জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বিভিন্ন মামলায় লঘু অপরাধে কারাগারে আটক বিচারাধীন আসামিদের মুক্তি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে যারা নিজের অপরাধ স্বীকার করবেন তাদের বিশেষ আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্তি দেয়া হবে। রবিবার এমন একশ’ ৪২ আসামিকে রবিবার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি শেষে মুক্তি পেয়েছেন ৩৬ জন ও পরবর্তী তারিখে আদালতে হাজির হবেন এমন আসামি মুক্তি পেয়েছেন ১শ’ ৬ জন। এ সব আসমির বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে উপস্থাপনের পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় আইনানুগ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর তাদের আদালত মুক্তি দিয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী ও আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক।
এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন যাবত লঘু অপরাধে আটক বিচারাধীন আসামিদের যাতে কারাগারে থাকতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদালতে এসব বন্দীদের তথ্য তুলে ধরে। এরপরই আদালত বিচার শেষে তাদের মুক্তি দিয়েছে। একইসঙ্গে দেশের সকল কারাগারে আটক এমন আসামিদেরও একই প্রক্রিয়ায় মুক্তি দেয়া যায় কি না তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের ৬৮ কারাগারে ৩৬ হাজার ৬শ’ ১৪ জন বন্দী ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৭ হাজার ৬শ’ ৭৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। এর ফলে কারাভ্যন্তরে প্রতিনিয়তই নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এদের মধ্যে ৭০ ভাগের বেশি আসামিই বিচারাধীন হিসেবে আটক রয়েছেন। কারাসূত্র জানায়, কারাগারে আটক বন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাদকাসক্ত মামলার আসামি আটক রয়েছেন। মোট বন্দীর প্রায় ৪৫ ভাগ বন্দীই মাদক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মামলায় আদালতের নির্দেশে আটক রয়েছেন।
এর আগে কারা কর্তৃপক্ষ সাজাপ্রাপ্ত আসামির চেয়ে বিচারাধীন আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় ও ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি বন্দী আটক থাকায় কারাভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়। এতে বিচারাধীন আসামিদের মধ্যে শুধু মাদক মামলায় আটক আসামিই মোট আসামির ৩৭ শতাংশ বলে উল্লেখ করে। চিঠিতে বলা হয়, আইনানুযায়ী এসব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর সাজা হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এদের অনেকেই সাজার চেয়ে বেশিদিন কারাগারে আটক রয়েছেন বলা হয়। তাই চিঠিতে সুষ্ঠু কারা ব্যবস্থাপনার স্বার্থে অতি দ্রুত এসব আসামির সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে বিশেষ আদালতের মাধ্যমে এসব আসামির বিচার করা যায় কি না এ জন্য উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রদান করা হয়। বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব বিবেচনাপূর্বক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতে যারা লঘু অপরাধে দীর্ঘদিন আটক রয়েছেন তাদের বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কাজ শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক এসব আসামির বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকেও অবহিত করা হয় বলে জানা গেছে।
কারাসূত্র জানায়, এরপর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে সর্বোচ্চ তিন মাস থেকে ৬ মাস বা তার কিছু বেশি শাস্তি হতে পারে এমন আসামির একটি তালিকা তৈরি করা হয়। তালিকায় আসামিদের মামলার কার্যবিবরণী অনুযায়ী বিচারিক প্রক্রিয়ায় আইনানুগ সকল কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন শেষে এসব আসামিকে মুক্তি দেয়া হয়। কারাসূত্র জানায়, বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ৩৬ আসামিকে মুক্তি দেয়া হলেও বাকি ১শ’ ৬ আসামির বিষয়ে কোন কোন মামলায় পুলিশ কর্তৃক চার্জশীট প্রদান না করায় বিচারকার্য শেষ করতে পরবর্তী তারিখে মামলায় হাজিরা দিতে তারিখ দেয়া হয়।
কারাসূত্রে জানা গেছে, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের এসব আসামিকে মুক্তি দেয়া হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৮ কারাগারেই অতি দ্রুত এমন আসামিকে মুক্তি দেয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। মূলত দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি শেষে এসব মামলার আসামিকে বিচার শেষে দ্রুত মুক্তি প্রদান বা সাজা প্রদানের মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার মাধ্যমে বিচারাধীন এসব বন্দীর বিষয়ে সহায়তা করতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সকল আইনী প্রক্রিয়ার পরই এসব আসামিকে মুক্তি দিয়েছে আদালত। আসামির শাস্তি হবে সর্বোচ্চ তিন মাস অথচ দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে। মূলত সকল বন্দীই তো অপরাধী নয়। আমরা সিলেট থেকে লঘু অপরাধের হাজতিদের মুক্তি দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য করাগারেও এ উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন আদালতে যারা লঘু অপরাধে দীর্ঘদিন ধরে আছে তাদের বিষয়টি দেখার জন্য। এর পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও প্রধানবিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা আইনানুগভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন যাতে করে লঘু অপরাধের হাজতিরা কারাগার থেকে মুক্তি পায়। তারই অংশ হিসেবে সিলেট কারাগার থেকে ১শ’ ৪২ জন হাজতি রবিবার মুক্তি পেয়েছেন। যা ইতিহাসে এই প্রথম। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য কারাগার থেকেও লঘু অপরাধের হাজতিদের মুক্তি দেয়া হবে। সিলেট কারাগারে লঘু অপরাধে অভিযুক্তরা তাদের দোষ স্বীকার করেছে। যাদের ৫ দিনের জেল দেয়া হয়েছে অথচ অনেক দিন ধরে কারাগারে আটক আছে। এমন ৩৬ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। আরও যারা দোষ স্বীকার করেছে তাদের আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জামিন দেয়া হয়েছে। এমন ১শ’ ৪২ জনকে সিলেট কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: