ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট

জি-২০ সম্মেলনে কালো ছায়া

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

জি-২০ সম্মেলনে কালো ছায়া

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে বিশ্বনেতারা জড়ো হয়েছেন বার্ষিক জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পদক্ষেপ এবং চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কালো ছায়া সম্মেলনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। খবর বিবিসির। ইউক্রেনের নৌবাহিনীর তিনটি যুদ্ধজাহাজ রাশিয়া জোর করে আটক করেছে। এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন। শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সম্ভাব্য আলোচনা অগ্রগতির আশাও কমে গেছে। এমনকি দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাবনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই সম্মেলন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য একটি কূটনৈতিক পরীক্ষা। অক্টোবর মাসে তুরস্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যার বিষয়ে দেশটির সম্ভাব্য যুক্ত থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শুক্রবার ব্যাংকগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেনের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ ও ২৫জন নাবিককে কৃষ্ণসাগরে আটক করে। রাশিয়া অভিযোগ করেছে, ওই জাহাজগুলো তাদের জলসীমা অতিক্রম করায় আটক করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোন বৈঠক করবেন না; যদি না রাশিয়া ইউক্রেনের জাহাজ ও নাবিকদের ফিরিয়ে দেয়। সিদ্ধান্তটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনের কংগ্রেসে রাশিয়ায় ট্রাম্পের আবাসন ব্যবসা নিয়ে মিথ্যা বলার কথা স্বীকার করার বিষয়টি জানার পর নেয়া হলো। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে কংগ্রেসের রুদ্ধদ্বার তদন্তে কোহেন মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, মস্কো এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে বৈঠক বাতিলের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, যদি তাই হয় তবে সম্মেলনের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট অতিরিক্ত কিছু সময় পাবেন তার প্রয়োজনীয় কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার জন্য। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল সঙ্কট সৃষ্টির জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি তিনি তুলবেন। মেরকেলের বিমানে ত্রুটি দেখা দেয়ায় সম্মেলনের উদ্বোধনীতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। সম্প্রতি ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা তার রয়েছে। তিনি আরও দুইশ’ ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্যদানকালে ট্রাম্প বলেন, যদিও চীন এখনও একটি চুক্তি করতে উৎসুক। আমি জানি না আমি সেটি করতে চাই কি না। আমরা এখন আমাদের পছন্দসই চুক্তি করতে চাই। ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেন, আমি মনে করি সবচেয়ে সম্ভাব্য দৃশ্যকল্প হলো যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ট্রাম্পকে যথেষ্ট পরিমাণে ছাড় দেবেন না। তাই জি-২০ সম্মেলন থেকে কিছুই আসবে না। খাশোগি হত্যা নিয়ে সৌদি আরবের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্ষোভ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কেননা দুই অক্টোবর ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে তাকে হত্যা করা হয়। সেই ক্ষোভ এখনও অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার কানাডা ১৭ সৌদি নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যারা খাশোগি হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাই এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জানিয়েছেন, যুবরাজ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক হলে তিনি তার দিক থেকে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দেবেন। জি-২০ হলো গ্রুপ অব টোয়েন্টি। যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে শিল্পোন্নত ১৯ দেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা একজোট হয়েছেন। দেশগুলো হচ্ছে-আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র। সম্মেলনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, দুইদিনের সম্মেলনটি শুক্রবার উদ্বোধন হয়েছে। এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ন্যায্য ও টেকসই উন্নয়ন। গত বছর জার্মানির হামবুর্গ শহরে বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায় প্রতিবাদকারীরা। পরে তা সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠে। দক্ষিণ আমেরিকায় জি-২০ সম্মেলন এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেজন্য ২০ হাজারেরও বেশি পুলিশকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে। সম্মেলনের সময়টি আর্জেন্টিনার নেতার জন্য খারাপ সময়। কেননা তিনি যে বাজারমুখী অর্থনীতির কথা বলে ক্ষমতায় আসীন হন তা বাস্তবায়নে সক্ষম হননি। এই সম্মেলন তাই তার জন্য সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাকরি ২০১৫ সালে বাণিজ্যবান্ধব সংস্কারের অঙ্গীকার করে নির্বাচিত হন। মুদ্রাস্ফীতির ব্যাপকতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, পেসোর দর পতন ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অযৌক্তিকভাবে ঋণ নেয়ায় দেশটিকে গভীর সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে।
×