ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপ্রদেশে জিততে কংগ্রেস নিয়েছে বিজেপি কৌশল

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

মধ্যপ্রদেশে জিততে কংগ্রেস নিয়েছে বিজেপি কৌশল

মধ্যপ্রদেশে বিজেপি আজ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায়। আগামী নবেম্বরে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়। তার জন্য বিজেপি অনুসৃত কৌশলই অবলম্বন করেছেন মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান কমলনাথ। নয় মেয়াদের লোকসভা এমপি কমলনাথ পরাক্রান্ত বিজেপিকে পরাজিত করার লক্ষ্যে তার এতদিনের রাজনৈতিক বিচক্ষণতাকে সমন্বিত রূপ দিয়ে কাজে লাগাচ্ছেন। কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে গত আগস্টে কমলনাথ সাতনা জেলার মাইহার শহরের সারদা মাতা মন্দির দর্শন করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি এই মন্দির দর্শনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন এবং সে নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল। এটাই শেষ নয়। কমলনাথ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তার দল ক্ষমতায় এলে রাজ্যের ২৩০০ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যেকটিতে একটি করে গোশালা স্থাপন করবে। তিনি বলেন, বিজেপি গোরক্ষার কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই করেনি। প্রতিদিন রাস্তায় গরু মরে পড়ে থাকছে। অর্থাৎ কংগ্রেস তার হিন্দুবিরোধী লেবেলটা যে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে এটা তারই সুস্পষ্ট প্রমাণ। দলীয় নেতাদের মন্দিরে লাইন ধরে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সেই মন্দিরে ভক্তদের আগমন যদি বেশি হয় তবে তো কথাই নেই। সমস্ত জনসভায় কমলনাথ শ্রোতাদের নিজের হিন্দু পরিচিতির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেন না। ছিন্দওয়ারায় শতাধিক ফুট লম্বা হনুমানের মূর্তি নির্মাণের পেছনে যে তাঁর হাত ছিল সেটাও তিনি উল্লেখ করে থাকেন। কংগ্রেসের হিন্দু পরিচিতি সুসংহত করে তোলা ছাড়াও কমলনাথ দলের সাংগঠনিক কাঠামো জোরদার করার লক্ষ্যেও কাজ করে চলেছেন ৪ মাস আগে রাজ্যের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে। ৬৩টি জেলা কংগ্রেস কমিটির মধ্যে নিষ্ক্রিয় বা সমস্যাপীড়িত ৩১টি জেলা কমিটির প্রধানকে পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকিদের পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে যে তারা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পরিচয় না দেন। কয়েক এমএলএ ও জেলা কংগ্রেস কমিটি প্রধানকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে যে ভোটের দিন বুথগুলোতে অন্তত একজন করে কর্মী দেয়া হবে যার হাতে স্মার্টফোন থাকবে এবং আরও ১০ জন কর্মী দেয়া হবে যারা দলের চোখ কান হিসেবে কাজ করবে। বিজেপির কাছ থেকে কংগ্রেসের ধার করা আরেক কৌশল হলো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা। কমলনাথ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়োমিত বেঠক করছেন। গত ৪ মাসে তিনি যাদের, গুরজার, বোহরি, বৈশ্য, লোধি, সিন্ধী, পতিদার, বানজারা ও বলাই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই ডজন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। ক্ষমতায় এলে তাদের সব অভাব অভিযোগের প্রতিকার করার এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদির গুজরাট মডেলের অনুকরণে নির্বাচনী প্রচারে উন্নয়নের ছিন্দওয়ারা মডেলটিকে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছে। দলটি অঙ্গীকার করেছে যে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারলে তারা গোটা রাজ্যজুড়ে উন্নয়নের এই মডেলটি অনুসরণ করা হবে। এতে এ অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্পোন্নয়ন হবে বলে দলটি আশা করে। কংগ্রেস নেতারা ভোটারদের নেহরু-গান্ধী পরিবারের সঙ্গে কমলনাথের সংশ্রবের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং তাঁকে ইন্দিরার তৃতীয় পুত্র হিসেবে চিত্রিত করছেন যাতে করে নেহরু-গান্ধী অনুগতদের ভোট টানা যায়। এদিকে মিডিয়ায় এমন কাহিনী অহরহই পরিবেশিত হচ্ছে যে বিজেপিকে মধ্য প্রদেশে হারাতে কংগ্রেস বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ও সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বলেছেন জোট নিয়ে সমঝোতা হওয়া এখনও বহু দূরের ব্যাপার। বিএসপি প্রধান মায়াবতী শোনা যায় জোটের রূপরেখা ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার জন্য কংগ্রেস নেতাদের অনুরোধ জানিয়েছেন। ওদিকে রাহুলও জোটের ব্যাপারে এগিয়ে যাওয়ার সবুজ সঙ্কেত দিলেও নাকি বলেছেন দলের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে জোট হবে না। এদিকে কংগ্রেসের নির্বাচনী সভা-সমাবেশগুলো বিজেপির চেয়ে বেশি জনসমাগম ঘটাতে পারলেও দলের অন্তর্কলহ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। সুতরাং মধ্য প্রদেশের নির্বাচনে জয় কে পাবেÑ কংগ্রেস না বিজেপি তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে
×