। পরিকল্পিতসংখ্যক কর্মকর্তাদের দিয়ে ব্যাচ তৈরি করায় পদোন্নতি দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে। পদোন্নতি জট না থাকায় এখন আর মর্যাদা নিয়ে অত ভাবতে হয় না। এসব কারণে এখন মেধাবীরা আকৃষ্ট হচ্ছেন সিভিল সার্ভিসের প্রতি।
×