ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহাজোটের আসন বণ্টন প্রায় চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

 মহাজোটের আসন বণ্টন প্রায় চূড়ান্ত

রাজন ভট্টাচার্য ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটের শরিক দলের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে। শরিক দলের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মিত্রদের জন্য এবার সর্বোচ্চ ৭৫টি আসন ছাড় দেয়া হতে পারে। শরিক দলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কাছে তাদের প্রত্যাশা ১৭০টির বেশি আসন। তবে এবার মহাজোট গঠন করায় আসন বণ্টন নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আরও জোট ও রাজনৈতিক দল। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ইতোমধ্যে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। শরিক দলের চাওয়া-পাওয়া গেছে ক্ষমতাসীন দলের কানে। আসনভিত্তিক নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে শরিকদের পক্ষ থেকে। জানা গেছে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৭০টি আসন চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রথমে ৩৫টি আসনে ছাড় দিতে সম্মত ছিল। দ্বিতীয় দফা আলোচনায় সর্বোচ্চ ৪০টি আসন ছাড় দিতে সম্মত। যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ২৩আসন চাওয়া হলেও আওয়ামী লীগ সাতটি আসনে ছাড় দিতে রাজি। ইসলামী ঐক্যজোট ১০আসন চাইলেও আওয়ামী লীগ দিতে চায় দুটি। তরিকত ফেডারেশন, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্স, জাতীয় পার্টি জেপির ১০টি করে আসনের চাহিদা থাকলেও আওয়ামী লীগ দুটি করে দিতে সম্মত। এরমধ্যে নাজমুল হুদার জোটকে একটি আসন ছাড় দেয়ার কথা জানা গেছে। ঢাকা-১৭ আসনে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদার মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির দাবি ২০টির বেশি আসন হলেও দুই দলকে আটটি করে ১৬টি আসন ছাড় দিতে সম্মত আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন ছাড়া অন্য দলগুলোর কেউ এবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। বর্তমানে সংরক্ষিত মিলিয়ে ১৪ দলের শরিকদের আসন সংখ্যা ১৭। মহাজোট গঠনের মধ্য দিয়ে এবারের নির্বাচনে জোটের পরিধি বাড়ায় আসন কমার কথা জানিয়েছেন সব দলের নেতারাই। বিষয়টি মেনেও নিয়েছেন অনেকেই। আওয়ামী লীগের অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। রবিবারের মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হলে তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৭০টি আসনের বাইরে যোগ্য প্রার্থী বিবেচনায় আর পাঁচটি আসন ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এই পাঁচটি আসন মিত্রদের মধ্যে যে কোন দলের যোগ্য প্রার্থীর কপালে জুটতে পারে। এক্ষেত্রে যুক্তফ্রন্ট ও জাপার আসন বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগ নিয়ে জটিলতা হচ্ছে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দর কষাকষি হলেও কোন ধরনের টানাপোড়েন নেই। এখানে বানরের পিঠা ভাগ করে তো লাভ নেই। সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। এখানে কে কত সিটে জিততে পারবে, এটাই হলো আমাদের প্রাইম কনসিডারেশন। যারা ইলেক্টেবল, উইনেবল তাদেরই আমরা সিলেক্ট করব। জোটের আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মৌখিকভাবে হয়েছে। যখন ঘোষণা হয়ে যাবে তখন তো আপনারা পেয়ে যাবেন। শরিকদের কত আসন দেয়া হতে পারে সে বিষয়ে আভাস চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি একটা অনুমান করতে পারি। আমি বার বার বলেছি প্রার্থীকে ইলেক্টেবল হতে হবে, উইনেবল হতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৬৫/৭০’র জায়গায় ২/৪টা বাড়তেও পারে। এদিকে জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, এরশাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য জিএম কাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের কাছে বিশ^স্ত ও আস্থার ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত তিনি; যাকে ক্ষমতাসীন দল মন্ত্রীও বানিয়েছিল। জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের পার্টি থেকে জি এম কাদের প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোট নেত্রীর সঙ্গে আসন বণ্টন ইস্যুতে কথা বলেছেন। আশা করি, আওয়ামী লীগ আমাদের প্রতি ন্যায় বিচার করবে। তাছাড়া তাদের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। এবার যোগ্য প্রার্থী আমাদের অনেক বেশি। তাই প্রত্যাশাও বেশি। বর্তমানে জাপার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ৩৪। সংরক্ষিত মিলিয়ে আসন সংখ্যা ৪০। ২৩ আসন চায় যুক্তফ্রন্ট ॥ মহাজোটের শরিক দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগের কাছে ২৩টি আসন চেয়েছেন যুক্তফ্রন্টের আহ্বায়ক সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডাঃ এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তবে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাতটি আসনের ব্যাপারে তাকে প্রাথমিকভাবে আশ^স্ত করা হয়েছে। এই সাতটি আসনের মধ্যে ছয়টিতে বিকল্পধারা বাংলাদেশের ‘হেভিওয়েট’ ছয় প্রার্থী লড়বেন। বাকি আসনটিতে লড়বেন যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি। যুক্তফ্রন্টের কয়েক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩টি আসন না ছাড়লেও যুক্তফ্রন্ট চেষ্টা করবে অন্তত ১০ থেকে ১২টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করার। যুক্তফ্রন্ট নেতারা মনে করছেন, জোট হিসেবে ছোট হলেও যুক্তফ্রন্টে কমপক্ষে ১৫ সম্ভাব্য প্রার্থী আছেন যারা অতীতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী অথবা সংসদ সদস্য ছিলেন। জানা গেছে, এই ২৩ জনের মধ্য থেকে অন্তত সাত জনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সবুজ সংকেত মিলেছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের বি. চৌধুরীকে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তফ্রন্ট যেন দু’জন নেতার নাম পাঠায়। এরই মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব) আব্দুল মান্নান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি. চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। সাতটি আসনের মধ্যে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব) মান্নান লড়বেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহী বি. চৌধুরী মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে, শমসের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে, গোলাম সরোয়ার মিলন মানিকগঞ্জ-২ আসনে, এস এম গোলাম রেজা সাতক্ষীরা-৪ আসনে ও এম এম শাহীন মৌলভীবাজার-২ আসনে এবং বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি লড়বেন নীলফামারী-১ আসনে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, স্যার (বি. চৌধুরী) প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি তালিকা দিয়ে এসেছেন। সেখানে ২৩ জনের নাম আছে। এর ভেতর থেকে ক’জনকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে, সেটা এখনও ফয়সালা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুই জনের নাম পাঠাতে বলেছিলেন। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব) মান্নান ও মুখপাত্র মাহী বি. চৌধুরীকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
×