ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্প্যানিশ লা লিগার ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ফ্রি-কিকে দুই গোলের কীর্তি এলএম টেনের, বার্সিলোনায় বিধ্বস্ত এস্পানিওল

মেসিময় এক রাত

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

 মেসিময় এক রাত

জিএম মোস্তফা ॥ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল করাটা তার নিয়মিত স্বভাব। শনিবার এস্পানিওলের জালেও বল জড়িয়েছেন তিনি। একটি নয়, এস্পানিওলের জালে এদিন দুইবার বল জড়ান লিওনেল মেসি। স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব বার্সিলোনাও ম্যাচটা জিতেছে ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে। এস্পানিওলের বিপক্ষে নিজে দুটি গোল করার পাশাপাশি বাকি দুটি গোলেও অবদান ছিল লিওনেল মেসির। তবে ডেম্বেলে আর সুয়ারেজের গোল দুটির চেয়ে এদিন সমর্থকদের মুগ্ধ করেছে মেসির জোড়া গোল। এলএম টেনের করা দুটি গোলই যে দুর্দান্ত। সরাসরি ফ্রি-কিকে গোল দুটি করেন তিনি। দুটি গোলেই ছিল নান্দনিকতার ছোঁয়া। প্রতিপক্ষের জালে এদিন দুটি গোল করে নিজেকে স্প্যানিশ লা লিগার ইতিহাসে ঢুকিয়ে দিলেন মেসি। লা লিগার এ যাবতকালের ইতিহাসে মেসিই প্রথম ফুটবলার যিনি এক ম্যাচে ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি দুটি গোল করার রেকর্ড গড়লেন। লীগের সুদীর্ঘ ইতিহাসে যা পারেনি আর কোন ফুটবলার। এস্পানিওলের মাঠে এদিন আতিথ্য পায় আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। শুরু থেকেই দারুণ ছন্দময় ফুটবল খেলে সফরকারীরা। তবে প্রথম গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় ১৭ মিনিট পর্যন্ত। প্রথমার্ধের ১৭ মিনিটে ২৭ গজ দূর থেকে নিজের এবং বার্সিলোনার প্রথম গোলটি করেন লিওনেল মেসি। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৫ মিনিটে করেন ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোল। এই গোলের সৌজন্যেই ৪-০ গোলে এগিয়ে যায় কাতলানরা। তবে মেসির দুই গোলের মাঝে এস্পানিওলের জালে আরও দুইবার বল জড়ান ওসমান ডেম্বেলে ও লুইস সুয়ারেজ। ২৬ মিনিটে বার্সিলোনার গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উসমান ডেম্বেলে। মেসির দুর্দান্ত পাস থেকে বল পেয়েই প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ান এই ফরাসী স্ট্রাইকার। বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে সুয়ারেজ গোল করলে ম্যাচের ফলাফল দাঁড়ায় ৩-০। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য মেসি ছাড়া আর কেউ গোল করতে পারেনি। এস্পানিওলের বিপক্ষে গোল করে আরও একটা রেকর্ড নিজের করে নিলেন মেসি। লা লিগার ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা ১৩ মৌসুমে ১০ কিংবা তারও বেশি গোল করার রেকর্ড গড়লেন এলএম টেন। শুধু তাই নয়, গত ৪-৫ বছরের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, মেসি যেন মিশনে নেমেছেন, নিজেকে বিশ্বের সেরা ফ্রি কিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রমাণ করতে। শনিবার মেসির দুটি ফ্রি কিকই আটকানোর সাধ্য ছিল না এস্পানিওলের স্প্যানিশ গোলরক্ষক ডিয়েগো লোপেজের। এই নিয়ে ২০১৮ সালে মেসির ফ্রি কিক থেকেই দশটা গোল হয়ে গেল। বার্সিলোনার জার্সিতে মেসির পায়ে ফ্রি কিক মানেই এখন গোল। ২০১৪ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু ফ্রি কিক থেকেই ১৯ গোল করেছেন মেসি। অন্য খেলোয়াড়ের কথা বাদ দিন, এই সময়ে অনেক বাঘা বাঘা ক্লাবেরও ফ্রি কিকে এতগুলো গোল নেই। ২০১৪ সালের পর থেকে ফ্রি কিকে ১৮টি গোল করেছে জুভেন্টাস। ১৪টা করে গোল করেছে রিয়াল মাদ্রিদ, এএস রোমা ও অলিম্পিক লিওঁ, ১২টি গোল করেছে সাম্পদোরিয়া, মোনাকো ও পিএসজি, ১১টি গোল করেছে লিভারপুল, এসি মিলান ও চেলসি। মেসিকে কেউ ছুঁতেই পারছেন না ফ্রি কিক থেকে গোল দেয়ার ক্ষেত্রে। ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রতি বছর মেসি ফ্রি কিক থেকে গোল করেছিলেন একটি করে। এর পরের বছরগুলোর পরিসংখ্যান দেখলে চমকে উঠবেন আপনি! ২০১২ আর ২০১৬ সালে সাতটি করে গোল করেছেন তিনি। ২০১৩ সালে তিনটি। তার পরের দুই বছরে চারটি করে। ২০১৭ সালে ফ্রি-কিকে করা মেসির গোলসংখ্যা ছিল ৫টি। এ বছরে সেই সংখ্যাটাই তার দ্বিগুণ। নিজ শহরে এস্পানিওলই বার্সিলোনার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ, এদের সঙ্গে বার্সার ম্যাচটা পরিচিতি পায় ‘কাতালান ডার্বি’ হিসেবে। কাতালান ডার্বিতে ফ্রি কিক থেকে গোল করাটা মেসি যেন অভ্যাসের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ২০১২ সালের ডার্বিতেও এভাবে ফ্রি কিকে এক গোল করেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালেও ফ্রি কিক থেকে এস্পানিওলের বিপক্ষে গোল করেছিলেন আরও একটি। আর শনিবার করলেন দুটি। সবমিলিয়ে এস্পানিওলের বিপক্ষে ৩২ ম্যাচ খেলে ২৩ গোল আর ১১ বার গোল সহায়তা করেছেন মেসি। এই জয়ের ফলে শীর্ষস্থানটা আরও সুসংহত হলো বার্সিলোনার। ১৫ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ এখন ৩১ গোল। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সেভিয়া। সমান সংখ্যক ম্যাচ থেকে সেভিয়ার দখলে ২৮ পয়েন্ট। তিনে থাকা এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পয়েন্টও ২৮। চারে রয়েছে আলাভেস। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে বার্সিলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ আছে পাঁচে। তবে একটি ম্যাচ কম খেলেছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।
×