ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা মামলায় সুপ্রীমকোর্টের ঐতিহাসিক রায়

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসিয়া খালাস

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১ নভেম্বর ২০১৮

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসিয়া খালাস

ব্লাসফেমি আইনে ৮ বছর আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া এক খ্রীস্টান নারীকে বেকসুর খালাস দিয়েছে পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্ট। ঐতিহাসিক এক রায়ে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত বুধবার আসিয়া বিবির আপীল আবেদন গ্রহণ করে তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। বিবিসি। প্রতিবেশীরা আসিয়ার বিরুদ্ধে হযরত মোহাম্মদকে (সাঃ) অপমানের অভিযোগ এনেছিলেন। ওই অভিযোগে ২০১০ সাল তাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। শুরু থেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন আসিয়া। গত ৮ বছর ধরে তাকে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে দিন কাটাতে হয়েছে। আসিয়ার মামলাটি নিয়ে পাকিস্তান গভীর বিভক্তি তৈরি হয়েছিল। দেশটিতে ব্লাসফেমি আইনের পক্ষে শক্ত জনসমর্থন আছে। রায়কে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় রাজধানী ইসলামাবাদজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা। কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতারা তাদের সমর্থকদের সড়কে অবস্থান নিতেও আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইসলামাবাদের সুপ্রীমকোর্টে প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসার আসিয়ার আপীলের রায় পড়ে শোনান। ‘আপীল গৃহীত হয়েছে। নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন করে তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হচ্ছে। তার দ- প্রত্যাহার করা হলো,’ বলেন প্রধান বিচারপতি। সমালোচকদের মতে, পাকিস্তানের এ ব্লাসফেমি আইনটি প্রায়ই ব্যক্তিগত রেষারেষির প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, দ- দেয়া হয় দুর্বল সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। ২০০৯ সালের জুন মাসে লাহোরের কাছে শেখুপুরা এলাকায় ফল পাড়তে গিয়ে অন্য নারীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চার সন্তানের জননী আসিয়া নবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী আসিয়া একটি কাপ ব্যবহার করে একটি বালতি থেকে পানি খাওয়ার পর, ওই নারীরা পানি অপবিত্র হয়ে গেছে এবং এটি আর ব্যবহার করা যাবে না বললে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। আসিয়া বিবিকে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্যও প্ররোচিত করে তারা। এর পাল্টায় আসিয়া নবীকে নিয়ে তিনটি আপত্তিকর কথা বলেন বলে অভিযোগ ওই নারীদের। পরে আসিয়াকে তার বাড়িতে মারধরও করা হয়; মারধরের এক পর্যায়ে আসিয়া ব্লাসফেমির স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন বলেও দাবি অভিযোগকারীদের। তদন্তের পর পুলিশ আসিয়াকে গ্রেফতার করে। চার সন্তানের জননী আসিয়া পরে জানান, প্রতিবেশীদের সঙ্গে ‘উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়’ হলেও তিনি কখনই ধর্ম অবমাননা করেননি; এবং এ নিয়ে কখনও স্বীকারোক্তিও দেননি। আসিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘অসঙ্গতিতে ভরপুর’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তার আইনজীবীরাও। পাকিস্তানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ায় বিভিন্ন আইনেও এর প্রাধান্য লক্ষণীয়। নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদরাও প্রায়ই এ আইনে চরম শাস্তির পক্ষে সমর্থন দিয়ে থাকেন। আসিয়া বিবির ‘মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরোধিতা করেছিলেন পাঞ্জাবের সাবেক গবর্নর সালমান তাসির। আসিয়াকে ক্ষমা ও ব্লাসফেমি আইন তুলে দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়া এ রাজনীতিবিদকে ২০১১ সালে তার দেহরক্ষী মুমতাজ কাদির প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। ওই ঘটনায় কাদরির মৃত্যুদ-ের রায় হলেও পাকিস্তানের অনেকের কাছে এ দেহরক্ষী নায়কের মর্যাদা পেয়ে আসছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসিয়া বিবির মৃত্যুদ-াদেশ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়, একে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলেও অনেকে অভিহিত করেন।
×