ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরাজয় মেনে নিয়েছে সরকার ॥ অভিনন্দন ভারতের

মালদ্বীপে বিরোধী নেতা জয়ী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মালদ্বীপে বিরোধী নেতা জয়ী

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী দলীয় নেতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ বিজয়ী হয়েছেন। সোমবার ঘোষিত ফলে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের জন্য এটি একটি বিস্ময়কর পরাজয়। প্রচার পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, ইয়ামিনের মতো লৌহমানবের বিরুদ্ধে জনমনে অসন্তোষ ছিল। দেশটির সরকার ইব্রাহিমের বিজয় মেনে নিয়েছে। ইব্রাহিমের বিজয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারত নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক শক্তির বিজয় বলে অভিহিত করেছে। শ্রীলঙ্কাও তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জনগণকে সম্মান জানাতে ইয়ামিনের প্রতি আহ্বান জানায়।-খবর এএফপির সোমবার সকালে নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, জনপ্রিয় ভোটের ৫৮.৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন সোলিহ। সর্বমোট এক লাখ ৩৪ হাজার ৬১৬ ভোট পেয়েছেন তিনি। বুথফেরত জরিপেও তিনি এগিয়ে ছিলেন। আর ইয়ামিন পেয়েছেন ৪১.৭ শতাংশ। দ্বীপপুঞ্জজুড়ে বিরোধী দলের সমর্থকরা সোলিহের মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি) হলুদ পতাকা হাতে এবং রাস্তায় নেচে-গেয়ে বিজয় উদ্যাপন শুরু করেছেন। ফল ঘোষণার পর ইয়ামিনের কাছ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। সোলিহ বিরোধীজোটের সমর্থনে ইয়ামিনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেষ্টা করেছিলেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকে নির্বাচনের সঠিক খবর পরিবেশন ও প্রতিবেদন করার জন্য কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় রাখা হয়েছিল। এজন্য সরকার ডিক্রিও জারি করেছিল। রবিবারের নির্বাচনে অন্যকোন প্রার্থী অংশ নিতে পারেন নি। প্রধান বিরোধী মতাবলম্বী প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে ইয়ামিন কারাগারে পুরেছেন নয়তো জোর করে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এর আগে রবিবার রাতেই ইয়ামিনকে পরাজয় মেনে নেয়ার কথা জানিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানিয়েছিলেন সোলিহ। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, আমি ইয়ামিনকে জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং সংবিধান অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে ও নির্বিঘেœ ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি অবিলম্বে রাজনৈতিক বন্দীদের ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়ার সফল সমাপ্তিকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ বিজয়ী হয়েছে। আমরা আন্তরিকভাবে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং আশা করি নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিশ্চিত করবে। সরকারী হস্তক্ষেপ ও বিরোধী দলীয় নেতাদের কারচুপির আশঙ্কার মধ্যে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাকে গণতান্ত্রিক শক্তির বিজয় উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নয়াদিল্লী মালের সঙ্গে ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতির অধীনে তার অংশীদারিত্বকে ঘনিষ্ঠ করতে উন্মুখ হয়ে আছে। এই নির্বাচন শুধু মালদ্বীপের গণতান্ত্রিক শক্তির বিজয়ই নয় বরং গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের দৃঢ় অঙ্গীকারকেও প্রতিফলিত করেছে। আমাদের ‘নেবারহুড ফার্স্ট পলিসি’ পালনের ক্ষেত্রে ভারত মালদ্বীপের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য উন্মুখ রয়েছে। ইয়ামিন ব্যাপকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তার প্রায় সব প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন নয়তো নির্বাসিত করে রেখেছিলেন। নির্বাচনের আগের দিন রাতে প্রধান বিরোধী দল এমডিপির সদর দফতরে পুলিশ ‘ভোট কেনাবেচা ও ভোট প্রক্রিয়া প্রভাবিত করা’ ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযান চালায়। তবে কাউকেই আটক করা হয় নি। এমডিপি দলের প্রধান মোহাম্মদ নাশিদ বলেন, ভোটের মাধ্যমেই দেশ গণতন্ত্রের দিকে ফিরে যাবে। পরাজয় ছাড়া ইয়ামিনের সামনে আর কোন বিকল্প নেই। তার চারপাশে এমন কোন লোক নেই যারা তাকে সমর্থন করবে ও তার হয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে। ২০০৮ সালে মালদ্বীপে নতুনভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট হন নাশিদ। এই নির্বাচনকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। দেশদুটি ভারত মহাসাগরীয় দেশটিকে প্রভাবিত করার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভোটগ্রহণ শুরু হবার কিছুক্ষণ পরই ইয়ামিন রাজধানী মালের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন।
×