ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামবেন আজ

নতুন মাইলফলকের ম্যাচ মাশরাফির

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

নতুন মাইলফলকের ম্যাচ মাশরাফির

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগামী নবেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গেলে ক্যারিয়ার পূর্ণ যুবক হয়ে উঠবে। ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বর্তমানে শুধু ওয়ানডে ফরমেটে থাকার কারণটা সবারই জানা। শুধু পায়েই ৭টি বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের কারণে অনেক আগেই টেস্ট ক্রিকেটে পদচারণা থেমে গেছে, ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছেন টি২০ ফরমেট থেকেও। সবমিলিয়ে হিসেব করলে প্রায় ৫ বছর ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে মুছে গেছে মাশরাফির। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খেতাব পাওয়া এ পেসার তবু যখনই কিছুটা সুস্থ ও ফিট ছিলেন তখনই স্বয়ংক্রিয় পছন্দ হিসেবে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আর সে কারণেই ৩৫ বছর বয়সে এসে প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলার বিরল কীর্তি গড়তে চলেছেন। আজ সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস করার সঙ্গে সঙ্গেই ওয়ানডে ইতিহাসের ২৪৭২তম ক্রিকেটারের মধ্যে ৭৮তম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলার গৌরবময় অর্জন লেখা হবে তার নামের পাশে। তবে বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলক আর কারও নেই। বাংলাদেশর জার্সিতে অবশ্য আজ ১৯৮তম ম্যাচ মাশরাফির, ২টি ম্যাচ খেলেছেন এশিয়া একাদশের হয়ে। অর্থাৎ টাইগারদের জার্সিতে ২০০ পূর্ণ হতে চলতি সিরিজের তিনটি ম্যাচই খেলতে হবে তার। ২০০১ সালের ৮ নবেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ ঘটেছিল মাত্র ১৮ বছর বয়সে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে টেস্ট দিয়েই শুরু করেছিলেন মাশরাফি। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সে মাসেই চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ওয়ানডে যাত্রা শুরু হয়। টি২০ ফরমেট চালুর পর ২০০৬ সালে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অভিষেক হয়। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ফরমেটেরই অধিনায়ক হিসেবে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে বছরই ইনজুরির কারণে সিরিজের প্রথম ম্যাচ হিসেবে প্রথম টেস্টে খেলতে নেমে প্রথমদিনই ছিটকে পড়েছিলেন। ইনজুরি তারপর থেকে তার নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। তাই খেলতে পারেননি ২০১১ বিশ্বকাপও। দলে যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন ইনজুরির কারণে। এভাবে প্রায় ৫টি বছরই তার মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে। অবশেষে নেতৃত্ব ফিরে পেতে পেতে ২০১৪ সালের অক্টোবর। এবার দুই ফরমেটের অধিনায়ক। টেস্ট খেলা শৈল্যবিদ, ফিজিওথেরাপিস্ট ও চিকিৎসকদের পরামর্শে বাদ দিতে হয়েছে ২০০৯ সালেই। তবে ২০০৪ থেকে খুব ভাল কেটেছে মাশরাফির। মাঝে শুধু নিউজিল্যান্ড সফরে খেলা হয়নি ইনজুরির কারণে। এছাড়া নিয়মিতই তিনি খেলে যাচ্ছেন ওয়ানডে ও টি২০। গত ৪ বছর প্রায় নির্বিঘেœ কাটিয়েছেন যা তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে টানা খেলার রেকর্ড। নিরবচ্ছিন্নভাবে এভাবে ক্যারিয়ারের আর কোন সময়েই খেলার সুযোগ হয়নি। আর সে কারণেই শেষ পর্যন্ত প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মর্যাদার একটি মাইলফলক স্পর্শ করতে চলেছেন তিনি। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামবেন মাশরাফি। হয়তো দীর্ঘ সময় ইনজুরি ক্যারিয়ার থেকে কেড়ে না নিলে এদিন ম্যাচ সংখ্যা আরও অনেক বেশি থাকতো। এর আগে ওয়ানডে ইতিহাসে ২০০ ওয়ানডে খেলার মাইলফলক ছুঁয়েছেন বিশ্বের ৭৭ জন ক্রিকেটার। যার মধ্যে সর্বাধিক ৪৬৩ ম্যাচ খেলার বিশ্বরেকর্ড আছে ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন রমেশ টেন্ডুলকরের। এরপর আছেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়বর্ধনে (৪৪৮) ও সনাথ জয়সুরিয়া (৪৪৫) এবং কুমার সাঙ্গাকারা (৪০৫)। এ চারজন ৪ শতাধিক ওয়ানডে এবং আরও ১৬জন খেলেছেন ৩ শতাধিক ওয়ানডে। বাকি ৫৭ জন খেলেছেন ২ শতাধিক ওয়ানডে। ২০০ ওয়ানডে খেলার তালিকায় এশিয়ার ক্রিকেটারের সংখ্যাই বেশি। এশিয়া অঞ্চলের ৪২জন ক্রিকেটার এ গৌরব দেখিয়েছেন। সেদিক থেকে এশিয়ার ৪৩তম এবং বিশ্বের ৭৮তম ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলার কীর্তি গড়বেন আজ মাশরাফি। ২০০৭ সালের জুনে ব্যাঙ্গালুরু ও চেন্নাইতে ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়া ২টি ম্যাচ খেলেছিলেন আফ্রিকা একাদশের বিরুদ্ধে এশিয়া একাদশের হয়ে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের জার্সিতে মাশরাফির আজ ১৯৮তম ম্যাচ। এ সিরিজের ৩ ওয়ানডেতেই খেলতে পারলে সিলেটে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের জার্সিতেও ২০০ ওয়ানডে খেলার কীর্তি গড়বেন তিনি। মাশরাফির কাছাকাছি আছেন ১৯৫ ওয়ানডে খেলা মুশফিকুর রহীম ও ১৯২ ওয়ানডে খেলা সাকিব আল হাসান। মাশরাফি ১৯৯ ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ১৪.০০ গড়ে ১৭২২ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ২৫২ উইকেট। এই মাইলফলক স্পর্শের ম্যাচটি নিয়ে মাশরাফি তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমার আসলে খেয়াল ছিল না। আমি আগেও বলেছি, এগুলো আমাকে স্পর্শ করে না। এগুলো আমার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণও না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কালকের ম্যাচটা জেতা। এইদিক থেকে ভাল লাগছে যে, বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ফরমেটে অন্তত ২০০তম ম্যাচ হচ্ছে। এটা অবশ্যই ভাল লাগবে একটা সময় যখন মানুষ বলবে, তুমি বাংলাদেশের হয়ে ২০০টা ম্যাচ খেলেছ। এটা অবশ্যই একটা অর্জন।’
×