ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসে আশাবাদ

১০ বছরের মধ্যে দেশের সবাই সাক্ষরতা অর্জন করে দক্ষ জনশক্তি হবে

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

১০ বছরের মধ্যে দেশের সবাই সাক্ষরতা অর্জন করে দক্ষ জনশক্তি হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা কর্মসূচীতে শনিবার উদ্যাপিত হলো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পাল্টে যাবে, দেশের সকল মানুষ সাক্ষরতার জ্ঞান নিয়ে নিজেকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করবে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘সাক্ষরতা অভিযান’ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ছাত্রলীগ হাল ধরলে নিরক্ষরতা দূর করতে বেশি সময় লাগবে না। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশে গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি উদ্যাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই দিবসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘সাক্ষরতা অর্জন করি, দক্ষ হয়ে জীবন গড়ি।’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে চায় সরকার। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মেস্তাফিজুর রহমান ফিজার। এর আগে সকাল আটটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের করা হয় র‌্যলি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পাল্টে যাবে, দেশের সকল মানুষ সাক্ষরতার জ্ঞান নিয়ে নিজেকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করবে। গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টিকরণ এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ২০১৪ সালে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন প্রণীত হয়েছে। এর ফলে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে আামাদের সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। এখনও ২৭ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর রয়েছে। তাদের সাক্ষরজ্ঞান ও দক্ষ করে তোলাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সাক্ষরতার চিত্র পাল্টে গেছে। দেশকে এগিয়ে নিতে সরকার সকল ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু লিখতে-পড়তে পারলেই তাকে সাক্ষরতা বলা হয় না। পড়ালেখার পাশাপাশি তাকে কর্মদক্ষ হলেই সাক্ষর বলা হচ্ছে। সাক্ষরতার চিত্র আগামী ১০ বছরের মধ্যে পাল্টে যাবে। সাক্ষরতা মানে একজন শিক্ষিত ও দক্ষ ব্যক্তিকে বোঝাবে। আজকের যারা শিশু, আগামীতে তারাই এ চিত্র পাল্টে দিবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ মোতাহার হোসেন। তিনি বলেন, দেশের একটি অংশ নিরক্ষর থাকবে এটি ভেবেই বঙ্গবন্ধু গণসাক্ষরতা কার্যক্রম শুরু করলেও এটি যে গতিতে চলছে তা সঠিক নয়। শুধু যোগ-বিয়োগ, সাক্ষর করা আর পেপার পড়তে পারাই সাক্ষরতার মূল উদ্দেশ্য নয়। সাক্ষরতার জ্ঞান নিয়ে যেন তাদের কর্মসংস্থান তৈরি হয় সেটিই ছিল এর মূল লক্ষ্য। অথচ তা আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। আজও দেশে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হয়নি। মোতাহার হোসেন আরও বলেন, সমাপনী-ইবতেদায়ী ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষানীতির আলোকে ২০১৮ সাল থেকে শুধু অষ্টম শ্রেণীতে পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে কোয়ালিটি শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কারিগরি শিক্ষাকে আরও ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আসিফ উজ জামান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক তপন কুমার ঘোষ। এ ছাড়া প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, ইউনেস্কো ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ‘সাক্ষরতা অভিযান’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ছাত্রলীগ হাল ধরলে নিরক্ষরতা দূর করতে বেশি সময় লাগবে না। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রিক্সা চালান এমন সাতজন ও চারজন ক্যান্টিন বালকের হাতে বই তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগকে সারাদেশে নিরক্ষরতা দূর করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি, ছাত্রলীগ তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঘোষণা করবে, বাংলাদেশে কোন নিরক্ষর নেই। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের তামিলনাড়ুতে শতভাগ মানুষ সাক্ষর। আমরাও নিরক্ষরতা দূরীকরণে অনেক দূর এগিয়েছি। এখন ছাত্রলীগ হাল ধরলে আমাদেরও শতভাগ সাক্ষরতায় পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০১ সালে যখন আমরা ক্ষমতা ছাড়ি, তখন আমাদের সাক্ষরতার হার ছিল ৬০ শতাংশ। ২০০৯ সালে ফের ক্ষমতায় গ্রহণের সময় এই হার ছিল ৪০ থেকে ৪১ শতাংশ। এ ধরনের নজির পৃথিবীর অন্য কোন দেশের ইতিহাসে কি না, আমার জানা নেই। আবার আমরা চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করে গেলাম, ফিরে এসে পেলাম তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট। আমরা চাল ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলাম। ফিরে এসে দেখলাম, লাখ লাখ টন খাদ্যের ঘাটতি। সেই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কোথায় নিয়ে গেছেন! ২০০৮ সালে তিনি বলেছিলেন, বদলে দেবেন বাংলাদেশকে। তিনি সেটিই করে দেখিয়েছেন।
×