ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী চাকরির সকল গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবি

কোটা বাতিলের প্রতিবাদ এবার রাজপথে

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ৪ অক্টোবর ২০১৮

 কোটা বাতিলের প্রতিবাদ এবার রাজপথে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ চাকরির কোটা বাতিলের পর এবার তা পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ কমান্ড। সরকারী চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রতিবাদে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা। বুধবার রাত সাড়ে আটটা থেকে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে এ সময় তারা সড়ক অবরোধও করেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবিতে শনিবার বিকেলে সমাবেশ করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। বুধবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এএসএম আল সনেট বলেন, আমরা কোটা বাতিলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অবস্থান নিয়েছি। আমরা চাই, সরকারী চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হোক। এ সময় তারা ‘মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত মানি না, মানব না’, ‘বঙ্গবন্ধুর উপহার, কোটা মোদের অধিকার’সহ নানা স্লোগান দেন। এদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী শাহবাগে আসেন। তিনি বলেন, কতটুকু কোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, এটা বোঝাতে পারলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের দাবি মেনে নেবেন। আপনারা আমাদের আদর্শিক সহযোদ্ধা। আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারা আন্দোলন করুন, তবে সড়ক অবরোধ করে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলবেন না। আপনারা যৌক্তিক অনুপাত তুলে ধরুন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের আগেই গত কয়েকদিন ধরে কোটা বহালের দাবিতে নানা কর্মসূচী পালন করে আসছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড। মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পর রাত সাড়ে আটটার দিকে সংগঠনটির প্রায় এক শ’ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন। তারা সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। ফলে দেখা দেয় যানজট। কোটা বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- কোটা পর্যালোচনা কমিটির প্রতিবেদন বাতিল, বিসিএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়ন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, স্বাধীনতাবিরোধীদের বংশধরদেরও সরকারী চাকরি থেকে বহিষ্কার, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কট‚ক্তিকারীদের বিচার এবং ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের শাস্তি। শাহবাগে তাদের অবস্থানের মধ্যে কোটা বহাল রাখার দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছে ‘মুক্তিযোদ্ধার পরিবার’ ব্যানারে আরেকটি সংগঠন। এই সংগঠনের মুখপাত্র মেহেদী হাসান বলেন, আমরা চাই বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকে কোটা ব্যবস্থা বহাল হোক। এর আগে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছেন, কোটার পক্ষে জোরালো আন্দোলন হলে নতুন সিদ্ধান্ত আসতেও পারে। সকল গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবি ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করে সরকারী চাকরিতে সকল গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। একই সঙ্গে ৩০ শতাংশ কোটা প্রিলিমিনারি থেকে তা বাস্তবায়নেও দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটি। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে হতাশ ক্ষুব্ধ আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের দুটি অংশই। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জাতির জনকের হাত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যে সুবিধা পেয়েছে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে তা বাতিল হতে পারে না। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল চেয়ে একটি অংশের সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন এবং ঢাকা মহানগর সভাপতি জোবায়দা হক অজন্তা এক বিবৃতিতে বলেন, মন্ত্রিসভার আজকের সিদ্ধান্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের হৃদয়ে আঘাত করেছে। কোটা বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশাসন গড়ে তোলার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। নেতৃবৃন্দ বলেন, জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকতে পারে না। বৈষম্য দূর করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে দেশকে শত্রæমুক্ত করেছেন। আর আজ তাদের পরবর্তী প্রজন্মরাই চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তা একদিকে যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চরম অপমানের অপর দিকে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের সন্তানরা মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাথার ওপর বসে নির্লজ্জ নৃত্য করবে, তা দেখার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জাতির পিতার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেনি। জীবন সায়াহ্নে মুক্তিযোদ্ধাদের এই চরম অপমান কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সাধারণ ছাত্র নামধারী কিছু দিকভ্রান্ত যুবকের দাবি মেনে নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী এই সুপারিশের ফলে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়েছে। এর আগে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মর্যাদা সমুন্নত রাখার বিষয়ে আন্তরিক ও সচেতন থাকলেও প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একশ্রেণীর স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকর্তা প্রতিটি পদক্ষেপে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে। সম্প্রতি সচিব কমিটির সুপারিশ এরই একটি নতুন সংস্করণ। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীরা অনেকদিন থেকে এটাই চেয়েছিল যে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা যাতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না পারে। তারা যাতে সারাজীবন পিয়ন, দারোয়ান ও সুইপারের মতো নিম্নপদে চাকরি করে। সংগঠনের সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কন্যা জোবায়দা হক অজন্তা, সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান শাহীন, কোষাধ্যক্ষ ও দফতর সম্পাদক আহমাদ রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের দফতর সম্পাদক রাসেল আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অনলাইন কমান্ডের সভাপতি মোঃ নাজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক লামিয়া খানম, প্রচার সম্পাদক মোঃ স্বপন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোঃ সোহাগ ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম খালেদুজ্জামান ফারসিম। বক্তারা বলেন, ’৭৫ সালে জাতির পিতা হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০১ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবারও ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের পর ২৯ বছর কোটায় কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকরি হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী ২৯ বছর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিষ্পেষিত হয়েছে। কোটা সংস্কার বা বাতিল করার আগে এই ২৯ বছরের হিসাব দিতে হবে। এ ছাড়া এই ৩০ শতাংশ কোটা তাদের আত্মমর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে হলেও এই কোটা বহাল রাখা জরুরী। এদিকে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করে সরকারী চাকরিতে সকল গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অপর সংগঠন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সংগঠনের সভাপতি হুমাযুন কবির তার প্রতিক্রিয়ায় হতাশার সুরে বলেছেন, জাতির জনকের হাত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যে সুবিধা পেয়েছে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে তা বাতিল হতে পারে না। আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর এখনও ভরসা করি। তিনি অবশ্যই বিষয়টি দেখবেন।
×