ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগাম টমেটোয় রঙিন মাঠ

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২০ নভেম্বর ২০১৮

আগাম টমেটোয় রঙিন মাঠ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ টমেটোয় ভরেছে এখন বরেন্দ্র খ্যাত রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মাঠ। উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত শীতকালীন টমেটো উঠতে শুরু করেছে। নতুন টমেটোর কারবার শুরু হয়েছে উপজেলার সর্বত্র। সোমবার গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সবখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে টমেটোর কারবার। কেউ ক্ষেত থেকে টমেটো তুলছেন। কেউ রোদে শুকাচ্ছেন আবার কেউ প্যাকেটজাত করছেন। টমেটোর কারবার ঘিরে পুরো উপজেলায় শুরু হয়েছে বিশাল কর্মসংস্থান। এসব টমেটোর বেশিরভাগ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের বড় বড় মোকামে চলে যাচ্ছে। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের বেশিরভাগ টমেটো উৎপাদন হয় এই উপজেলাতেই। গোদাগাড়িতে এখন একদিকে টমেটো ক্ষেতের যতœ, অন্যদিকে বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। তবে গতবারের মতো শুরুতেই কাক্সিক্ষত দামে হোচট খাচ্ছেন চাষীরা। কৃষি বিভাগ জানায়, রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবার ৩ হাজার ২১১ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষাবাদ হয়েছে। গতবার চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ২৭৮ হেক্টর। এখনও চাষীরা নতুন করে টমেটো চারা রোপণ করছেন। তবে জেলার টমেটো খ্যাত বলে পরিচিত গোদাগাড়ি উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন মাঠে টমেটো উঠতে শুরু করেছে। রাজশাহীর অঞ্চলের তিনভাগ টমেটো চাষ হয় গোদাগাড়ির বিভিন্ন মাঠে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে শুধু গোদাগাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষাবাদ হয়েছে। গতবছর এ উপজেলায় টমেটোর আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে। জমিতে বঙ্গবীর, ভিএল ৬৪২, ইউএসএ-নসিব হাইব্রিড জাতের টমেটোসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির বীজের টমেটো চাষ হয়েছে এবার। সাধারণত এ উপজেলায় আগাম জাতের টমেটো চাষ হয়ে থাকে। তাই এখন চাষীরা ক্ষেত থেকে টমেটো সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা গোদাগাড়ির বিভিন্ন মাঠ থেকে টমেটো কিনছেন। মাঠেই পরিপক্ক কাঁচা টমেটো পাকানো ও প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। এরপর সেখান থেকে বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হচ্ছে। উপজেলার মাঠে মাঠে এখন তাই টমেটো কারবারে ব্যস্ত কৃষক। কৃষকরা জানান, প্রায় দুই দশক ধরে ধান, গমসহ অন্যান্য ফসলের সঙ্গে টমেটো চাষ করে আসছেন তারা। গতবছর টমেটো চাষ করে লাভবান হওয়ায় চলতি মৌসুমে টমেটোর চাষ বেড়েছে। কিন্তু বীজ খারাপ ও শীতের আবহাওয়া বিরাজ না করায় টমেটোর ফলন শুরুতে কম হচ্ছে। উপজেলার গোপালপুর, বসন্তপুর, সাজীপুর এলাকার টমেটো চাষী আকরাম আলী, মামুন শেখ, সাজাহান হোসেন ও ইব্রাহিম আলী জানান, বর্তমানে আধা পাকা প্রতি মণ (৪০ কেজি) টমেটো ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২ টাকা মণ দরে। উপজেলার পদ্মা নদীর ওপারে চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে এবারে ব্যাপক টমেটো চাষ হয়েছে। চরের চাষী রফিকুল ইসলাম এবার ১০ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মার ওপারে হওয়ায় পাইকাররা কমদামে টমেটো কিনছেন। তিনি প্রতিমণ টমেটো ৬শ’ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান। অথচ গতবার এই সময়ে দাম ছিল অনেক বেশি। কয়েকদিন পর থেকে ফলন বাড়বে বলে তিনি জানান। কিনি জানান প্রতি বিঘায় তার টমেটো চাষে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আরও ৪ হাজার টাকা খরচ হবে বলে এই টমেটো চাষী জানান তিনি। বসন্তপুরের কৃষক আফজাল হোসেন ১১ বছর ধরে টমেটোর চাষ করে আসছেন। প্রথম দিকে টমেটোর জমির পরিমাণ বেশি থাকলেও ভাল বীজ না পাওয়ার কারণে টমেটোর চাষ কমিয়ে এনেছেন। চলতি মৌসুমে তিনি একবিঘা জমিতে ভিএল-৬৪২ জাতের হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করেছেন। এবার ফলন ভাল বলে জানান তিনি। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৪ হাজার ২শ’ মেট্রিকটন টমেটো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার আশা এবার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত টমেটোর ন্যায্যমূল্য পাবে। এ কৃষিকর্মকর্তা আরও জানান, শীতকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষে তাপমাত্রা কম এবং কুয়াশা বেশি পড়লে টমেটোর উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
×