ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মুম্বাই হামলার ১০ম বার্ষিকীতে নিহতদের শ্রদ্ধায় স্মরণ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৭ নভেম্বর ২০১৮

মুম্বাই হামলার ১০ম বার্ষিকীতে নিহতদের শ্রদ্ধায় স্মরণ

ভারত সোমবার মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার ১০ম বার্ষিকী পালন করেছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের হামলায় বেশ কয়েকজন নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারায় এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ব্যাপক বন্দুকযুদ্ধ হয়। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। -খবর এএফপির দিনটি ছিল ২০০৮ সালের ২৬ নবেম্বর বুধবার একে-৪৭ রাইফেল ও গ্রেনেড নিয়ে ১০ ইসলামী চরমপন্থী ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে তিনদিন ধরে হামলা ও নৈরাজ্য চালায়। এতে ১৬৬ জন নিহত ও আরও কয়েক শ’ আহত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছর আগের ওই হামলায় জড়িতদের ধরতে নতুন করে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এবং এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করতে সহায়তা করার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হামলাকারীরা পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গীগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি)’র সদস্য। এদিকে মুম্বাইয়ের নানা আয়োজনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই হামলাকে ভয়াবহ’ অভিহিত করে বলেন, ‘মুম্বাই হামলার ঘটনায় আমাদের যেসব পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সাহসিকতার সঙ্গে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’ ওই ঘটনার সময় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেল সরাসরি সংবাদ পরিবেশন করে। রক্তাক্ত ঘটনাটি ২৬/১১ হিসেবে পরিচিত। সন্ত্রাসী হামলাটিকে নিউইয়র্কের ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইনটাওয়ার হামলার ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হয়। মুম্বাইয়ের বেশ কয়েকটি স্থাপনাকে লক্ষ্য করে ওই সমন্বিত হামলা চালানো হয়। প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত নগরীটির একটি বিলাসবহুল হোটেল, প্রধান রেলওয়ে স্টেশন, বিদেশীদের কাছে জনপ্রিয় একটি রেস্তোরাঁ ও ইহুদীদের একটি কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়। মুম্বাই পুলিশ এই ঘটনায় জঙ্গীদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিহত তাদের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে। তাদের প্রিয়জন ও আত্মীয়রা নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্থানীয়রা ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। এখানে সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রায় ৬০ জন নিহত ও অন্তত আরও এক শ’ লোক আহত হয়। তাজমহল প্যালেস ও টাওয়ার হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৩১ জনের স্মরণে বিশেষ সেবা দেয়া হয়। ৬০ ঘণ্টার ওই হামলার ঘটনায় চার হামলাকারী হোটেলের অতিথি ও স্টাফদের গুলি করে হত্যা করে ও বিস্ফোরণ ঘটায় এবং জনপ্রিয় ভবনটির একটি অংশে আগুন ধরিয়ে দেয়। হোটেলে অবস্থানরত জঙ্গীদের সঙ্গে ভারতীয় কমান্ডো বাহিনীর ব্যাপক বন্দুকযুদ্ধে আশপাশের এলাকা যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। আটকা পড়ে অতিথিরা জানালার সঙ্গে বিছানার চাদর বেঁধে পালাতে চেষ্টা করে। টিভিতে সরাসরি এই ঘটনা সম্প্রচার করা হয়। ২৯ নবেম্বর সকালে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা হোটেলটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। ৪২ ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি, বিস্ফোরণ ও জিম্মি মুক্তির অভিযানে ওবেরয় ও ত্রিদেন্ত হোটেলে ৩০ জনের বেশি লোক নিহত হয়। ইহুদী সংস্কৃতি ও ধর্মীয় কেন্দ্র নারিমান হাউজে ইহুদী রাব্বি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ ছয় জিম্মিকে হত্যা করা হয়। বর্তমান রাব্বি ২৬/১১ হামলায় সকল নিহতের স্মরণে ওই ইহুদী কেন্দ্রে একটি নতুন স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচন করেন। এই হামলার ঘটনায় একমাত্র জীবিত হামলাকারী আজমল আমীর কাসাবকে রেলওয়ে স্টেশন থেকে আটক করা হয়। হত্যা ও ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর ২০১২ সালে ভারত তার মৃত্যুদ-াদেশ কার্যকর করে। এলইটি (লস্কর-ই-তৈয়বা) কাসাবকে ‘বীর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এটা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বৈরিতাকে আরও উস্কে দেয়। ১৯৪৭ সালে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা চলে আসছে। এই ঘটনায় এলইটি নেতা হাফিজ সাঈদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ভারতের রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তারা পাকিস্তানের তীব্র নিন্দা জানায়। জাতিসংঘ সাঈদকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করলেও পাকিস্তান ওই নেতাকে গ্রেফতার করেনি। ওই ঘটনায় ছয় মার্কিন নাগরিক নিহত হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের ধরতে পারলে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দেয়। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই সাঈদের জন্য ১ কোটি মার্কিন ডলার ও জঙ্গী গোষ্ঠীটির অপর জ্যেষ্ঠ নেতা হাফিজ আব্দুল রহমান মাক্কির জন্য ২০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
×