ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দলছুটদের বলয়ে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 দলছুটদের বলয়ে  বিএনপি

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ ওরা সকলেই দলছুট। গঠন করেছেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। সেই ঐক্য প্রক্রিয়ার বলয়ে আশ্রয় নিল বিএনপি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন চলছে এক ধরনের নাটক। সে নাটকে অভিনয় শুরু করেছেন দলছুটরা। এদের নীতি আদর্শ নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ জনমনে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম আকর্ষণ ড. কামাল হোসেন ও ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী। প্রধান এই দুই রাজনীতিক দলছুট। তাদের সঙ্গে অন্য যারা রয়েছেন তারাও সকলে দলছুট। সে দলছুটদের বলয়ে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছে বিএনপি। এই দলছুটরা নতুন আঙ্গিকে আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা দিয়েছে গত শনিবার। রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশ্লেষকদের আলোচনায় আসছে এই দলছুটরা রাজনীতিতে যেমন সার্বজনীন নয়, তেমনি নীতি আদর্শও জনগণের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলনের পক্ষে নয়। এরা অতীতে ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছেন। ক্ষমতা থেকে ছিটকে গিয়ে রীতিমতো দলছুট হয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এদের রাজনীতি মূলত গণমানুষের পক্ষে না শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ বিরোধিতা তা নিয়েও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার শীর্ষস্থানীয় নেতা আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে গিয়ে হয়েছেন গণফোরাম নেতা। আর বদরুদ্দোজা চৌধুরীও বিএনপি থেকে বিতাড়িত হয়ে বিকল্প ধারার নেতা। তাদের সঙ্গে অন্য যারা রয়েছেন তাদের বিষয়টি আলোচনায় তেমন প্রাধান্য পাচ্ছে না। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে বহুল একটি কথা চালু রয়েছে। সেটি হচ্ছে সাধারণ মানুষের কল্যাণকর বিষয়ের চেয়ে এদের রাজনীতি একটি দলের বিরুদ্ধে। সেটি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক অঙ্গনে যে রাজনীতি চলছে তা আওয়ামী লীগ বনাম এন্টি আওয়ামী লীগারদের। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নাম দিয়ে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনসহ বিভিন্ন দলছুট নেতাদের সমন্বয় ঘটেছে এরা মূলত সকলে এন্টি আওয়ামী লীগ ঘরানার। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার করা যায় সেটাই ওদের নীতি ও আদর্শ হিসেবে প্রতিভাত। আগামী নির্বাচন যখন আসন্ন। আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত। ঠিক তখনই এরা কথিত বড় ঐক্যের নাম দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। রাজনীতির নাট্যমঞ্চে এন্টি আওয়ামী লীগারদের নাটকীয় ভূমিকা এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। তবে এদের তৎপরতা সফল না ব্যর্থ হবে তা বলে দেবে একমাত্র ভবিষ্যত। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ এখন পুরোপুরিভাবে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগের পক্ষে ইতোমধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে নির্বাচনে কারা আসবে আর আসবে না সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে এ দলের নেতৃত্বাধীন সরকার বদ্ধপরিকর। ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে আছে। জামায়াতকে নিয়ে জোট করে অতীতে ক্ষমতায় ছিল। যা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য কখনও সুখকর বলে আবির্ভূত হয়নি, হবেও না। ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা জামায়াত ছাড়ার শর্ত দেয়ার পর বিএনপি এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোন বক্তব্য এখনও দেয়নি। তবে গত শনিবার ঐক্য প্রক্রিয়া আহূত সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাদের অংশগ্রহণ এবং পরবর্তীতে আগামী অক্টোবর থেকে বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ ও সরকারবিরোধী আল্টিমেটাম ঘোষিত হয়। গণমাধ্যমের সুবাদে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন দলছুটদের এ সমাবেশ ও তাদের হুমকি ধমকির কথা জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। তবে সাধারণ মানুষ প্রক্রিয়া যেমন বোঝে না তেমনি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দলছুটদের নিয়েও তেমন কিছু বোঝে না। তবে এতটুকু বুঝতে সক্ষম যে ওরা সকলে এন্টি আওয়ামী লীগার। সঙ্গত কারণে বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে আগামী নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগ বনাম দলছুটদের লড়াই। এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়টি হচ্ছে ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন অতীতে বিএনপি রাজনীতির ধারক বাহক। এ দলটি তাকে রাষ্ট্রপতি পদেও অধিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু হীন স্বার্থের কারণে এ দলটিই তাকে রীতিমতো ডাস্টবিনে ছুড়ে দিয়েছে। দলছুট হয়ে তিনি গঠন করে বিকল্প ধারা। রাজনীতিতে সব কথা শেষ নেই বলে একটি কথা বহুলভাবে চালু রয়েছে। বিষয়টি আবার প্রমাণ হলো এই বদরুদ্দোজাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বলয়ে বিএনপির অংশগ্রহণ। আরও আলোচিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এদের কখনও এককভাবে লড়াই করার শক্তি সামর্থ্য যেমন ছিল না বর্তমানেও নেই। তাই আওয়ামী লীগ বিরোধী মনারা এখন এক ছাতার নিচে অবস্থান নিয়েছে। আর দলছুটদের বলয়ে ঢুকল বিএনপিও। আবার এটাও সত্য যে, বিএনপিও একটি দলছুটদের দল। যার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনিই বিভিন্ন দল থেকে সুবিধাবাদীদের ভাগিয়ে এনে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন বহুমাত্রিক প্রক্রিয়ায়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এখন দেশের মানুষ অতীতের চেয়ে বহুগুণ সচেতন। অন্য কিছুর চেয়ে রাজনীতি নিয়ে বেশি সচেতন। এদেশের জন্ম নেয়ার ক্ষেত্রে বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে যাদের প্রকাশ্য বা নেপথ্য সম্পর্ক রয়েছে এমনদের সঙ্গে জোট বেঁধে যারা রাজনীতির নাটকে অভিনয়ে নেমেছেন, তাদের অভিনয় সাধারণ মানুষকে আদৌ সন্তুষ্ট করতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
×