ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ তালিকা হস্তান্তর প্রস্তুতি সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১২ অক্টোবর ২০১৮

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ তালিকা হস্তান্তর প্রস্তুতি সম্পন্ন

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর মিয়ানমার থেকে যে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসবে তাদের কাছে এবার রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ একটি তালিকা হস্তান্তর করা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পাসপোর্ট অধিদফতর সেনাবাহিনীর সহায়তায় ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬৭৫ রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এ তালিকার বেশ বড় একটি অংশ মিয়ানমার পক্ষকে হস্তান্তর করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পূর্বে প্রস্তুতিমূলক বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ অক্টোবর মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল ৩ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইতোমধ্যে গঠিত দুটি দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের নীতি নির্ধারণ নিয়ে এই বৈঠক হবে। প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তাদের উখিয়া, টেকনাফে আশ্রয় শিবির পরিদর্শনের কথাও রয়েছে। এর আগে গত মে মাসে প্রত্যাবাসন সম্পর্কে করণীয় নিয়ে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে যোগ দিতে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিল। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এবারের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন নিজ দেশে ফিরে গেলে তাদের কি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ইতোপূর্বে দু’দফায় ৮ হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দিয়েছিল। সে তালিকা থেকে তারা মাত্র ৮৭০ জনকে ফিরিয়ে নেয়ার পক্ষে মত দিয়ে ফিরতি বার্তা পাঠায়, যা বাংলাদেশ পক্ষ মেনে নেয়নি। এদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিয়ানমার সরকার, এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি এবং কতিপয় শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা দেশটির জন্য বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু না করলে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, মিয়ানমার পক্ষ রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ পর্যন্ত যেসব বক্তব্য দিয়েছে তা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তো নয়ই এমনকি নিজ দেশের বিভিন্ন মহলেও ইতিবাচক কোন সমর্থন পায়নি। একটি প্রমাণিত সত্যকে ঢাকা দিতে গিয়ে মিয়ানমারকে বিশ্বজুড়ে তোপের মুখে রয়েছে। বিষয়টি মিয়ানমার সরকার এখন হাড়ে হাড়ে অনুধাবন করছে। এ অবস্থায় আগামী ২৮ অক্টোবর মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর বেশ গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণে রয়েছে বিভিন্ন মহল। অপরদিকে, ভারতে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ভোগ করে যে ৭ রোহিঙ্গাকে গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে তাদের সকলকে সে দেশে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে বলে ওপারের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ভারত সরকার আরও ২৩ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। এ ২৩ রোহিঙ্গা বর্তমানে আসামের শিলচরে বন্দী জীবন যাপন করছে। উখিয়া টেকনাফের আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এসব বিষয় চাউর হয়েছে। অনেকে ফিরে যাওয়ার আশায় বুক বাঁধছে। তবে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সদস্যরাও এর বিরোধিতায় তৎপর রয়েছে। এছাড়া কিছু রোহিঙ্গা প্রতিনিয়ত আশ্রয় শিবির ছেড়ে পালিয়েও যাচ্ছে। বুধবার ৭ রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে আটক করেছে সাতক্ষীরা পুলিশ। এদের এলাকার আবাদের হাট থেকে আটক করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। আটককৃতরা হচ্ছে কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে নিবন্ধিত নুর বেগম (৪৫), রাশেদা বেগম (৫), জান্নাত আরা (৩) পুত্র মোঃ সাগর (১)। এছাড়া হাসিনা বেগম (২২), তার কন্যা রোজিনা বেগম (৪) এবং অপর এক বৃদ্ধা উসুন জামান (৭৫)। এরা ভারতে পাড়ি দেয়ার লক্ষ্যে সাতক্ষীরা পর্যন্ত পৌঁছে ধরা পড়ে যায়। উখিয়া-টেকনাফ শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬৭৫ হলেও এর বাহিরে রয়ে গেছে আরও লক্ষাধিক। বর্তমানে নিবন্ধন কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৬ শতাধিক রোহিঙ্গা বন্দী রয়েছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার অপরাধে এরা জেল খাটছে। বিশেষ করে অনেকে ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে। শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলেই রয়েছে ৪ শতাধিক। কক্সবাজার জেল সুপার বজলুর রশিদ জানিয়েছেন, ইয়াবা, মাদক, অস্ত্র, হাঙ্গামা, খুন, ডাকাতি ও নানা অপরাধজনিত মামলায় এসব রোহিঙ্গা জেল খাটছে। এর আগে অনুরূপ অপরাধে সাজা খেটে বেশকিছু রোহিঙ্গা জেলমুক্ত হয়েছে। কিন্তু এরা রয়ে গেছে এ দেশেই। মিশে গেছে স্বজনদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন লোকালয়ে। অথচ, এদের মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করাই ছিল যৌক্তিক। ভারতে যেসব রোহিঙ্গা জেল খেটে বের হচ্ছে এদের সেখানে থাকার কোন ধরনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাদের মিয়ানমারের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারক মহল কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা দেশেরই কল্যাণ বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে মত ব্যক্ত করা হয়েছে।
×