ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যুক্যাম্পে রিয়ালকে আতিথ্য দিবে বার্সিলোনা, এক দশকেরও বেশি সময় পর এ লড়াইয়ে নেই দুই সেরা তারকা

মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে নেই মেসি-রোনাল্ডো

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে নেই মেসি-রোনাল্ডো

জিএম মোস্তফা ॥ নতুন মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো আজ। ন্যুক্যাম্পে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১৫ মিনিটে মুখোমুখি হবে লা লিগার ঐতিহ্যবাহী দুই দল। স্প্যানিশ ইতিহাসের মর্যাদার এই লড়াইকে ঘিরে গোটা ফুটবল দুনিয়ার ভক্ত-অনুরাগীদের মধ্যেই বাড়তি উত্তাপ। গত ১০ বছর ধরেই রোমাঞ্চকর এই এল ক্লাসিকোর প্রাণ ছিলেন লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। কিন্তু আজকের লড়াইয়ে থাকছেন না তারা। ৩ হাজার ৯৬২ দিন আগে সর্বশেষ কোন এল ক্লাসিকোতে খেলেননি মেসি-রোনাল্ডো। এর পরের সবকটি এল ক্লাসিকোতেই খেলেছেন মেসি-রোনাল্ডোর কেউ না কেউ। নতুন মৌসুম শুরুর আগে স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। যে কারণে এই ম্যাচে সি আর সেভেনকে ছাড়াই রিয়ালের মাঠে নামার কথাটা জানা ছিল সবার। গত শনিবার নিশ্চিত হয় দুই দলের এই ঐতিহ্যবাহী লড়াইয়ে থাকছেন না লিওনেল মেসিও। সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়াই এলএম টেনকে ছাড়াই মাঠে নামতে হচ্ছে বার্সিলোনাকে। যার ফলে এবারের এল ক্লাসিকো দেখতে হবে বর্তমান বিশ্ব ফুটবলের দুই মহাতারকা মেসি-রোনাল্ডোকে ছাড়াই। এর আগে এমনটা দেখা গিয়েছিল এক দশকেরও বেশি সময় আগে। ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বরে যে এল ক্লাসিকো হয়েছিল, সর্বশেষ সেই ম্যাচে মেসি-রোনাল্ডোদের কেউ ছিলেন না। এল ক্লাসিকো মানেই আলাদা রকমের রোমাঞ্চ। ফুটবলভক্তদের মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা। স্পেনের দুই সেরা ক্লাবের এই লড়াইয়ে গত এক দশকে মেসি-রোনাল্ডো যোগ করেছিলেন বাড়তি রোমাঞ্চ। দুই দলের দুই মহাতারকা ছাড়া এল ক্লাসিকোর এই রঙ কতটুকু ছড়াবে ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। ২০০৯ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের সবচেয়ে সফল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন রোনাল্ডো। দীর্ঘ ৯ বছরের দারুণ জার্নি শেষে গত গ্রীষ্মে লা লিগাকে বিদায় বলে দেন সি আর সেভেন। তার অনুপস্থিতিতে রিয়াল মাদ্রিদও বেশ ভুগছে। গত শনিবার নিজেদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে লেভান্তের কাছেও ২-১ গোলে হেরেছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। যদিওবা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ভিক্টোরিয়া প্লাজেনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে জয়ে ফিরেছে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল। ঘরের মাঠে লেভান্তের কাছে হারার কারণে লা লিগায় পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম স্থানে নেমে গেছে জুলেন লোপেতেগুইয়ের দল। মৌসুমের প্রথম ৯ ম্যাচ থেকে চার জয় আর তিন হারের ফলে তাদের দখলে মাত্র ১৪ পয়েন্ট। যে কারণে কোচের চাকরি নিয়েও চলছে টানাটানি। স্প্যানিশ গণমাধ্যমের গুঞ্জন, এল ক্লাসিকোর ফলাফলের ওপরই নির্ভর করছে তার ভাগ্য। এদিকে রিয়াল মাদ্রিদ হারলেও লা লিগায় সর্বশেষ ম্যাচ থেকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সিলোনা। কাতালান ক্লাবটি সেদিন ৪-২ গোলে পরাজিত করে সেভিয়াকে। সেই সঙ্গে লা লিগার শীর্ষস্থানটাও দখল করে নেয় আর্নেস্তো ভালভার্দের দল। রিয়ালের সমান সংখ্যক ম্যাচ থেকে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে অবস্থান করছে এখন টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আজ যদি এল ক্লাসিকোতে বার্সিলোনা জিতে তাহলে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে কাতালান ক্লাবটির পয়েন্ট ব্যবধান দাঁড়াবে সাত। অর্থাৎ এই ম্যাচ জিতলে লা লিগার শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে যাবে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। রোনাল্ডোবিহীন রিয়াল মাদ্রিদ নতুন মৌসুমের শুরুটা বেশ ভালই করেছিল। বেল-বেনজেমা, এসেনসিও-ইস্কোরা প্রথম কয়েক ম্যাচে গোল করে দলের সেরা তারকার অনুপস্থিতিটা বুঝতে দেননি। কিন্তু সেই ধারা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি জুলেন লোপেতেগুইয়ের দল। গত জুলাইয়ে রোনাল্ডোকে বিক্রি করে রিয়াল মাদ্রিদ ঐতিহাসিক ভুল করে বলে মন্তব্য করেছিলেন ক্লাবটির সাবেক সভাপতি রামন কালদেরন। এবার তিনি দিলেন বিস্ময়কর এক তথ্য। রোনাল্ডোর রিয়াল ছাড়ার পেছনে মূলত ক্লাবটির বর্তমান সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের নেইমারের প্রতি অতিরিক্ত মোহাচ্ছন্নতাই দায়ী। এ প্রসঙ্গে কালদেরন বলেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো কখনই রিয়াল সভাপতির ব্যক্তিগত প্রশংসা পাননি। প্রথমদিন থেকেই সভাপতির সঙ্গে খুব খারাপ সময় কেটেছে তার। সভাপতি বরং নেইমারের সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়েই বেশি আচ্ছন্ন ছিল। সে জন্য প্যারিস সেইন্ট জার্মেইকে তিনি ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো দিতেও রাজি ছিল এবং রোনাল্ডোর বেতনের দ্বিগুণ দিতে চেয়েছিল নেইমারকে।’ এসব কারণেই সান্তিয়াগো বার্নাব্যু ছাড়তে মরিয়া হয়ে ওঠেছিলেন রোনাল্ডো। এদিকে ‘ক্লাসিকো’র কিংবদন্তি কার্লোস পুয়োল ও লুই ফিগোর মতে, রিয়াল মাদ্রিদে রোনাল্ডোর না থাকাটা দলের জন্য বেশ বড় একটা দুর্বলতা। বার্সিলোনার সাবেক কিংবদন্তি অধিনায়ক কার্লোস পুয়োল বলেন, ‘এটা স্বাভাবিক, দলের সেরা খেলোয়াড় যখন ছেড়ে চলে যায়, তখন সেই দলের পক্ষে খাপ খাওয়ানোটা বেশ কষ্টকর, দলের মানও নেমে যায়।’ পর্তুগীজ কিংবদন্তি লুই ফিগো বলেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো গোটা ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তার মতো খেলোয়াড়রা জানে, কিভাবে বড় ম্যাচগুলোয় গোল করে বা ভাল পারফর্ম করে দলকে সহায়তা করতে হয়। অবশ্যই রিয়াল মাদ্রিদকে তাড়াতাড়ি রোনাল্ডোর একজন যোগ্য বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে।’
×