স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সুযোগ যেহেতু মিলেছে, সেই সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করতে চায় বাংলাদেশ। জুলাইয়ে যে নিজ দেশে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তার পাল্টা জবাব এবার দেশের মাটিতে দিতে চায় সাকিববাহিনী। এ জন্য ৩০ নবেম্বর শুরু হতে যাওয়া মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারালেই হলো।
চট্টগ্রাম টেস্টে ৬৪ রানে জিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে জিতলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় হবে। হোয়াইটওয়াশ হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নয় বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট জিতে এখন বাংলাদেশের সামনে সিরিজ জয়ের হাতছানিও দিচ্ছে। বাংলাদেশের সামনে সিরিজ হারের আর কোন অপশনই নেই। যদি দ্বিতীয় টেস্টে হারে বাংলাদেশ তাহলে সিরিজ ১-১ ড্র হবে। আর টেস্ট ড্র হলে সিরিজ ১-০ ব্যবধানে বাংলাদেশই জিতবে। কিন্তু বাংলাদেশ অন্য কোন হিসেবের মধ্যেই যেতে রাজি নয়, দ্বিতীয় টেস্ট জিততে চায়। জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করতে চায়।
চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে মিরপুর টেস্ট জেতার আত্মবিশ্বাস কুড়িয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট অধিনায়ক সাকিবই যেমন বলেছেন, ‘স্বাভাবিক, আত্মবিশ্বাস তো থাকবেই। হতাশ হয়ে ঢাকায় যাওয়ার উপায় নেই। চাইলেও পারব না (হাসি)। পুরো দলই ভাল খেলেছে (চট্টগ্রামে)। গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হয় কি, ম্যাচ জয়ের পর দলের আত্মবিশ্বাস অন্যরকম থাকে। আশাকরি ওটা ধরে রাখতে পারব।’ সেই আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা গেলেই হলো। তাহলেই জয় আসবে।
তবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। তা সবারই জানা। কখনও স্পিনবান্ধব হয়ে ওঠে। কখনও ব্যাটিংনির্ভর হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে দেখা গেছে ব্যাটিং করাই ছিল কঠিন। আর সর্বশেষ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্টে দেখা গেছে ব্যাটিং করা ছিল অপেক্ষাকৃত সহজই। এ উইকেটে তাই সাবধানতা অবলম্বন করেই খেলতে হবে।
অবশ্য উইকেট যে রকমই হোক, স্পিন শেষ পর্যন্ত ধরবেই। আর সেটিই বাংলাদেশের ভরসা। এরপরও সাকিব উইকেট নিয়ে বলতে গিয়ে জানান, ‘দেখুন, আমাদের হোমে যে ধরনের উইকেট হওয়া উচিত কিংবা দরকার, সেই ধরনের উইকেটই তারা (কিউরেটর) বানানোর চেষ্টা করেছে। উইকেট যেমনই হোক, আমরা যদি ভাল জায়গায় বল না করি, তাহলে কিছুই কাজে আসে না। এগুলো আসলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।’ সঙ্গে মিরপুরের উইকেট নিয়ে জানান, ‘উইকেট তৈরি করবেন কিউরেটর। আমরা কি প্রত্যাশা করি তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। এগুলো নিয়ে বেশি কথাও বলা উচিত না। সেটা আমাদের খুবই ভেতরের কথা, আর তা প্রাইভেট থাকলে আমি খুশি হব।’ যতই প্রাইভেট থাকুক, স্পিনবান্ধব উইকেটই যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঘায়েল করার জন্য কামনা তা সবারই জানা।
চট্টগ্রাম টেস্টে চার স্পেশালিস্ট স্পিনার (সাকিব, তাইজুল, নাঈম ও মিরাজ) নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। মিরপুরেও নিশ্চয়ই স্পিনার মজবুত করেই নামবে দল। স্পিনারদের নিয়ে সাকিব জানান, ‘আমাদের যে কয়জন স্পিনার আছে, সবাই খুব মানসম্পন্ন স্পিনার। বিশেষ করে যদি উইকেটে একটু সহায়তা থাকে। উইকেটে একদম সাহায্য না থাকলে আমাদের বল তেমন কার্যকর মনে হবে না। একটু যদি উইকেটে সাহায্য পাই তাহলে আমরা অনেক ভাল বোলার। তবে আমাদের একটা জিনিসে উন্নতি করা উচিত, সেটা হলো আমাদের গেইম সেন্সটা ভাল থাকা উচিত। কোন্ পরিস্থিতিতেইক করতে হবে সেটা। হয়তো হতে পারে একজন খুব আক্রমণাত্মক বোলার। ওইদিন হয়তো তার উইকেট নাও আসতে পারে। হয়তো অন্য সাইড থেকে আরেকজন উইকেট পাচ্ছে। যে কারণে অন্যপ্রান্ত থেকে আরেকজন রান না দিয়ে বল করে যাবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘দলের জন্য করা, বোলিং পার্টনারের জন্য করা, এই সেন্সটা যদি আমরা একটু ভালভাবে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে মনে করি বোলিং আক্রমণে স্পিনাররা আরও ভাল করতে পারবে। আমরা যারা আছি স্পিনাররা, সবাই খুব আক্রমণাত্মক বোলার। আমাদের জন্য রক্ষণাত্মক বল করাটাও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। আমরা সবসময় এ্যাটাকিং অপশনেই যাই। আমাদের বুঝতে হবে, জানতে হবে কখন দুই-তিনটা ওভার রান না দিয়ে বল করে যাব, একটা সাইডে যেন আরেকজন এ্যাটাক করতে পারে। এই জিনিসগুলো জানাটাই আমাদের জন্য একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টেও ভাল করার আশাবাদী প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তিনি বলেন, ‘ঢাকার (মিরপুরের) উইকেট কিন্তু ডিফারেন্ট আছে। ঢাকার উইকেট বোঝা মুশকিল আছে। সেই হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেহেতু আমাদের চাইতে অনেক অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং ওদের ক্যাপাবিলিটি আছে যে কোন জায়গায় জেতা। যেহেতু আমরা প্রথম ম্যাচট জিতে গিয়েছি, তো হাল্কা করে চিন্তা করার সুযোগ নেই। তো সেই হিসেবে মনে করি আমরা যদি পরবর্তীতে সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারি, ইনশাল্লাহ সিরিজ জয়ে আমি পুরোপুরি আশাবাদী।’ এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার আশা পূরণ হলেই হলো।