ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়ন প্রার্থীদের উপচেপড়া ভিড় বিএনপি কার্যালয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

মনোনয়ন প্রার্থীদের উপচেপড়া ভিড় বিএনপি কার্যালয়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপির মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়। এ সময় সেখানে ছিল নেতাকর্মীদের উপচেপড়া ভিড়। মনোনয়ন ফরম বিক্রি কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন বহন করে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নেছে গেয়ে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ শব্দ উচ্চারণ করে স্লোগান দিতে থাকে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো নয়াপল্টন এলাকা। এ সময় সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বেলা পৌনে এগারোটায় প্রথমেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্য ৩টি ফরম বিক্রি করে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফেনী-১ আসনের জন্য দলের কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এর পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বগুড়া-৬ আসনের জন্য এবং অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বগুড়া-৭ আসনের জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। খালেদা জিয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম কেনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত না হলে নির্বাচনে অংশ নেয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি তা পুনর্বিবেচনা করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ এখনও সৃষ্টি হয়নি। ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকারের অত্যাচারে আমাদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় আজ কারাগারে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মোটেও কোন পরিবেশ নেই। তাই নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আমরা অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ আমাদের আন্দোলনের অংশ। এর মাধ্যমে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। বেলা ১১টা ১০ মিনিটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও ১ আসনে নির্বাচন করতে নিজের জন্য দলের দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন (ভিপি), যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনীর হোসেন, বেলাল আহমেদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার প্রমুখ। এ ছাড়া সোমবার বিএনপির মনোনয়ন কিনেছেন চিত্রনায়ক হেলাল খান (সিলেট-৬) কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, কনক চাঁপা (সিরাজগঞ্জ-১) (নীলফামারী-৪) ও (ফরিদপুর -৪) নায়িকা শায়লাসহ আরও অনেকে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আরও যারা দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেন তারা হলেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রেহানা আখতার রানু, মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে চিত্রনায়ক হেলাল খান বলেন, আমি সিলেটের ছেলে, বিরানীবাজার (সিলেট-৬ আসন) থেকে আমি নির্বাচন করব। এই নির্বাচন হবে অধিকার আদায়ের নির্বাচন, গণতন্ত্র ফিরে পাবার নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির নির্বাচন, তারেক রহমানের ওপর সকল মামলা প্রত্যাহারের নির্বাচন। আমরা প্রত্যাশা করছি দেশের জনগণ ধানের শীষে ভোট দিতে অধির আগ্রহে বসে আছে। ইনশা আল্লাহ আমরা জয়যুক্ত হব, দেশের মানুষ সুশাসন ফিরে পাবে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। কণ্ঠ শিল্পী বেবী নাজনীন বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের এই নির্বাচনে যাওয়া। আমরা আশা করছি নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে আসবেন। চিত্র নায়িকা শায়লা বলেন, এই নির্বাচন হচ্ছে আমাদের আন্দোলনের অংশ। আমি আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। গত নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি, এবার নির্বাচনে যাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে আমি বিপুল ভোটে জয় লাভ করব। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি নেবে না এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও অনিশ্চয়তা ছিল। তবে বিএনপি ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে ব্যাপক উৎসাহ। তাই ধানের শীষ মার্কা নিয়ে ভোট করতে আগ্রহীরা সকাল থেকেই কর্মীসমর্থকদের নিয়ে নয়া পল্টনে জড়ো হয়। তাদের মিছিল থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়। ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয় চতুর্থ তলায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় অফিসে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় মিটিং রুমে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয় পঞ্চম তলায় শ্রমিক দলের অফিসে, খুলনা ও ফরিদপুর বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয় পঞ্চম তলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের অফিসে, বরিশাল বিভাগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয় চতুর্থ তলায় যুবদল দক্ষিণের অফিসে এবং প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের জন্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয় দ্বিতীয় তলায় মহিলা দলের অফিসে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১৩২৬ মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ১৬ নবেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া যাবে। উল্লেখ্য, বিএনপির মনোনয়ন ফরম তুলতে ৫ হাজার এবং জমা দিতে ২৫ হাজার করে টাকা নেয়া হচ্ছে। বিএনপির ৬ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার : বিএনপির ৬ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন। রিজভী জানান, যাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে তারা হলেন, স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক শিক্ষা সম্পাদক আলমগীর কবির, দলের সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ মোঃ খলিলুল রহমান, জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ শহিদুল হক জামাল এবং চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এস এম সুলতান টিটু। রিজভী জানান, বহিষ্কার হওয়া ওই ছয় নেতা দলে ফিরতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছিলেন। তার নির্দেশনক্রমে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলো।
×