ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট মামলার আসামি, মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও মনোনয়ন চান

বড় দলে আমলা, সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ প্রার্থীর ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৪ নভেম্বর ২০১৮

 বড় দলে আমলা, সাবেক সেনা  কর্মকর্তাসহ প্রার্থীর ছড়াছড়ি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আলোচিত প্রার্থীর অভাব নেই। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট ও ঐক্যফ্রন্টসহ সব দলেই রাজনীতিবিদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা প্রার্থী হয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন নিশ্চিত কিনা তা চূড়ান্ত না হলেও তাদের নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা আছে। আমলা, ক্রীড়াজগৎ, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র এবং নাট্যাঙ্গনের তারকারাও এবার অনেক বেশি তৎপর ভোটের মাঠে। ক্রিকেটের সুপার স্টার মাশরাফি বিন মুর্তজা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়ে সৃষ্টি করেছেন সবচেয়ে বড় চমক। সব দল থেকে ব্যবসায়ী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, সাবেক ছাত্রনেতাসহ চিকিৎসক নেতারাও মনোনয়ন ফরম কিনে আলোচনায় এনেছেন নিজেদের নাম। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিও বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও সক্রির ভোটের রাজনীতিতে। একাধিক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে সাকা চৌধুরী পরিবারের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগে বেশকিছু রেকর্ডও সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের ইতিহাসে এই প্রথম নৌকায় চড়তে রেকর্ড সংখ্যক ৪ হাজার ২৩ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। শুধু মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেই দলের তহবিলে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকা জমা পড়েছে। এতে ভোটের আগেই মাঠ গরম করতে সফল হয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। তিন শ’ আসনের বিপরীতে গড়ে ১৩ জন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী অতীতে কখনও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মাত্র সাত জন একক প্রার্থী হতে পেরেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকেও এবার মনোনয়নপত্র বিক্রির রেকর্ড হয়েছে। চার হাজার ৫৮০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে দলটি। এছাড়া জাতীয় পার্টি দুই হাজার ৮৬৫টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। সব দল মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে এবারের নির্বাচন সামনে রেখে। আলোচনায় শীর্ষে মাশরাফি ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় চড়তে জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। তিনি নড়াইল-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এই আসনের বর্তমান এমপি ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির হাফিজুর রহমান। অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী লাইন ধরে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও মাশরাফির হাতে মনোনয়ন ফরম তুলে দেন দলটির খোদ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় বড় বড় নেতা। এই আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর। ইতোমধ্যে এই আসন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগে নানা পেশার প্রার্থীরা আলোচনায় ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য একঝাঁক তারকা। তাদের মধ্যে রয়েছেন খেলোয়াড়, রুপালি পর্দার তারকা যেমন আছেন তেমনি চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সাবেক আমলা, সামরিক কর্মকর্তাসহ খ্যাতিমান ব্যক্তিরা। অন্তত দুই ডজন তারকা এবার নৌকায় চড়তে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দুটি আসনে নির্বাচন করবেন। একটি টুঙ্গিপাড়া, আরেকটি পীরগঞ্জ আসনে। দলের বাকি সবাই একটি আসনে নির্বাচন করবেন। আমি এবার নোয়াখালী-৫ আসনে নির্বাচন করব। মাশরাফি নড়াইল-২ আসনেই নির্বাচন করবেন। ওখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির ছিল। তিনি এ আসনটি জোটের জন্য সেক্রিফাইস করেছেন। জানা গেছে, রুপালি পর্দার তারকাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গাজীপুর-৫, খ্যাতনামা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী ঢাকা-১৭, অভিনেত্রী শমী কায়সার ফেনী-৩, রোকেয়া প্রাচী ফেনী-৩, নায়ক শাকিল খান বাগেরহাট-৩ ও অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি ময়মনসিংহ-৩। এছাড়া কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম মানিকগঞ্জ-২, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। খ্যাতিমান ব্যবসায়ীর অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান ঢাকা-১ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। নিটল-নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সেলিমা আহমাদ কুমিল্লা-২ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান, তাবারুকুল তোসাদ্দেক খান টিটু, আমিনুল হক শামীম, ব্যবসায়ী নেতা এস এ মান্নান কচি, আতাউর রহমান খান আখির, আসলাম সানিসহ বড় বড় ব্যবসায়ী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা মনজুর আলম এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করে আলোচিত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন পেশায় নিজের অবদানের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেছেন এমন অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও খ্যাতিমান চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত কুমিল্লা-৭ আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন হবিগঞ্জ-৪ আসনে এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে নেমেছেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩ এবং দেশের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মুন্সীগঞ্জ-২, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর, দুদকের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল ঢাকা-১৬ এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ নোয়াখালী-১ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব ডাঃ এমএ আজিজও ময়মনসিংহ চার আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। এই প্রেক্ষাপটে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কতটা আশাবাদী জানতে চাইলে আজিজ বলেন, প্রায় ১০ বছর চাকরি ছাড়ার পর থেকে আমি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সকলের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- লিফলেট, পোস্টারের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। ময়মনসিংহ সদরের মাটি-মানুষের সঙ্গে আমি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। সব মিলিয়ে আমি আশাবাদী দল থেকে মনোনয়ন পাব। তিনি বলেন, মহাজোটগতভাবে যদি নির্বাচন হয় তাহলে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করব। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। নীলফামারী-২ (সদর) আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও তিনি এই আসন থেকে লড়বেন। বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। জনপ্রিয় চলচ্চিত্রাভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী ২০০৮ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। এবার ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট-ভাসানটেক) আসন থেকে দলের প্রার্থিতা চেয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রাজধানীর গুলশানের এই বাসিন্দা ও ভোটার। এই আসনের বর্তমান এমপি বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ। একই আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নাজমুল হুদা ও জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। চলচ্চিত্রের খলনায়ক ও প্রযোজক মনোয়ার হোসেন ডিপজল ঢাকা-১৪ (মিরপুর-শাহআলী-দারুসসালাম) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন বিএনপির সাবেক এই ওয়ার্ড কমিশনার। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের আসলামুল হক আসলাম। এছাড়া নির্মাতা মাসুদ পথিক নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ফরম জমা দিয়েছেন। এক আসনেই ৫২ মনোনয়ন প্রত্যাশী ॥ একটি আসনে ৫২ জন মনোনয়ন ফরম কেনার ঘটনা রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগে। আসনটি হলো বরিশাল বিভাগের বরগুনা-১। এ আসনের বর্তমান এমপি হচ্ছেন এ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। আসনটির সব পর্যায়ের প্রায় সব বড় নেতাই নৌকা পেতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আর মাত্র একটি আসনেই মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগের তহবিলে জমা পড়েছে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগের দফতর সেল সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৪০টি। রংপুরের কুড়িগ্রাম-৪ আসনে ৩০টি। নেত্রকোনা-১ ও ঝিনাইদহ-২ আসনে ২৬টি করে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে মোট ২০টি। এছাড়া মোট সাতটি আসনে একজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী ফরম কিনেছেন। এগুলো হলো- ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, গোপালগঞ্জ-২ আসনে সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বরিশাল-১ আসনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, বাগেরহাট-১ আসনে শেখ হেলাল উদ্দিন, খুলনা-২ আসনে শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। ঢাকা বিভাগের মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে হুইপ শাহাবুদ্দিন এবং নোয়াখালী-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মনোনয়ন দৌড়ে আলোচিত জেনারেল মাসুদ ॥ ২০০৭ সালে এক-এগারো পটপরিবর্তনের সময় আলোচিত সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ফেনী-৩ আসনে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর পর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। জাপা প্রধান এরশাদ জেনারেল মাসুদকে সামরিক উপদেষ্টার পদ দেন। তারপর তাকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যও করেন। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর নবম ডিভিশনের জিওসির দায়িত্বে থাকা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এক-এগারোর পরিবর্তনের পর গুরুতর অপরাধ দমন-সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন। এই কমিটির অধীনেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। ফেনী-৩ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলটির আরেক আলোচিত-সমালোচিত সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারীও। এদিকে নৌকার হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদাও। জাপায় আলোচিত যারা ॥ জাতীয় পার্টি থেকে বেশ কয়েক আলোচিত ব্যক্তি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বড় নেতাদের পাশাপাশি এর মধ্যে হিরো আলম অন্যতম। এছাড়া চিত্রনায়ক সোহেল রানা, ঢাকা-১ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সালমা ইসলাম। বিএনপিতেও আলোচিতদের অভাব নেই ॥ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক, জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী মনির খান, বেবী নাজনীন, কনকচাঁপা, চিত্রনায়ক হেলাল খান ও চিত্রনায়িকা শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা সহ অনেকেই এবার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন তারা। গায়ক আসিফ আকবর এক সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য থাকলেও পরে ‘অভিমানে’ পদত্যাগ করেন। তারকা ফুটবলার আমিনুল হক বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক। তিনি ঢাকা-১৪ ও ঢাকা-১৬ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। দুটি আসনের যে কোন একটিতে দলের মনোনয়ন চান তারকা এই গোলরক্ষক। সঙ্গীতশিল্পী মনির খান বিএনপির সংস্কৃতিবিষয়ক সহসম্পাদক। ঝিনাইদহ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি। মনির খান আশাবাদী, জোটের মনোনয়ন তিনিই পাবেন। মনির খান বলেন, সঙ্গীত মানুষের জন্য, রাজনীতিও মানুষের জন্য। সঙ্গীতের জন্য মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন। তাই তিনি চান, জন্মস্থানের সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করতে। তবে এর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার। জাতীয়তাবাদী আদর্শের কারণে তিনি বিএনপিতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মনোনয়ন পেলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। সিলেট-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চান চিত্রনায়ক হেলাল খান। তিনি বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি এ আসনে অতীতে কখনও জয়ী হয়নি। সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। চিত্রনায়িকা শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন ফরিদপুর-৪ আসন থেকে। পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার। পাশাপাশি তার ছেলে নওশাদ জমিরও একই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। নাটোর-১ আসনে ২০০৮ সালে নির্বাচন করতে পারেননি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান। তখন ভোটে দাঁড়ান তার স্ত্রী কামরুন্নাহার শিরিন। এবার তিনি দলের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। নাটোর-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। ‘বিকল্প প্রার্থী’ হিসেবে রাখা হয়েছে সহধর্মিণী সাবিনা ইয়াসমিন ছবিকে। সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হতে চান ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তবে ২০০৮ সালের মতোই তিনি জটিলতায় পড়লে স্ত্রী রোমানা ইকবাল মাহমুদ প্রার্থী হবেন সেখানে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহও করেছেন তিনি। ময়মনসিংহ-৪ ও ৫ আসনে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ কে এম মোশাররফ হোসেন। ময়মনসিংহ-৫ আসনে তার ছোট ভাই জাকির হোসেন বাবলুও ফরম কিনেছেন। টাঙ্গাইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন একুশে আগস্ট মামলার মৃত্যুদ- পাওয়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু। একই আসনে ফরম তুলেছেন তার দুই ভাই সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও শামসুল আলম তোফা। টুকু ও তোফা টাঙ্গাইল-১ আসন থেকেও ফরম নিয়েছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী সদর থেকে নির্বাচন করতে চান। তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা ঢাকা-৯ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন। যশোর-৩ আসনের বিএনপির প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। নোয়াখালী-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তবে সমস্যা হলে মেয়ে তামান্না ফারুককেও তৈরি রাখা হয়েছে। নোয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু নিজের পাশপাশি তার সহধর্মিণী শামীমা বরকত লাকীর নামেও ফরম কিনেছেন। মানিকগঞ্জ-১ আসনে ফরম নিয়েছেন বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু ও খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু। মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন কিনেছেন বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান হারুন আর রশীদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খান রিতা। মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-িত হয়ে কারাগারে মারা যাওয়া জয়পুরহাট-১ আসনে ফরম নিয়েছেন ছেলে ফয়সল আলীম। নেত্রকোনা-৪ আসনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আসনে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন তার স্ত্রী তাহমিনা জামান এবং ছেলে লাবিব ইবনে জামান। চাঁদপুর-১ আসনে লড়তে চান সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। কোন কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে ওই আসনে মনোনয়ন চাইবেন তার স্ত্রী নাজমুন্নাহার বেবী। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসিতে ঝোলা বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রাম-২ আসনেও ফরম তুলেছেন তার দুই স্বজন। একজন হলেন স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী এবং অন্যজন ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। সিলেট-২ আসনে বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীর আসনে নির্বাচনে লড়বেন তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। একই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ইলিয়াসপুত্র আবরার ইলিয়াস। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ মারা যাওয়ায় গাজীপুর-৪ আসনে তার ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নানকে প্রার্থী করা হতে পারে। ফরিদপুর-২ আসনে কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ রিংকু নির্বাচন করতে পারেন। ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সম্ভাব্য প্রার্থী। সতর্কতা হিসেবে এই আসন থেকে তার মেয়ে অপর্ণা রায় ও পুত্রবধূ নিপুণ রায় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। ঢাকা-৫ আসনে বিএনপির সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক দৌড় সালাহউদ্দিন আহম্মেদ লড়তে চান। তার ছেলে তানভীর আহম্মেদ রবিন ফরম নিয়েছেন ঢাকা-৪ আসনের জন্য। ঢাকা-৬ আসন থেকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। তবে মামলার সাজা-সংক্রান্ত এবং অসুস্থতার কারণে তিনি মনোনয়ন নেননি। নিয়েছেন ছেলে ইশরাক হোসেন। ঢাকা-৭ আসনে বিএনপির প্রয়াত নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। নতুন রাজনৈতিক মোর্চা ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেও বেশ কয়েক আলোচিত প্রার্থী রয়েছেন। ১৪ দলীয় জোট ও বাম দলের পক্ষ থেকে আগের প্রার্থীরাই এবারও আলোচনায় আছেন।
×