ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনমুখী তারুণ্যের শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১২ নভেম্বর ২০১৮

 জীবনমুখী তারুণ্যের শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস

সমুদ্র হক ॥ প্রত্যন্ত গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরা তো মহাখুশি। এতদিন তারা মানব চরিত্র ও জীবনমুখী গানের শিল্পীকে মঞ্চে ও টিভির শোতে দেখেছে। আজ সেই শিল্পী তাদের আমতলি মডেল স্কুলের দুয়ারে। হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালবাসা দিয়ে শিশু ও কিশোর শিক্ষার্থীরা বরণ করে নিল এই শতকের তারুণ্যের শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসকে। যিনি শুধু কণ্ঠ শিল্পীই নন। গান লেখেন, সুর দেন। সেই গান নিজের কণ্ঠে তুলে নিয়ে সুরের মায়াজালে ভরে দেন মঞ্চে টেলিভিশনের পর্দায়। যিনি বাজাতে পারেন হারমোনিয়াম, সেতার, তবলা, বাঁশি, সরদ, দোতারাসহ অন্তত বিশ ধরনের বাদ্যযন্ত্র। বিশেষ করে হারমোনিয়ামে এতটাই পারদর্শী যে হাতের আঙ্গুল কুনুই দিয়ে হারমোনিয়ামের প্রতিটি রিডকে জাদুর পরশে সুরের মায়াজালে আয়ত্তে এনেছেন। কানাডার মন্ট্রিলে এক অনুষ্ঠানে এমন সুর তোলা দেখে মেয়র চিকিৎসককে দিয়ে নকুল কুমারের আঙ্গুল পরীক্ষা করিয়ে নেন। এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েন যে নকুল কুমারকে সঙ্গীতের বিস্ময়ের তরুণ পরিচিতি দেন। দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে বেড়ানো এবং বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে গর্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা এই শিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস শনিবার বিকেলে জয়পুরহাট থেকে ঢাকা ফেরার পথে বগুড়ার শিবগঞ্জের আমতলি মডেল স্কুল দেখে প্রবেশ করেন। প্রত্যন্ত গ্রামে অতি উন্নত এই স্কুলের কথা তিনি আগেই শুনেছেন। যে মডেল স্কুল দেশের নগরীগুলোর স্কুলের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এলাকার গরিব শিক্ষার্থীরা এই স্কুলের পাঠ নিয়ে ভাল ফল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এমন একটি স্কুলে প্রবেশ করে নকুল কুমার শুধু অভিভূত হন। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা মীর লিয়াকত আলী এক অনুষ্ঠানে নকুল কুমার বিশ্বাসের কণ্ঠে মায়ের ওপর লেখা একটি গান শুনে অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। তারপরই তিনি নকুল কুমারের মা মঙ্গলি দেবীর নামে গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই স্কুলে শিক্ষা বৃত্তি চালু করেন। এই শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পূর্ণ বৃত্তি পেয়ে মাধ্যমিক পাঠদান শেষ করছে। নকুল কুমার বিশ্বাস স্কুলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনেকক্ষণ সময় কাটান। পরিচালক মহররম আলী নকুল কুমারকে স্কুল ঘুরে দেখান। দেড় ঘণ্টার বেশি তিনি স্কুলের প্রতি ক্লাসে গিয়ে খোঁজ খবর নেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা দেখে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াকত আলী আমতলি মডেল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মাঠপর্যায়ে উন্নত একটি সাংস্কৃতিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের কথা জানালে নকুল কুমার বিশ্বাস পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। নকুল কমার বলেন, তিনি গ্রাম থেকেই উঠে এসে প্রতিভা বিকাশ করে দেশ ও বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে এনেছেন। তিনি চান বগুড়ার এই গ্রামের সাংস্কৃতিক একাডেমির শিল্পীরা তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে দেশের সম্মান বয়ে আনুক। নকুল কুমার এই স্কুলের অনুষ্ঠানে এসে গ্রামের শিল্পীদের অনুপ্রেরণা দিতে বিনাপারিশ্রমিকে অনুষ্ঠান করে দেবেন। এ দিন তিনি স্কুলের কার্যক্রম দেখে খুশি হয়ে উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য এক লাখ টাকা উপহার দেন। প্রতিষ্ঠাতা জানান, এই অর্থেই সাংস্কৃতিক একাডেমির কাজ শুরু করবেন। নকুল কুমার বিশ্বাস ১৯৬৫ সালে মাদারীপুরের পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবা সুরেন্দ্রনাথ ও মা মঙ্গলিদেবীর ৫ সন্তানের মধ্যে নকুল পঞ্চম। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নকুলের সংসার। শিশুকাল থেকেই নকুল সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগী। দ্রুত তিনি বাদ্যযন্ত্রের সুর আয়ত্তে আনতে পারেন। ১৯৮০ সালে নকুল কলকাতায় গিয়ে সেতার শেখেন। বছর দুয়েক পর ফিরে আসেন। বেতারে কিছুদিন চাকরি করেন। ১৯৮৬ সালে গ্রামে গিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। এক কবিয়ালের গান সংগ্রহে বাধা পেয়ে নিজেই গান লেখা সুর দেয়া ও কণ্ঠে ধারণ করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে টানা দশ বছর তিনি বিটিভির ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তার ৫০টি এ্যালবাম বের হয়েছে। ছন্দে ছন্দে সাজানো নকুলের ‘ছন্দ আনন্দ’ প্রশংসিত হয়েছে। এই শিল্পী জানান আগামী ১৮ নবেম্বর তিনি ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা ও চীনসহ কয়েকটি দেশে মঞ্চ অনুষ্ঠান করেছেন। তিনি সাহিত্য ও সঙ্গীত নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। মঞ্চ অনুষ্ঠানের কারণে তিনি সময় দিতে পারছেন না। তবে এই প্রতিষ্ঠানকে দাঁড় করাবেন। পাশাপশি আমতলি মডেল স্কুলের সাংস্কৃতিক একাডেমি প্রতিষ্ঠায় তিনি সহযোগিতা দেবেন। তিনি চান মাঠপর্যায়ের প্রতিভাবান শিল্পীরা দেশের সুনাম বয়ে আনুক।
×