ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন মেলা উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী ;###;অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়ক ॥ পরীক্ষার্থীদের শেখ হাসিনার উপহার ;###;দশ ভাষায় ভাষা শিক্ষার এ্যাপস

ডিজিটাল যুগে কেউ পিছিয়ে থাকুক, সেটা চাই না

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ অক্টোবর ২০১৮

ডিজিটাল যুগে কেউ পিছিয়ে থাকুক, সেটা চাই না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ স্লোগানে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জেলা ও উপজেলা সদর দফতরে তিন দিনের উন্নয়নমেলা শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের টানা দশ বছরের উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের কাছে তুলে ধরতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় দর্শনার্থীরা তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন। মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় পাওয়া যাচ্ছে জরুরী পাসপোর্ট। বিআরটিএ ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রদান, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন সেবা দিচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন মেলায় আগত সব ধরনের দর্শনার্থী। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মেলার উদ্বোধন করেন। ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স প্রচারের মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এবার ঢাকায় আগারগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা মাঠে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরই উন্নয়ন মেলায় উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকায় প্রায় ৭০ দফতর, অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় উন্নয়ন মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়ন যেন স্থায়ী হয়, সে জন্যই উন্নয়ন মেলার আয়োজন। এ মেলাকে কাজে লাগিয়ে তরুণরা নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারবে। দেশের শিক্ষা, প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য। কারও মুখাপেক্ষি হয়ে নয়, আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই থিম সং পরিবেশন করা হয়। এছাড়া গত সাড়ে ৯ বছরে উন্নয়নের একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। মেলা উদ্বোধনের পর বরগুনা জেলার আমতলী, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট, নড়াইল জেলা ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকমুক্ত হয়ে তরুণরা যাতে গড়ে উঠতে পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতিটি শিশু যেন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে বড় হতে পারে, সে পরিবেশ নিশ্চিত করতেই কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করবÑ এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতা যে দেশ দিয়ে গেছেন, যে রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন, সেই রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষ, এমনকি গ্রামের তৃণমূলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। তাদের জীবন মান উন্নত করা। তাদের একটা সুন্দর জীবন উপহার দেয়া। শুধু বর্তমানে যারা আছেন তারা নয়, আমাদের তরুণ প্রজন্ম বা আগামী দিনে যত নাগরিক হবে, যে শিশুটি জন্ম নেবে, সে-ও যেন সুন্দর একটা পরিবেশে জন্ম নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা আমাদের লক্ষ্য ও চাওয়া। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা প্রতিটি জেলা, উপজেলায় স্কুল-কলেজ সরকারীকরণ করে দিচ্ছি। যেসব এলাকায় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না, সেসব এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। এছাড়া জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। যাতে ঘরের ভাত খেয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার ফল পর্যালোচনা করলাম। সেখানে দেখলাম, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও কয়েকটি বিষয়ে আমরা একটু পিছিয়ে আছি। এই আধুনিক যুগে বা ডিজিটাল যুগে কেউ পিছিয়ে থাকবে, সেটা আমরা চাই না। সেই জন্য এবার আমরা যে উন্নয়ন মেলাটা করছি, সেখানে আমরা একটি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি, সেটা হলো এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ক ‘অনলাইন ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা’। অনলাইনের মাধ্যমে এসব বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারবে পরীক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে, শুধু ইংরেজিই নয়, প্রায় ১০ ভাষায় একটি এ্যাপস তৈরি করে দিয়েছি, যা অনলাইনে পাওয়া যাবে এবং যে কোন ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। কেউ যদি বিদেশে চাকরি করতে চায়, তাহলে ওই বিষয়ে সে শিক্ষা নিতে পারবে। এদিকে উন্নয়ন মেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সাফল্য, রূপকল্প ২১ ও ’৪১-এর মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, তথ্যপ্রযুক্তি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প এবং দেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা, মহান মুক্তিযুদ্ধ, গণমাধ্যমসহ দেশের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান এবং বর্তমান সরকারের সময়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও সাফল্যের বিষয়ে মেলায় জনগণকে অবহিত করা হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক আয়োজনে জেলা উপজেলার বিভিন্ন সরকারী দফতর, সংস্থা, ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সারাদেশে। গণযোগাযোগ অধিদফতর ৬৪ জেলায় জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে সরকারের সাফল্য চিত্র তুলে ধরছে। বাংলাদেশ বেতারের ১২টি আঞ্চলিক অফিসসহ মন্ত্রণালয়াধীন সকল দফতর বা সংস্থা তাদের উন্নয়ন কার্যক্রম মেলায় তুলে ধরবে। এছাড়াও যে সকল দফতর বা সংস্থার বই অথবা সচিত্র প্রকাশনা রয়েছে তারা মেলায় সেগুলো বিক্রি অথবা বিনামূল্যে বিতরণ করবে। এবারের উন্নয়ন মেলায় মোট ৩৩০ স্টল রয়েছে। এসব স্টলের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৬, কৃষি মন্ত্রণালয় ১৬, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১০টি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নয়টি স্টলে কর্মকান্ড প্রদর্শন করা হচ্ছে। চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা উপলক্ষে ৪ অক্টোবর দুপুরে ইআরডিতে বিদেশী কূটনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। পরে তারা মেলাও পরিদর্শন করেন। এছাড়া জাতীয় উন্নয়ন মেলার তিনটি সেমিনার হবে। উন্নয়ন মেলায় সরকারী সেবা পেতে ভিড় ॥ উন্নয়ন মেলায় তাৎক্ষণিক সেবা পেতে সকাল থেকেই সাধারণ মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেলায় সরকারী বিভিন্ন দফতর তাদের সেবার তথ্য দিচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবেও সেবা পাওয়া যাচ্ছে। বিআরটিএ ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিসের মাধ্যমে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রদান, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন সেবা দিচ্ছে। বিআরটিএর সেবা পেতে রীতিমতো উপচে পড়া ভিড়। একইভাবে মেলায় জরুরী পাসপোর্টও দেয়া হচ্ছে। কেউ মেলা থেকেই একদিনের মধ্যেই পাসপোর্ট নবায়ন করে নিতে পারছেন। তবে এজন্য বাড়তি ফি দিতে হবে। মেলায় ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা।
×