ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লাস বর্জন করে ছাত্রীদের অনশন

জামিনে মুক্তি পেলেন ভিকারুননিসার শিক্ষিকা হাসনা হেনা

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

 জামিনে মুক্তি পেলেন ভিকারুননিসার শিক্ষিকা হাসনা হেনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার মামলায় গ্রেফতার শিক্ষিকা হাসনা হেনা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। রবিবার তার নিশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীদের অনশন কর্মসূচীর পর বিকেলেই তিনি জামিন পান। এর আগে শিক্ষিকার মুক্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন করে তিন ঘণ্টা অনশন কর্মসূচী পালন করেছে কলেজের বেশ কিছু ছাত্রী। তবে সকল পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন ছাত্রীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসার সামনে পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ ও অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। ‘হাসনা হেনা আপার মুক্তি চাই’, ‘জাতির কারিগর কেন কারাগারে’, ‘হাসনা হেনার মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত অনশন অব্যাহত’, ‘লিখতে শিখিয়েছে যে হাত’, ‘সে কেন খাবে জেলের ভাত’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। অনশন পালন করা একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারিয়া বলেছে, শিক্ষক হলো মায়ের মতো। তিনি বকা দেবেন, আবার আদরও দেবেন। আজ আমাদের সেই মা কারাগারে আছেন। মাকে কারাগারে রেখে আমরা বাইরে বসে থাকতে পারি না। তার মুক্তি দেয়া না হলে আমরা অনশন চালিয়ে যাব। সালেহা বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, দোষীদের বিচার অবশ্যই চাই। তাই বলে নির্দোষ কোন ব্যক্তি ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন না। আমরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি। তাদের আন্দোলন যৌক্তিক। শুক্রবারের ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রবিবারও ক্লাসে যায়নি। তবে নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছে, এই শিক্ষক ঘটনার সঙ্গে কোনভাবেই দায়ী নন, তিনি ‘পরিস্থিতির শিকার’। তিন ঘণ্টার অনশন শেষে ঘটনাস্থালে আসেন নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগমসহ কয়েকজন শিক্ষক। শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন গবর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙ্গান সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হাসিনা বেগম। দুপুর পৌনে ১টার দিকে প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু শিক্ষককে নিয়ে গেটের বাইয়ে এসে ‘অনশন’ কর্মসূচী পালন করা ছাত্রীদের পানি পান করান তিনি। এ সময় ছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের প্রতি ভালবাসার টানে তোমরা আন্দোলনে নেমেছো। তোমাদের এই ভালবাসায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু আমরা ক্লাসে বসে থাকব আর তোমরা ক্লাস বর্জন করে বাইরে বসে অনশন করবে তা হতে পারে না। অনশন করতে হয় সবাই একসঙ্গে করব। তিনি আরও বলেন, যেহেতু বিষয়টি আইনী প্রক্রিয়ায় রয়েছে তাই আইনীভাবে এটি মোকাবেলা করা হবে। আইনের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এ অবস্থায় তোমরা যদি আন্দোলন অব্যাহত রাখ তাহলে বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণœ করবে। এদিকে দুপুরে অনশন চলাকালে সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে আন্দোলনরত ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ফাউন্ডেশনের আওতাধীন শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই আহ্বান জানান। শিক্ষা সচিব বলেন, এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিকারুননিসা নিয়ে অনেক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। ভিকারুননিসার পাকিস্তানী আমলের নাম পরিবর্তন করা হবে কি না- সেই প্রশ্নে সচিব বলেন, আমি আপনাদের আগেই বলেছি আমরা অনেক পদক্ষেপ নেব। যত প্রশ্ন এসেছে, যত অভিযোগ এসেছে, ইতোমধ্যে আদালত একটা কমিটি করে দিয়েছেন, আমরাও কমিটি করেছি। আমরাও পরিদর্শন করব, বিভিন্নভাবে চেষ্টা করব। যেসব অভিযোগ অভিভাবকেরা করছেন, শিক্ষার্থীরা করছে, আপনারা করছেন, সেগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আরও নিতে থাকব যাতে একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠান হয়। ঢাকার নামকরা এই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ কিভাবে কার্যকর থাকবে, শিক্ষকরা কিভাবে পরিচালিত হবেন, শিক্ষার্থীরা কিভাবে ভাল থাকতে পারবে, ফলও ভাল হবে- সে রকম কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেয়া শুরু হয়েছে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, যাতে প্রতিষ্ঠানটি ভালভাবে চলে, শিক্ষক, অভিভাবকদের সন্তুষ্টি থাকে, যাতে শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষুণœ থাকে, শিক্ষার্থীরা প্রকৃত নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য আমাদের সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মামলার প্রেক্ষিতেই মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে সচিব সোহরাব বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এটুকু বলতে পারি যিনি যা প্রাপ্য নন তিনি যেন তা না পান সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি। কোন অবস্থাতেই যাতে কেউ অন্যায়ভাবে পরিস্থিতির শিকার না হন, সে চেষ্টাও করছি। এদিকে বিকেল ৫টার দিকে শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে জামিন দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকি বিল্লাহ তার জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে হাসনা হেনার জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম।
×