ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হেমন্তে ত্বকের যত্নে

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

হেমন্তে ত্বকের যত্নে

হেমন্ত ঋতু বরাবরই উপভোগ্য। নেই বৃষ্টির বিড়ম্বনা বা তীব্র শীতের কাঁপুনি। এ সময়ের ঝকঝকে রোদটাও যেন ছুঁয়ে দেখার মতো। তবে এ কথাও সত্য, হেমন্তে আবহাওয়া খুব শুষ্ক থাকে। ফলে ত্বকের টানটান ভাব ও রুক্ষতার শুরুটা এ ঋতু থেকেই। তাই এখন থেকেই নিতে হবে ত্বকের বিশেষ যত্ন, যাতে আসন্ন শীতে ত্বকের মসৃণতা থাকে অটুট পর্যাপ্ত পানি পানের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষত ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি পান। তাছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে দিনে বেশ কয়েকবার ঠান্ডা পানির ঝাপটায় মুখ ধুতে হবে। সম্ভব হলে মুখ ধোয়ার পর তোয়ালে দিয়ে না মুছে পানিটা মুখেই শুকিয়ে নিন। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে হেমন্তকাল এক কথায় আনন্দদায়ক। সকালের রোদেও কমলা আভা থাকে। আর প্রায় সবাইকেই সে রোদ গায়ে মেখেই পৌঁছতে হয় কর্মস্থলে। আবার এ সময় বাতাসে প্রচুর ধুলোবালি ওড়ে। ফলে সবধরনের ত্বকেই কালচেভাব ও মরাকোষ দেখা দেয়। ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ ও শুষ্ক। আমাদের মুখের ত্বক সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। তাই এর চাই বিশেষ যত্ন। কিছু নিয়ম মেনে চললেই মুখের ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে পাওয়া সম্ভব। থাকছে এ সময় ত্বকের যত্নের আটটি ধাপ- পরিচ্ছন্নতা পরিচ্ছন্নতা সৌন্দর্য রক্ষার প্রথম ধাপ। ঘুম থেকে ওঠার পর ও ঘুমোতে যাওয়া আগে নিয়ম করে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়া বাইরে থেকে এসে অবশ্যই ভালভাবে মুখ পরিষ্কার করা উচিত। ক্লিনজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার বাছাই করুন। দিনে দু-তিনবার মুখ পরিষ্কার করা ভীষণ জরুরী। দুধ ভাল ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে। কাঁচা দুধে তুলা ভিজিয়ে পুরো মুখে লাগান, ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে পরিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে ময়েশ্চারাইজড করে। একইভাবে আলুর রস ব্যবহার করতে পারেন। আলু রস করে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। বাইরে থেকে ফিরে তুলা দিয়ে মুখে লাগান। কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বকের ময়লা সহজেই উবে গেছে। মরাকোষ দূর দূষণ ও ধুলোবালি আমাদের লোমকূপকে বন্ধ করে দেয়। ফলে ময়লা জমে পিম্পল ও যার্ম বের হয়। নিয়মিত স্ক্রাবিংয়ের ফলে এসব সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব। তবে সপ্তাহে অন্তত দুদিনের বেশি স্ক্রাব করা উচিত নয়; এতে লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঘরে বসেই বানাতে পারেন এসব স্ক্রাব। দুই টেবিল চামচ চিনির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। চিনির দানা গলে যাওয়া পর্যন্ত ঘষতে থাকুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চালের গুঁড়ার সঙ্গে দুধ ও কমলার খোসা বাটা মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। হালকা শুকিয়ে এলে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া বাড়িতে বসে ফ্রুট স্ক্রাব তৈরি করতে পারেন। কলা চটকে তাতে মধু মিশিয়ে মুখে ক্লকওয়াইজ ও এ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ ম্যাসাজ করুন। এভাবে আপেলও ব্যবহার করা যায়। প্রাকৃতিক ব্লিচ ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে বাড়িতেই তৈরি করুন ব্লিচ। শসা ব্লেন্ড করে তাতে লেবুর রস মিক্স করে মুখে ম্যাসাজ করতে পারেন। এছাড়া কাঁচা দুধে লেবু মিশিয়ে মুখে প্রলেপ দিন। হালকা শুকিয়ে এলে ম্যাসাজ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া দুধে এক চিমটি লবণ দিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের জেল্লা বাড়বে। টমেটোর রস ব্লিচ হিসেবে দ্রুত কাজ করে। টোনিংয়ের গুরুত্ব এ সময় ত্বকের টোনিং খুব জরুরী। পুদিনা পাতা পানিতে সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে নিন। তারপর ছেঁকে বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। এরপর কটন বলের সাহায্যে মুখে ব্যবহার করুন। শসা গোল করে কেটে ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর মুখে লাগান। এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুব ভাল টোনার। গোলাপজল ও গ্লিসারিন মিশিয়ে নিয়ম করে মুখে লাগাতে পারেন। এতে ত্বক প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। ভিনেগার ও গোলাপজল একই অনুপাতে মিশিয়ে তুলার সাহায্যে মুখে লাগান। এটি ত্বকের পক্ষে ভীষণ উপকারী। সঠিক উপায়ে ময়েশ্চারাইজিং এ সময় থেকেই ত্বকের চাই বাড়তি ময়েশ্চার। শুধু শুষ্ক ত্বকেই নয়, সব ধরনের ত্বকের জন্য এ সময় ময়েশ্চার দরকার। বাজারে নানা ধরনের ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার বাছাই করুন। এছাড়া প্রচুর পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পর মুখ না মুছে পানি মুখেই শুকোতে দিন। এটিও ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে। এছাড়া গোসলের আগে অলিভ বা আমন্ড অয়েল হালকা গরম করে মুখে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট রাখুন। মুখে তেল বসে গেলে। হালকা গরম পানিতে টাওয়েল ভিজিয়ে ধীরে ধীরে রগরে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক ময়েশ্চারাইজড তো হবেই, সঙ্গে মরা কোষ উঠে গিয়ে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এ্যালোভেরা খুব ভাল ময়েশ্চারাইজার। ঋতু উপযোগী ফেস প্যাক নিজেই তৈরি করুন ত্বকের উপযোগী ফেসপ্যাক। কলা চটকে মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ময়দার সঙ্গে মধু ও দুধ মিশিয়ে মুখে লাগান। হালকা শুকিয়ে এলে ম্যাসাজ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মসুরের ডালবাটা প্রাচীনকাল থেকেই ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মসুরের ডালবাটা, কাঁচা হলুদ, কমলার খোসা বাটা ও দুধ দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে মুখে পুরু প্রলেপ দিন। শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলুন। এটি মুখের রং উজ্জ্বল করে। এছাড়া ত্বকে পুষ্টি জোগাতে ফলের রস ব্যবহার করতে পারেন। হাইড্রেশন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন ও ফলের রস খান। এটি ত্বকের স্বাভাবিক কোমলতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। সানস্ক্রিন এক কথায় বলতে গেলে সারা বছরই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। সূর্যের ইউভিএ ও ইউভিবি রশ্মি ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকারক। তবে সানস্ক্রিন কেনার সময় ত্বকের ধরন অনুযায়ী কেনা উচিত। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটার বেজড ও শুষ্ক ত্বকের জন্য অয়েল বেজড সানস্ক্রিন কেনা উচিত। ছবি : কেক্রাফট
×