ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ফোনালাপ ফাঁসে তোলপাড়

এবার ছাত্রীদের দিয়ে মিথ্যা মামলার নির্দেশ জাফরুল্লাহর

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৭ নভেম্বর ২০১৮

এবার ছাত্রীদের দিয়ে মিথ্যা মামলার নির্দেশ জাফরুল্লাহর

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এবার ছাত্রীদের দিয়ে মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা দায়েরসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির নির্দেশ দিয়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও গণবিশ^বিদ্যালয় ঘিরে সংঘর্ষ বাধিয়ে এলাকাবাসীদের নামে নিজেদের ছাত্রীদের দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দেয়ার নির্দেশ সংবলিত ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ গণবিশ^বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মর্তুজা আলী বাবুকে ছাত্রীদের দিয়ে এক মৌলভীর বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের ও ছাত্রদের দিয়ে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। সাত মিনিটের ফোনালাপে ডাঃ জাফরুল্লাহ তার প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মর্তুজা আলীকে ভাল খাওয়া-দাওয়াসহ নানা সুবিধা দিয়ে সাভারের প্রত্যেক থানায় লোকজন সংগঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বলেছেন, মারপিট করতে ৫০ জনের বেশি লাগে না। ২০টা ছাত্র রাখ ভাল করে খাওয়া-দাওয়া করাও। এখন একটু এগ্রেসিভ হও। এখন একমাত্র পথ হচ্ছে ওরা এক কদম বাড়লে আমাদের ২ কদম বাড়াতে হবে। এই আলাপে পরিষ্কার হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তাদের হয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলন তৈরিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মর্তুজা আলীকে বলতে শোনা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা নিপীড়নবিরোধী মানববন্ধন আছে। সেখানে আমাদের ছেলে মেয়েরাও যাবে। এরপর ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, হ্যাঁ, জাহাঙ্গীরনগরে প্রবেশ করাতে পারলে অনেক লাভ হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনে আসা বিদেশীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ফোনালাপে বলেছেন, ‘শুনেছি ইন্ডিয়ান মেয়েরা পিছিয়ে আসছে। ওরা কেন পিছিয়ে আসবে। আমাদের ৫ হাজার ছাত্র আছে তার ভেতর ৫০ জনকে যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি। কারণ মারপিট করতে ৫০ জনের বেশি ছাত্র লাগে না। ওই মৌলভির বিরুদ্ধে ২টা মেয়েকে দিয়ে নারী নির্যাতন কেস করায়ে দাও।’ উত্তরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘হ্যাঁ কাজ করছি। পঞ্চাশজন ছাত্রের এখন লিস্টও করা হয়েছে। বেশকিছু দিন আগে সেনাপ্রধানকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও হয়েছিল তার নামে। এরপর বেগতিক দেখে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে গুরুতর অসুস্থ প্রমাণের চেষ্টা করেন। মাসে চারবার ডায়ালাইসিস করতে হয় ইত্যাদি। তবে নিজেকে অসুস্থ বলে দাবি করলেও প্রতিদিন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সভা সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন তিনি। কর্মসূচীতে যাচ্ছেন রাতেও। মঙ্গলবার ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশেও হাজির হয়ে ভাষণ দিয়েছেন। ঠিক এমন এক পর্যায়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মর্তুজা আলী বাবুর সঙ্গে তার টেলিফোন আলাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির ষড়যন্ত্র উঠে এসেছে। আলাপের এক পর্যায়ে মর্তুজা আলী ডাঃ জাফরুল্লাকে বলেন, ‘আজকে ঐ যেটা টার্গেট ছিল কটন টেক্সটাইলের হুজুর এক দাড়িওয়ালা, সে সেইদিন ঝামেলা করেছে, সে আজকে মার খেয়েছে, মেয়েরাই মারছে ধরে তাকে। জাফরুল্লাহ বলেন, ‘হ্যাঁ, ঐ রকমই। ঐ রকম মেয়েরা পিকেটে যেতে হবে। এখন সে চাইবে মামলা করার জন্য। মর্তুজা- আর কালকে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে ৩টার সময় একটা মানববন্ধন ইয়ে করবে নিপীড়নবিরোধী জোট। আমাদের মেয়েরা যাবে ঐখানে, এক গাড়ি যাবে। জাফরুল্লাহ- হ্যাঁ, জাহাঙ্গীরনগরে ইনভল্ব কর দিতে পারলে অনেক বেশি লাভ হবে। মর্তুজা- নিপীড়নবিরোধী, নাছিম আঞ্জুম হোসেন ছিলেন না আমাদের এক সময়? উনারা করবেন অর্গানাইজটা। জাফরুল্লাহ- হ্যাঁ, নাসিম প্রফেসর, ভাল। মর্তুজা- কালকে ওটা হবে ওখানে ৩টার সময়। জাফরুল্লাহ- কেন না ঐটা না করলে তো ইয়ে হবে না। এটা এগ্রিসিভ, এটা তোমাদের প্রত্যেকটা থানায় ১০টা করে ছাত্র রাখ। ১০টা-২০টা করে ছাত্র রাখ। মর্তুজা- না এখন ৫০ জন লিস্ট করা হয়েছে। সব সময় তারা থাকবে। জাফরুল্লাহ- একটা লিস্ট কর, তারা থাকবে, খাবে-দাবে তাদের ইয়ে করবে। তারা চারদিকে ইয়ে করবে। তোমাদের স্ট্রাটেজি বুঝেছি আমি। এখন এটাতে করে দাও। আরও দুইটা, এখন নারী নির্যাতন মামলা কর, একটা। একটা নারী নির্যাতন কর- সিভিল কেইস আর ক্রিমিনাল কেইস। আমাদের দুইটা মেয়েকে দিয়ে করিয়ে দাও, কথা বুঝেছ? আমাদের দুইটা মেয়ে দিয়ে নারী নির্যাতন কেইস কর। তুমি যাও, তুমি গিয়ে দুইটা কেইস করিয়ে দাও নারী নির্যাতনের। মর্তুজা- না, আমি একটি ড্রাফট করে দিয়ে এসেছি। জাফরুল্লাহ- ওটা দেখ, ওটা কে দিয়ে পাঠাও সালমাকে। তারপরে আমাকে জানাও থানাতে এবং তার একটা কপি ই-মেইল করে দাও আমাকে স্ক্যান করে, যাতে আমার কাছে একটা কপি থাকে। আর এটার কপি র‌্যাবকে দাও। বল আপনারা কিছু করতেছেন না? র‌্যাবাকে দাও। বলো আপনারা এখানে কার জন্য করছেন? এতে হেল্প কাদের? মর্তুজা- না, আজকে র‌্যাব আসে নাই। আজকে পুলিশ এসেছিল, র‌্যাব আসে নাই। জাফরুল্লাহ-পুলিশকে বলতে হবে যে আজকে আপনারা এখানে ইয়ে করতেছেন। এখন যাও, থানাতে গিয়ে দুইটা আলাদা কেস কর। একটা মৌলভি সাহেবকে নারী নির্যাতনের মামলায় দাও। তার সাথে লোবি-টবি কয়েকজনকেও দিও। সব কমেন্ট কর। আরেকটাতে দাও যে আবার তারা হামলা করেছিল। ঠিক আছে ? মর্তুজা বলেন- আচ্ছা।
×