ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাল্টে গেছে দৃশ্যপট, সর্বত্রই নির্বাচনী আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১২ নভেম্বর ২০১৮

পাল্টে গেছে দৃশ্যপট, সর্বত্রই নির্বাচনী আমেজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বদলে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ। ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনের এই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় উৎসবের আমেজের ছাপ শুরু হয়েছে। এদিকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোও ইসিতে চিঠি দিয়ে জোট ও প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়ে জানিয়েছে দিয়েছে। এতে ১৪ দলীয় জোটের ১১ দল নৌকায় এবং ২০ দলীয় জোটের ৮ দল ধানের শীষে নির্বাচনের কথা জানিয়েছে। পাশাপাশি বিএনপি ও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবিও জানানো হয়েছে। তবে নির্বাচন পেছানো হবে কিনা আজ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচন পেছানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে আজ সোমবার। যদিও তফসিল ঘোষণার আগে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন- সব রাজনৈতিক দল একমত হলে নির্বাচন কয়েকদিন পিছিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে ইসি সূত্রে জানা গেছে, সব দলের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুবিধার্থে দলগুলোর দাবি বিবেচনা করা হতে পারে। নির্বাচন কমিশন চায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন পেছানোর এই দাবি জানালেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই দাবির বিরোধিতা করা হয়নি। ১১টি দল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে ॥ এদিকে জোট ও প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কমিশনের বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনের জোট ও নৌকা প্রতীকের বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করেছে। তবে আওয়ামী লীগের জোটে কয়টি দল থাকছে এবং কোন্ কোন্ দল নির্বাচনে নৌকা প্রতীক ব্যবহার করবে সে বিষয়ে ইসিকে চিঠি দিলেও কৌশলগত কারণে দলটি এ বিষয়ে কিছু প্রকাশ করেনি। নির্বাচন কমিশন সচিবকে জোটবদ্ধ নির্বাচনের তথ্য সংক্রান্ত চিঠি দেয়ার পর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির সদস্য সচিব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সঙ্গে যারা যারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে, তাদের একটি তালিকা কমিশনে জমা দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছি রাজনৈতিক দল এবং ইসি, দু’পক্ষের মধ্যেই এটা সীমিত আছে। নির্বাচন কমিশনের যে নির্ধারিত প্রক্রিয়া আছে সে প্রক্রিয়া আপনারা জেনে নেবেন। দলগুলোর নাম প্রকাশ না করা আমাদের রাজনৈতিক কৌশলের একটি অংশ। কাদের নিয়ে আমরা নির্বাচন করব, তা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি উল্লেখ করেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কৌশলগত কারণে বিষয়টি প্রকাশ করা না হলেও কমিশন সূত্রে জানা গেছেÑ আওয়ামী লীগের দেয়া চিঠিতে আওয়ামী লীগসহ ১১টি রাজনৈতিক দলের নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে দেয়া ওই চিঠিতে যেসব দলের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি (জেপি) (মঞ্জু), কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, ন্যাপ (মোজাফফর), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও বাসদ (রেজা)। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদ (ইনু) এবং তরিকত ফেডারেশনের পক্ষ থেকেও আলাদা চিঠি দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের কথা ইসিকে জানানো হয়েছে। আটটি দল নির্বাচন করবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে॥ এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে নিবন্ধিত আটটি দলকে ধানের শীষ প্রতীক দিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে দেশের অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। রবিবার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সিইসির দফতরে চিঠিটি পৌঁছে দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি দাস সরকার। চিঠিতে সিইসিকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে, আপনাকে জানাচ্ছি যে, নিম্নলিখিত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো যৌথভাবে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলগুলো হলো বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, চূড়ান্ত মনোনয়ন সময়সীমার মধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনে যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দের জন্য লিখিতভাবে অবহিত করা হবে। ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে ইসিতে আলাদা চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে তারা ধানের শীষ ও ছাতা প্রতীকে নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করেছে। রবিবার দুপুরে এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল অলি আহমদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দলটির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদের দফতরে পৌঁছে দেন। চিঠিতে বলা হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) কয়েক প্রার্থী দলীয় প্রতীক ছাতা নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। আবার এলডিপির কয়েক প্রার্থী ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিতে চায়। এদিকে নবগঠিত ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে ইসিতে চিঠি দিয়ে জোটগত নির্বাচনের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসিতে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল হিসেবে সম্মিলিত কোন প্রতীক বা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এদিকে বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে কমিশনে চিঠি দিয়ে ৪টি দলের জোটগত ও কুলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের কথা জানানো হয়েছে। তবে ইসির কাছে ব্যাখ্যা দাবি করা হয়েছে চারটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জোটগতভাবে কুলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে অন্যান্য নিবন্ধিত শরিক দলের মার্কার ওপর কোন প্রভাব পড়বে কিনা বা তারা যদি নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করে জোটভুক্ত মার্কার ওপর কোন প্রভাব পড়বে কিনা এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যার প্রয়োজন। নির্বাচন পেছানোর দাবি বিএনপি, যুক্তফ্রন্টের ॥ এদিকে তিনটি জোট ও দলের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে চিঠি দিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচন পেছানোর দাবি জানানো হয়েছে। বিএনপি এবং যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন পেছানোর দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। বিএনপির দেয়া চিঠিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল এক মাস পেছানোর দাবি জানানো হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর পাঠানো চিঠি রবিবার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদের কাছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল জমা দেয়। বিএনপির দলীয় প্যাডে লেখা এই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএনপি, ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গণতন্ত্র উদ্ধারের অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে তড়িঘড়িপূর্বক নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সব দলের পক্ষে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। ইতোমধ্যে বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সিডিউল এক মাস পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ করা হয়। এই চিঠিতে মির্জা ফখরুলকে বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার কমিশনে এই চিঠি পৌঁছে দেন। এদিকে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে ইসিতে চিঠি দিয়ে নির্বাচন ৭ দিন পিছিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) চিঠি দিয়েছেন যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। চিঠিতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ এক সপ্তাহ পিছিয়ে ১৯ নবেম্বরের পরিবর্তে ২৬ নবেম্বর, যাচাই-বাছাই ২২ নবেম্বরের পরিবর্তে ২৯ নবেম্বর, প্রত্যাহার ২৯ নবেম্বরের পরিবর্তে ৫ ডিসেম্বর করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া ভোটগ্রহণের তারিখ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৩০ ডিসেম্বর করার প্রস্তাব করছি। ভোট পেছানোর বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত আজ ॥ এদিকে জানা গেছে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন পেছানোর বিষয়টি আমলে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ সোমবার এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত অবহিত করা হবে বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। রবিবার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অবশ্যই চাই, সব দল নির্বাচনে আসুক। দলগুলোর নির্বাচন পেছানোর বিষয়টি এখনও আমাদের কাছে আসেনি। নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে বলেন, এটা এখন বলা যাবে না। যেহেতু আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। আমাদের সঙ্গে এগুলো নিয়ে কথাই হয়নি। নির্বাচন পেছানোর বিষয়টি আগামীকাল (সোমবার) জানা যাবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শুধু হ্যাঁ হ্যাঁ উত্তর দেন।
×