ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদিত রড রফতানি হচ্ছে ভারতে, ইউরোপ-আমেরিকার বাজারেও প্রবেশের চেষ্টা চলছে

স্টিল জায়ান্ট বিএসআরএম প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের বৃহৎ বিলেট কাস্টিং প্লান্ট

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

স্টিল জায়ান্ট বিএসআরএম প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের বৃহৎ বিলেট কাস্টিং প্লান্ট

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দেশে ইতোমধ্যে স্টিল জায়ান্ট হিসেবে পরিচিতি লাভকারী বিএসআরএম (বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস গ্রুপ) গত ৯ অর্থবছরে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি জাতীয় রাজস্ব কোষাগারে ভ্যাট, কাস্টম ডিউটি, বিদ্যুত, গ্যাস, আয়কর খাতে যোগান দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছে। বিএসআরএম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৩টি। এগুলো হচ্ছে বিএসআরএম স্টিলস লিঃ, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিঃ, বিএসএম আয়রন এ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিঃ, বিএসআরএম ওয়্যারস লিঃ, বিএসআরএম রি-সাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ, বিএসআরএম স্টিলস মিলস লিঃ, বিএসআরএম লজিস্টিকস লিঃ, বিএসআরএম ইস্পাত লিঃ, বিএসআরএম রিয়েল এস্টেটস লিঃ, বাংলাদেশ স্টিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিঃ, চিটাগং পাওয়ার কোম্পানি লিঃ, এইচ. আকবর আলী কোম্পানি লিঃ। ১৯৫২ সালে এ শিল্পগোষ্ঠীর গোড়াপত্তন চট্টগ্রামে। ছোট আকারে কর্ণফুলী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস নামে এর যাত্রা শুরু। মূলত লৌহজাত পণ্য নিয়েই এ শিল্পগোষ্ঠী গত দীর্ঘ প্রায় ৬৭ বছরে ধীরে ধীরে এগিয়ে বিশাল অবস্থানে এসে দেশের স্টিল জায়ান্টে পরিণত হয়েছে। এ শিল্পগোষ্ঠী ইতোমধ্যে দেশের বৃহৎ বিলেট কাস্টিং প্লান্ট প্রতিষ্ঠা করেছে। চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকায় অবস্থিত এ শিল্পের বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ১০ লাখ টন। এ প্রকল্প সংলগ্ন আরও একটি বিলেট উৎপাদন প্লান্ট প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, যা আগামী বছরের শুরুর দিকে উৎপাদনে যাবে বলে বিএসআরএম সূত্র জানিয়েছে। এর উৎপাদন ক্ষমতা হবে বছরে ৫ লাখ মেট্রিক টন। বিএসআরএম একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। দেশের শেয়ার মার্কেটে এর শেয়ার বিক্রি হয়ে থাকে। বিএসআরএম গ্রুপ দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুত ভোক্তাও বটে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিমাসে বিদ্যুত খাতে ৮০ কোটি টাকারও বেশি বিল প্রদান করে থাকে এই শিল্পগোষ্ঠী। এই শিল্পগোষ্ঠীর বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫২ সালে প্রথম স্টিল মিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে নির্মাণ খাতে লৌহজাত রড স্টিল প্রস্তুত কার্যক্রম শুরু করে। ’৮৭ সালে ৬০ গ্রেডের লোহার রড উৎপাদন শুরু করে, যা ইতোমধ্যে বহুল ব্যবহৃত। ১৯৯৬ সালে শুরু করে বিলেট তৈরির প্লান্ট শুরুতে এর নাম মেঘনা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিঃ (বর্তমানে স্টিল মেলটিং ওয়ার্কস) নামে পরিচিত। এটি বিএসআরএম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের সিস্টার কনসান্ড। ২০০৬ সালে স্বল্পমূল্যে নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ৮ মিলিমিটারের নিচে মাইক্রোরি ইনফোর্সমেন্ট অয়্যারস প্রস্তুত শুরু করে। ২০০৮ সালে এই গ্রুপ উৎপাদনে যায় ৫শ’ গ্রেডের স্টিলস বার্স, যা এক্সট্রিম ৫০০ ডব্লিউ নামে পরিচিত। ২০১০ সালে এ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে দেশের বৃহৎ বিলেট ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট। ২০১১ সালে এই শিল্প গ্রুপের উৎপাদিত রড বিদেশে রফতানি শুরু হয়। ২০১৫ সালে এই গ্রুপের নাসিরাবাদস্থ রোলিং মিলটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে নতুন রোলিং মিলস প্রতিষ্ঠা হয়, যার উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৮ লাখ টন। ২০১৬ সালে এই শিল্পগোষ্ঠী বিএসআরএম আলটিমা ও বিএসআরএম মেক্সিমা নামে বিশেষ রড তৈরি শুরু করে। বিএসআরএম গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলী। পেশাগত দিক দিয়ে যিনি একজন এফসিএ। সরকার তাকে সিআইপির মর্যাদা দিয়েছে। এই গ্রুপের শিল্পখাত ও জাতীয় কোষাগারে মোটা অঙ্কের রাজস্ব যোগানদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গ্রুপ চেয়ারম্যান ও এমডি আমীর আলী হুসাইন কর বাহাদুর খেতাব পেয়েছেন। শিল্প উন্নয়নে রাষ্ট্রপতি পদক, রফতানি খাতে গোল্ড ট্রফি, পরিবেশ রক্ষায় স্বীকৃতিস্বরূপ পরিবেশ পদক, আইসিএসবি ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড, এসএএফএ সার্টিফিকেট অব মেরিট, আইসিএবি ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড, রফতানি খাতে প্রধানমন্ত্রী পদক, স্টিল ক্যাটাগরিতে বেস্ট ব্র্যান্ড অব বাংলাদেশ পদক, শিল্প উন্নয়নে রাষ্ট্রপতি পদক, ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে ট্যাক্স কার্ড, বিভাগীয় এনভায়রনমেন্ট এ্যাওয়ার্ড, বেস্ট ইলেকট্রিসিটি কনজ্যুমার এ্যাওয়ার্ড, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এ্যাওয়ার্ড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড, সাপ্লাই চেইন রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট উইনার সনদ, বিএসসিইএ (বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন এক্সিলেন্স এ্যাওয়ার্ড) পদকসহ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হয়েছেন গ্রুপ চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলী ও প্রতিষ্ঠানটি। স্থায়ী, অস্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক মিলে এই গ্রুপের বর্তমান কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার । দেশে বর্তমানে রডের যে চাহিদা রয়েছে তার প্রায় ৩০ শতাংশ এককভাবে এ গ্রুপের উৎপাদিত পণ্য দিয়ে মেটানো হচ্ছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশে বর্তমানে রডের চাহিদা প্রায় ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। তন্মধ্যে সাড়ে ১৬ লাখ টনেরও বেশি রড এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত। পাশাপাশি এ গ্রুপের তৈরি রড বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। মূলত ভারতে এ গ্রুপের উৎপাদিত রড প্রতিনিয়ত রফতানি হয়ে যায়। গত তিন বছরে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩ হাজার ডলারের রড রফতানি হয়েছে ভারতে। এছাড়া এ গ্রুপটি বর্তমানে মিয়ানমার, মালদ্বীপ এবং ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে তাদের উৎপাদিত রড রফতানির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএসআরএম গ্রুপ চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলীর পূর্বপুরুষ এদেশে এসেছে ভারতের গুজরাট থেকে সেই ব্রিটিশ আমলে। বংশ পরম্পরায় এরা এ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যার অধিকাংশ চট্টগ্রামেই অবস্থিত। গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ও চট্টগ্রামের সদরঘাটস্থ আলী ম্যানশনে। শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে গ্রুপ চেয়ারম্যান আলী হুসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের পূর্ব পুরুষ এদেশে বসতি গড়ার পর থেকে স্থায়ীভাবে পরবর্তী বংশধর এ দেশের নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িত। তার মতে, বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগে শিল্প গড়ার অফুরান সুযোগ রয়েছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত তারা শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন। তবে আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতায় বেগ পেতে হয় বলেও জানান। সরকারের বিভিন্ন দফতরের চিঠি চালাচালির প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বিলম্বের কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে সময়ক্ষেপণ হয়, যা কখনও কাম্য নয়। বর্তমান সরকারের আমলে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু হয়েছে। তবে বিষয়টি আরও বেগবান করা ও তদারকির অপরিহার্যতা রয়েছে।
×