ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ডাক্তার ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট প্র্যাকটিসে, রোগীর দায়িত্ব নার্স-আয়াদেরই

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডাক্তার ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট প্র্যাকটিসে, রোগীর দায়িত্ব নার্স-আয়াদেরই

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২৪ সেপ্টেম্বর ॥ দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফাতেমা বেগম নামে এক প্রসূতির গর্ভের সন্তান দায়িত্বরত চিকিৎসকের পরিবর্তে দুই নার্স ও এক আয়া মিলে টেনে-হিচড়ে দ্বিখ-িত করে অর্ধেকাংশ বের করে আনার খবর সোমবার দৈনিক জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। বের হয়ে আসে ওই হাসপাতালের আরও নানা চমকপ্রদ কাহিনী। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা সদরের সরকারী ওই হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসকই দিনে-রাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকায় রোগীদের দেখভাল, প্রসূতির সন্তান প্রসবসহ নানা জটিল ও কঠিন দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ নার্স ও আয়ারা। এদিকে ওই রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহসানুল হক মিলুকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হলেও গণমাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ খবর প্রকাশের পর ওই হাসপাতালের গঠন করা তদন্ত কমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয় এবং জেলা সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে সোমবার ৫ সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জানা গেছে, দেবিদ্বার উপজেলা সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২২টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন চিকিৎসক ওই হাসপাতালে কর্মরত আছেন। ৩ জন ডেপুটেশনে থেকে ওই হাসপাতাল হতে সরকারী বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন। ডেপুটেশনে থাকা জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ তাইফুর রহমান কুমিল্লা সদর হাসপাতালে, গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ মির্জা আসাদুজ্জামান ঢাকা ক্যান্সার হাসপাতালে ও সার্জারি বিভাগের ডাঃ সাদিয়া আফরোজ ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ডেপুটেশনে আছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, দেবিদ্বার উপজেলায় ১৩টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ১০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। ওইসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের চাহিদা পূরণ হয় সরকারী ওই হাসপাতাল থেকে। দিনে-রাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত-ক্লান্ত চিকিৎসক অনেক সময় সরকারী হাসপাতালে রোগীর প্রতি মনযোগী হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ সময় সেবা নিতে আসা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীদের কাছে একমাত্র ভরসা হলো সাধারণ নার্স ও আয়ারা। শনিবার রাতে ওই হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কর্তব্য অবহেলার কারণে দুই নার্স ও আয়া সঙ্কটাপন্ন প্রসূতির গর্ভের সন্তান খালাস করতে গিয়ে এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে বলে গতকাল সোমবার দিনভর তা ছিল মানুষের মুখে মুখে। এদিকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ডেপুটেশনে থাকা চিকিৎসক ডাঃ তাইফুর রহমান নগরীর ঝাউতলা এলাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রায়ই প্রাইভেট প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকেন বলে জানা গেছে। দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আহাম্মদ কবির জানান, আমার করা তদন্ত কমিটি দুই নার্স ও আয়াকে নোটিস প্রদান করেছে, আজ মঙ্গলবার তাদেরকে তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া তদন্ত কমিটি থেকে ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক আহসানুল হক মিলুকে বাদ দিয়ে শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ আশরাফুল ইসলামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, হাসপাতালের চিকিৎসকরা সরকারী দায়িত্ব পালনের পর প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের দিনে-রাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিসসহ সরকারী হাসপাতালে রোগীর প্রতি মনযোগী না হওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তবে তিনি নিজেও সরকারী দায়িত্ব পালনের পর পাশর্^বর্তী চান্দিনা উপজেলার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্র্যাকটিস করেন বলে জানান। এদিকে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মুজিবুর রহমান সোমবার জেলার তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। রাতে তিনি জানান, এ ঘটনায় দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন মহিলা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ী অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×