ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তবে তাদের তথ্য মোতাবেক সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে

নির্বাচনের আগে ভারতে বন্দী কোন জঙ্গী ফেরত আনা হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

 নির্বাচনের আগে ভারতে বন্দী কোন জঙ্গী ফেরত আনা হচ্ছে না

গাফফার খান চৌধুরী ॥ নির্বাচনের আগে ভারতে গ্রেফতার ও কারাবন্দী কোন জঙ্গী-সন্ত্রাসীকে দেশে ফেরত আনা হচ্ছে না। তবে তাদের দেয়া তথ্য আনা হচ্ছে। সেই তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তথ্য যাচাই-বাছাই মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। জঙ্গী সন্ত্রাসীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক কোন পরিকল্পনা আছে কিনা তা জানতে তাদের আরও গভীরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য তাৎক্ষণিক বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করারও অনুরোধ করা হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ-ভারত নিরাপত্তা জোরদার ও দুই দেশের ভেতরে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পারস্পরিক সহযোগিতার অনুরোধ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ’১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে ময়মনসিংহে নেয়ার পথে ত্রিশাল সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা করে জেএমবি জঙ্গী বোমারু মিজান (৩৯), শূরা সদস্য দুর্ধর্ষ রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানিকে (৩৮) ছিনিয়ে নেয়। ওইদিনই মির্জাপুরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে পালানোর সময় রাকিবুল নিহত হয়। বোমারু মিজান ও সানিকে ধরিয়ে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রত্যেকের জন্য ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। কিন্তু তাদের হদিস মিলছিল না। ’১৪ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানায় বিস্ফোরণে দুই জঙ্গী শাকিল আহাম্মদ ওরফে শাকিল গাজী ও সোবাহান ম-ল ওরফে সোবাহান শেখ নিহত হন। নিহত দুই জঙ্গীর স্ত্রী রাজিয়া বিবি ও আলিমা বিবিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলো। দুই নারীর দেয়া তথ্য এবং তদন্তে বাংলাদেশী জেএমবি জঙ্গী কাওসার ওরফে বোমারু মিজানের বিষয়টি উঠে আসে। খাগড়াগড়ে আস্তানা গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান কারিগর বোমারু মিজান বলে তথ্য দেয় দুই নারী জঙ্গী। তাদের দেয়া তথ্যে ভারতে জেএমবির আস্তানা গড়ে তোলা এবং আস্তানায় তৈরি বোমা বাংলাদেশে পাঠানোর সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াতের অর্থায়নের বিষয়টি উঠে আসে। জামায়াত ভারতের একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে জেএমবিকে অর্থায়ন ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছিল। দীর্ঘ দিন আত্মগোপনে থাকার পর গত ৬ আগস্ট ভারতের বেঙ্গালুরুর মালাপ্পুরাম জেলার কোতাক্কালের একটি আস্তানা থেকে ভারতের মোস্টওয়ান্টেড ও ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষিত দুর্ধর্ষ জঙ্গী বোমারু মিজানকে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ভারতীয় তদন্ত সংস্থার বরাত দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বোমারু মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে জঙ্গীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থাকার তথ্য মিলেছে। এমনকি বোমারু মিজান ভারত ও বাংলাদেশের বহু জঙ্গীকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষিতদের অনেকেই বাংলাদেশ ও ভারতে গোপন কর্মকা- চালাচ্ছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপনে তৎপর জঙ্গীরা বড় ধরনের ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের কিলিং মিশনের তথ্য পাওয়া গেছে। জঙ্গীদের বড় টার্গেট রোহিঙ্গারা। তাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তারা আলোচনায় আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে। দলে ভিড়িয়ে রোহিঙ্গাদের দিয়ে আত্মঘাতী স্কোয়াড গঠন করে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র রয়েছে জঙ্গীদের। দেশের জঙ্গীদের সঙ্গে পাকিস্তানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জঙ্গী আব্দুল করিম টুন্ডার যোগাযোগ আছে। টুন্ডার মূল কাজই হচ্ছে বাংলাদেশী জঙ্গীদের আত্মঘাতী প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন দেশে পাঠানো। এজন্য নির্বাচনের আগে ১৫ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত বয়সী নারী-পুরুষের বাংলাদেশে যাতায়াত একপ্রকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, ভারতে আটক বোমারু মিজান ও ভারতের তিহার জেলে বন্দী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশ নেয়া দুই সহোদর জঙ্গী মুরসালিন ও মুত্তাকিনকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছিল। সম্প্রতি সেই আলোচনা থেমে গেছে। নির্বাচনের আগে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কায় ভারতে আটক কোন বাংলাদেশী জঙ্গীকে দেশে ফেরত আনা হচ্ছে না। তবে তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নানা তথ্য আনা হচ্ছে। এদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তের নিরাপত্তা দেখতে নিজেই ছুটে যাচ্ছেন দুর্গম সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে। সূত্র মতে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও তথ্য আদানপ্রদান হচ্ছে। সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের দেশের সীমান্তে নিরাপত্তা আরও জোরদারের অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে কোন ধরনের অবৈধ অস্ত্রগোলাবারুদ ও জঙ্গী-সন্ত্রাসী ঢুকতে না পারে। সেদেশে আত্মগোপনে থাকা বাংলাদেশী জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের হস্তান্তরসহ তাদের গ্রেফতারের অনুরোধ করা হয়েছে। বিশেষ করে আটক জঙ্গীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক বিশেষ কোন চক্রান্ত আছে কিনা তা জানতে তাদের গভীরভাবে জিজ্ঞাসাবাদের অনুরোধ করা হয়েছে ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে। জঙ্গী সন্ত্রাসীরা কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে তা বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করারও কথাও বলা হয়েছে।
×