ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে প্রথম

মৃত দাতার জরায়ু প্রতিস্থাপনে প্রথম শিশুর জন্ম

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

মৃত দাতার জরায়ু প্রতিস্থাপনে প্রথম শিশুর জন্ম

চিকিৎসা বিজ্ঞানের এবারই প্রথম কোন মৃত মানুষের জরায়ু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সুস্থ শিশু জন্ম দিলেন এক মা। বুধবার বিজ্ঞানীরা এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছেন। চিকিৎসা বিষয়ক দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার মতে, মাইলফলক জরায়ু প্রতিস্থাপনে ওই অপারেশনটি ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে করা হয়। খবর এএফপির। অপারেশনের মাধ্যমে দেখা গেছে যে, মৃত্যুর পর দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া জরায়ু প্রতিস্থাপন সম্ভব। যা জরায়ুর সমস্যাকবলিত হাজার হাজার নারী যারা সন্তান জন্ম দিতে পারে না তাদের সন্তান জন্মদানে সক্ষম করে তুলবে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জন্ম নেয়া ওই শিশুটি একটি কন্যাশিশু ছিল। সম্প্রতি পর্যন্ত যেসব নারীরা জরায়ুর সমস্যার কারণে সন্তান জন্ম দিতে পারেন না তাদের ক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প ছিল সন্তান দত্তক নেয়া বা গর্ভ ভাড়া করে সন্তানের মা হওয়ার সেবাটি নেয়া। জীবিত কোন ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া জরায়ু প্রতিস্থাপন করে সফলভাবে প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল ২০১৪ সালে সুইডেনে। এরপর এ ধরনের ঘটনা আরও দশটি সেখানে ঘটেছে। তবে সম্ভাব্য জীবিত দাতাদের কাছ থেকে জরায়ু প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন এমন নারীদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। তাই ডাক্তাররা এমন একটি উপায় খোঁজার চেষ্টা করছিলেন যাতে মারা গেছেন এমন কোন নারীর জরায়ু প্রতিস্থাপন করে কি ধরনের কাজ করে তা নিয়ে গবেষণা করার। এজন্য দশটি পদক্ষেপ নেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র, চেক রিপাবলিক ও তুরস্কে আগে এ ধরনের সফলতা এসেছে বলে বুধবার প্রতিবেদনে জানান হয়। শতকরা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দম্পতির বন্ধ্যাত্ব সমস্যা রয়েছে। এই দলের মধ্যে পাঁচ শ’ নারীর মধ্যে একজনের জরায়ুর সমস্যা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ত্রুটিপূর্ণ জরায়ুর গঠন, সার্জিক্যাল অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু সব অংশ অপসারণ অথবা সংক্রমণ জরায়ুতে সমস্যা সৃষ্টি করে। যেজন্য নারীরা গর্ভবতী হতে ও একটি সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়। ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলো হাসপাতালের ডাক্তারদের শিক্ষক দানি ইঝেনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, জরায়ুর বন্ধ্যাত্ব রয়েছে এমন নারীদের জন্য আমাদের গবেষণাটি একটি নতুন বিকল্প হিসেবে ধারণা দিয়েছে; যা এখন প্রমাণিত। এই পদ্ধতিটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি মাইলফলক। নিজের মৃত্যুর পর দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বেচ্ছায় দান করার জন্য ইচ্ছুক ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ব্যক্তিদের সংখ্যা জীবিত দাতাদের থেকে অনেক বেশি। ৩২ বছর বয়সী যে নারী অন্যের জরায়ুর মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন তিনি একটি বিরল রোগের ফলে জরায়ুবিহীন হয়ে জন্মেছেন। জরায়ু প্রতিস্থাপনের চার মাস আগে তিনি ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে আটটি ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখেন। জরায়ু দাতা একজন ৪৫ বছর বয়সী নারী। তিনি স্ট্রোকে মারা যান। তার মৃত্যুর দশ ঘণ্টারও বেশি সময় পর সার্জারির মাধ্যমে জরায়ু অপসারণ ও প্রতিস্থাপন করা হয়। সার্জারির দলকে দাতার জরায়ুর শিরা, ধমনী, লিগামেন্ট ও যৌনাঙ্গের পথটি যুক্ত করতে হয়েছিল। নতুন অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান করার হাত থেকে তার দেহকে প্রতিরোধ করার জন্য ওই নারীকে পাঁচটি ভিন্ন ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। যার মধ্যে এন্টিমাইক্রোবিয়াল, রক্ত-প্রতিরোধক চিকিৎসা ও এ্যাসপিরিন ছিল। পাঁচ মাস পর জরায়ু নতুন অঙ্গকে প্রত্যাখ্যান করার কোন চিহ্ন দেখায়নি। আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান স্বাভাবিক ছিল এবং ওই নারীর নিয়মিত ঋতুস্রাবও হচ্ছিল। সাত মাস পর হিমায়িত করে রাখা ডিম্বাণুগুলো জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। দশদিন পর ডাক্তাররা ভাল খবর দেন যে ওই নারী গর্ভবতী হয়েছেন। ৩২সপ্তাহ চলাকালে ওই নারীর কিডনিতে সামান্য সংক্রমণ দেখা দেয়। এন্টিবায়োটিক দিয়ে তা সারিয়ে তোলা হয়। গর্ভাবস্থা স্বাভাবিক ছিল। প্রায় ৩৬ সপ্তাহ পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে দুই দশমিক পাঁচ কিলোগ্রাম (প্রায় ছয় পাউন্ড) ওজনের একটি মেয়ে শিশু জন্ম দেন। তিনদিন পর মা ও শিশুটি হাসপাতাল ছেড়ে যায়। জরায়ু প্রতিস্থাপনের সময় সি-সেকশনটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। যার ফলে ওই নারী ইমিউন্সপ্রেসসিভ ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল। যখন গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশের জন্য জমা দেয়া হয়েছে তখন শিশুটির বয়স ছিল সাতমাস ১২ দিন। সে সময় শিশুটি মায়ের বুকের দুধ পান করছিল এবং তার ওজন ছিল সাত দশমিক দুই কিলোগ্রাম। গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর মন্তব্য করতে বলা হলে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অবসটিট্রিকস এ্যান্ড গাইনোকোলজির সম্মানিত ক্লিনিক্যাল লেকচারার ডাঃ স্রাডজান সাসো বলেন, আমরা গবেষকদের অভিনন্দন জানাতে চাই কেননা গবেষণার ফলাফলটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্টিলিটি সোসাইটির প্রেসিডেন্ট রিচার্ড কেনেডিও ঘোষণাটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে সাবধানতা অবলম্বনের ওপর তিনি জোর দেন। তিনি বলেন, জরায়ু প্রতিস্থাপন একটি নতুন কৌশল এবং এটি পরীক্ষামূলক হিসেবে গণ্য করা উচিত।
×