ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক রোজগার্ডেন কিনল সরকার

প্রকাশিত: ০৭:২২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঐতিহাসিক রোজগার্ডেন কিনল সরকার

দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে স্থান থেকে এর যাত্রা শুরু করেছিল সেই ঐতিহাসিক রোজগার্ডেন কিনে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বিকেলে গণভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সম্পত্তির বর্তমান মালিক ও তার সন্তানদের কাছ থেকে এ সম্পত্তি ক্রয়ের রেজিস্ট্রিকৃত দলিল গ্রহণ করেছেন। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস ১৯৩১ সালে পুরান ঢাকার টিকাটুলির কে এম দাস লেনে ২২ একর জমির ওপর এটি নির্মাণ করেন। খবর বাসসর। ‘সরকারী ক্রয় আইন’ অনুযায়ী ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে বর্তমান মালিকের কাছ থেকে এ স্থাপনাটি ক্রয় করা হয়েছে। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত ৮ আগস্ট রোজগার্ডেন ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এটি বর্তমানে প্রতœতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। চলতি অর্থবছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাফিজুর রহমান সভা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘সরকার ‘সরকারী ক্রয় আইন’ অনুযায়ী বাড়িটি ক্রয় করছে।’ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বর্তমান মালিকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোজগার্ডেনের মূল্য ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী রবিবার এ ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ক্রয়ের রেজিস্ট্রিকৃত দলিল গ্রহণ করলেন। এ সময় তিনি একটি চেক এবং ঐতিহাসিক ভবনের বিনিময়ে রোজগার্ডেনের মালিককে নগরীর গুলশানে ২০ কাঠা জমিসহ একটি একতলা ভবন বিক্রির একটি রেজিস্ট্রিকৃত দলিল হস্তান্তর করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী রোজগার্ডেনকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করার জন্য এক হাজার এক টাকা টোকেন মূল্যে এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধানমন্ত্রী কাছ থেকে বাড়িটির দলিল গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকার ইতিহাস তুলে ধরতে ঐতিহাসিক রোজগার্ডেনকে জাদুঘরে পরিণত করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, রোজগার্ডেনের একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। কেননা, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এখান থেকেই যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেন, এই দলের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। এই ঐতিহাসিক ভবনটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন স্থাপনা নষ্ট হতে দেয়া যায় না। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এর আগে নগর ভবনে একটি জাদুঘর স্থাপন করেছে। তবে এখন সেই জাদুঘরটি রোজগার্ডেন ভবনে স্থানান্তর করা হবে। তিনি ভবনটির মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে এটি সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সচিব মোঃ শহিদুল্লাহ খন্দকার, সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গ প্রতিনিধি দলের সাক্ষাত ॥ সরকার ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাতে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তৃতীয় লিঙ্গের আবিদা ইসলাম ময়ূরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সংসদ ভবন কার্যালয়ে সাক্ষাত করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এই সাক্ষাতকে অত্যন্ত আবেগঘন হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেন, ময়ূরী অত্যন্ত আবেগপূর্ণ কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাকে তার (শেখ হাসিনার) নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করার অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তুমি আমার সন্তান।’ এই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ‘সিরি সমাজ কল্যাণ সংস্থা’-এর আওতায় জামালপুর জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের কল্যাণে কাজ করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানায়। ময়ূরী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘অতীতে কোন সরকার তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের কল্যাণে কাজ করেনি। প্রধানমন্ত্রী তাদের সমাজের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার সরকার তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের জন্য বিভিন্ন সেবামূলক কাজ হাতে নিয়েছে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকার অধিকার নিশ্চিত করেছে।
×