ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল জয়পুরহাট;###;সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ৩-এর পাতায়

সব আসন ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে ॥ খুলনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সব আসন ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে ॥ খুলনা

অমল সাহা, খুলনা অফিস ॥ রূপসা-ভৈরব পাড়ে অবস্থিত শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনা। গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এখন সারাদেশের মতো খুলনা মহনগরীসহ জেলার সর্বত্রই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাংগঠনিক কাজ, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্নভাবে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার দুটিসহ জেলায় জাতীয় সংসদের মোট আসন ছয়টি। বর্তমানে ছয়টি আসনই রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়রের পদটিও এখন আওয়ামী লীগের কব্জায়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সফলতা এবং ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-কে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ খুলনার ছয়টি আসনই পুনরায় নিজেদের দখলে রাখতে চায়। অপরদিকে বিএনপি চায় ঘুরে দাঁড়াতে। আর অবস্থান ফিরে পেতে তৎপর জামায়াতে ইসলামী। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা যেমন তৎপর রয়েছেন, তেমনি, নবীন নেতারাও প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় বড় দলগুলোতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও রয়েছে। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে আওয়ামী লীগে কোন্দল অনেকটা নিরসন হলেও সংসদ নির্বাচন সামনে নিয়ে এলাকায় দ্বন্দ্ব যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তবে আওয়ামী লীগ অনেকটা নির্ভার হয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হলেও বিএনপি সেভাবে কর্মতৎরতা এখনও শুরু করতে পারেনি। এই দলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচন নিয়ে তৎপর হয়েছেন। এদিকে দীর্ঘদিন বঞ্চনার শিকার খুলনা অঞ্চলে দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগের টানা দুমেয়াদের শাসনামলে। খুলনা মহানগরীতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের কাজ সম্পন্ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার চালু করেছে। খুলনা জেলা স্টেডিয়াম নতুন আঙ্গিকে নির্মাণ করা হয়েছে। খুলনা আধুনিক রেল স্টেশন, খুলনা শিল্পকলা একাডেমি ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। এ ছাড়া খালিশপুরে বিএনপির সময়ে বন্ধ করে দেয়া পাটকল চালু করেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তা নির্মাণ-পুনর্নির্মাণসহ বড় ও ছোট অনেক সেতু নির্মাণ, কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। মহানগরীসহ জেলার অনেক স্কুল-কলেজ সরকারীকরণ করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বহু ছোট বড় প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এতে জনগণ খুশি হলেও আওয়ামী লীগের গ্রুপিং-কোন্দল এবং কিছু নেতা ও তাদের অনুসারীদের বিতর্কিত কর্মকর্মকা-ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অসন্তুষ্ট। আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থকরাও এগুলো ভাল চোখে দেখছেন না। খুলনায় বিএনপিতেও কোন্দল রয়েছে। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোন্দল মিটানোর জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অনেক চেষ্টা করেছেন। আলাদাভাবে চলা জেলা বিএনপির নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আস্থা রেখে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে কাজ করলেও নগর বিএনপির একাধিক গ্রুপ মাঠে সক্রিয় থাকেনি। ফলে নির্বাচনে হার মানতে হয়েছে। পরবর্তীতে জেলা ও নগর বিএনপি ফের পৃথকভাবে কর্মসূচী পালন শুরু করেছে। আর নগর বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলও নিরসন হয়নি। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো বিএনপি নেতারাও বলেন, বড় দলে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে। এটা কোন্দল বলা যাবে না। যে সমস্যা আছে তা যথাসময়ে নিরসন হয়ে যাবে এবং সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এদিকে জামায়াতে ইসলামী খুলনার দুটি আসনে নির্বাচন করার জন্য তৎপর রয়েছেন। খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) ও খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে জামায়াতের দুই নেতা নির্বাচনমুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা) ॥ বটিয়াঘাটা উপজেলার সাতটি এবং দাকোপ উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন এবং চালনা পৌরসভা নিয়ে জাতীয় সংসদের খুলনা-১ আসন গঠিত। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাস। এর আগেও তিনি দুইবার এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ২০০১ সালে খুলনার ৬টি আসনের ৫টি জামায়াত-বিএনপির দখলে নিলেও একমাত্র এই আসনটিতে নৌকার কান্ডারি হয়েছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি বর্তমান জাতীয় সংসদের এমপি পঞ্চানন বিশ্বাস। আগামী সংসদ নির্বাচনেও পঞ্চানন বিশ্বাস মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন। তারা হলেন- দুবারের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, সাবেক এমপি ননী গোপাল ম-ল, দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন, বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান এবং তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ও শিল্পপতি শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল। দুটি উপজেলায় দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পছন্দের সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক আসনটি ধরে রাখতে তার পক্ষে সকলে কাজ করবেন বলে নেতারা জানান। এ প্রসঙ্গে বর্তমান এমপি পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, এ আসন থেকে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমাকে আবারও মনোনয়ন দেয়া হবে বলে আমি আশাবাদী। কারণ আমার বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মী বা এলাকাবাসীর কোন অভিযোগ নেই। এবার অনেকেই মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করেন তাকেই মনোনয়ন দেবেন। তার সিদ্ধান্তের প্রতি আমি পূর্ণ আস্থাশীল। মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, দলের দুঃসময়ে অন্য নেতারা যখন এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন, তখন তিনি নেতাকর্মীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এখনও নেতাকর্মীদের পাশেই আছেন। এই আসনে দুবার এমপি ছিলাম। দলের নেতাকর্মীসহ দাকোপ-বটিয়াঘাটা এলাকার সাধারণ মানুষ তাকে ভালবাসে। তারা প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি নির্বাচন করবেন। আর অন্য কাউকে দেয়া হলেও তার পক্ষে কাজ করবেন। এ আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা ননী গোপাল ম-ল বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। তবে দল যদি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি তার পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছেন। দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন বলেন, তার নেতৃত্বে উপজেলা, চালনা পৌরসভা ও উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল ইউনিটের কমিটি সক্রিয়। উপজেলার সকল স্তরের নেতাকর্মীরা তাকে প্রার্থী হতে বলেছেন। আর বর্তমান এমপিকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তাঁকে বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। আওয়ামী লীগে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও এ আসনে বিএনপির এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান। এর আগে তিনি বটিয়াঘাটা উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে সংসদ নির্বাচন করে পরাজিত হন। ইতোমধ্যে তিনি এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। এলাকায় সাংগঠনিক কাজের মধ্য দিয়ে তিনি তৎপর রয়েছেন। এদিকে এ আসনে বড় দুদলের বাইরে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়। তিনি বেশিরভাগ সময় দলের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালনের জন্য ঢাকায় থাকেন। মাঝেমধ্যে তিনি এলাকায় আসছেন, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করেন। এ আসনে এখন পর্যন্ত অন্য কোন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর তৎপরতা দেখা যায়নি। খুলনা-২ (খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা থানা এবং নবগঠিত লবনচরা থানার আশিক) ॥ শুধু খুলনা জেলারই নয়, বিভাগীয় পর্যায়ের অধিক গুরুত্বপূর্ণ আসন এটি। স্বাধীনতা লাভের পর এ আসনে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সফলতা ১৯৭৩ সালের পর ২০১৪ সালে। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। এর আগে ২০০৮ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কাছে পরাজিত হন তিনি। গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক বিপুল ভোটে মেয়র পদে জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অনেক বেশি উজ্জীবিত হয়। আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি আওয়ামী লীগ নিজেদের দখলে রাখতে চায়। বিএনপিও চায় তাদের দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে। আগামী নির্বাচনে খুলনা-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান তৎপর রয়েছেন। ইতোপূর্বে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল, দলে নবাগত হিসেবে সাবেক কৃতী ফুটবলার বিশিষ্ট শিল্পপতি সালাম মুর্শেদী খুলনা-২ আসনে প্রার্থী হবেন। কিন্তু খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সালাম মুর্শেদী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এদিকে কয়েক মাস আগে খুলনা-২ আসনের বর্তমান এমপি মিজানুর রহমান মিজানকে দুদকে তলব করায় জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে দুদকে দেয়া অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। বর্তমানে তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করে নির্বাচনীমুখী তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি আবারও মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও খুলনা চেম্বারের সভাপতি কাজি আমিনুল হকের নামও শোনা যাচ্ছে। এদিকে খুলনা-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মনোনয়ন এখন পর্যন্ত অনেকটাই নিশ্চিত। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, হামলা-মামলার মধ্যে দুঃসময়ে সহকর্মীদের নিয়ে দলকে সংগঠিত করে রেখেছেন তিনি। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও ভোটারদের ভালবাসা ও পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। দল নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) প্রার্থী দিবে বলে জানা গেছে। খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর থানা এবং খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা থানার আংশিক) ॥ এ আসনটি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে এখন শ্রমজীবী মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অসংখ্য মানুষ এই এলাকার বাসিন্দা। এই নির্বাচনী এলাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শিল্পাঞ্চলের অনেক কলকারখানা বন্ধ করে দেয়। হাজার হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থান হারায়। এর পর ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বন্ধ পাটকল চালু করে। বন্ধ প্রায় অন্যান্য পাটকলগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সচল করে তোলে। তাই এ আসনে নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের পাল্লা এখন অনেক ভারি। এ আসন থেকে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বিজয়ী হয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি আবার বিজয়ী হন। আগামী সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনে মনোনয়ন পেতে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন তৎপর রয়েছেন। বেগম মন্নুজান সুফিয়ান দীর্ঘদিন ধরে খুলনার মানুষের পাশে থেকে লড়াই আন্দোলনে থাকায় জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি শ্রমিকদের কল্যাণসহ সরকারের সহায়তায় এলাকার উন্নয়ন কর্মকা-ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এস এম কামাল হোসেন ছাত্র আন্দোলনে খুলনার রাজপথ কাঁপানোর পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করেন। এখন তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক জনসংযোগ, কর্মিসভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার দৌড়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এই দুই কেন্দ্রীয় সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। তারা এলাকায় গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এদিকে খুলনা-৩ আসনে বিএনপির অবস্থা এলোমেলো। অধিপত্য বিস্তার, নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দলটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানান, গত সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে কোন্দল ছাই চাপা দেয়া হলেও তা নিরসন হয়নি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে এমন সম্ভাবনা ধরে নিয়ে প্রার্থী হওয়ার জন্য চারজন নেতা তৎপর রয়েছেন। এরা হলেন- নগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু এবং ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল। এরা সকলেই দলীয় মনোনয়ন পেতে চান, এ জন্য পৃথকভাবে নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই চার নেতার মধ্যে আরিফুর রহমান মিঠু ও রকিবুল ইসলাম বকুলের পক্ষে তৎপরতা বেশি দেখা যায় বলে স্থানীয়রা জানায়। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হচ্ছেন দলটির খুলনা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও সিপিবি প্রার্থী দিবে বলে শোনা যাচ্ছে। খুলনা- ৪ (রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা এবং দিঘলিয়া উপজেলার আংশিক) ॥ রূপসার ৫টি, তেরখাদার ৬টি এবং দিঘলিয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত এই আসনে আওয়ামী লীগের শক্তি অনেকটাই মজবুত। এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু গত ২৬ জুলাই রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এমপি সুজা। তার মৃত্যুজনিত কারণে আসনটি শূন্য হওয়ায় নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২০ সেপ্টেম্বর জতীয় সংসদের খুলনা-৪ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপনির্বাচনে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক কৃতী ফুটবলার বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ২৮ আগস্ট বাছাইয়ে তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন খুলনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার ও বিভাগীয় নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ ইউনুচ আলী তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন। উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সালাম মুর্শেদীর জন্ম রূপসা উপজেলার নৈহাটী গ্রামে। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সালাম মুর্শেদী এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন বলে এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে। উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। এলাকার দলের নেতকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ছাড়াও খুলনার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিমিয় করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, খুলনায় উন্নয়নে অবদান রাখার ইচ্ছা নিয়েই রাজনীতিতে এসেছেন। ফুটবল ও ব্যবসায় সফলতার পর রাজনীতি তার তৃতীয় অধ্যায়। রাজনীতির মাঠে নতুন হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করবেন। তিনি খুলনার সিনিয়র ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকা- চালিয়ে যাবেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আবার তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে কাজের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজ এবং কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। তাজের বাড়ি তেরখাদা এবং হেলালের বাড়ি রূপসা উপজেলায়। তবে তারা দুজনই বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অধিকাংশ এই দুই নেতার পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত বলে দলের একাধিক সূত্র জানায়। তবে হেলালের সমর্থকদের তৎপরতা বেশি। এই দুই নেতার বিপরীতের আর একটি অংশ চাইছে দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন এমন এক নেতাকে মনোনয়ন দেয়া দরকার। বড় দুই দলের বাইরে রূপসা উপজেলার বাসিন্দা ও খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন এ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক এমপি মোক্তার হোসেন ও এম হাদিউজ্জামানের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও তাদের কেউই এখনও নির্বাচনী কর্মকা- শুরু করেননি। খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) ॥ ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি এবং ফুলতলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনটি গঠিত। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠে সরব রয়েছেন একাধিক সম্ভ্যাব্য প্রার্থী। অন্যদিকে ইতোপূর্বে দুটি নির্বাচনে জামায়াতকে এ আসনে বিএনপি ছাড় দিলেও আগামী নির্বাচনে ছাড় দিতে নারাজ। জামায়াতের প্রকাশ্য তৎপরতা কম থাকলেও এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠকসহ নানা কৌশলে নির্বাচনমুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ আসনে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এখন তিনি বর্তমান সরকারের মৎস্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ইতোপূর্বে তিনি এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের খুলনা জেলা সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মাহাবুব উল ইসলাম ও ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন। এলাকার তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ শিক্ষক ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন তিনি। কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী করেছেন। তিনি মন্ত্রী হিসেবে তার প্রতি অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন। আর সরকারের সহযোগিতায় তার সময়ে এলাকায় দুটি কলেজ সরকারীকরণ, লাইভস্টক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বুলকাফ প্রতিপালন কেন্দ্র, চটচলিয়ায় ব্রিজ ও অনেক কালভার্ট নির্মাণ, নদী খননসহ বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। অনেক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তার সময়ে এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে অতীতে তা কখনও হয়নি। আগামী নির্বাচনেও এ আসনে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ফের মনোনয়ন পাবেন বলে তারা আশা করছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগ করেছেন। ১৯৬৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলের স্বার্থে সবসময় কাজ করেছেন। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ তাকে ভালবাসেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হওয়ার জন্য পার্টির কাছে মনোনয়ন চাইবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেন সে অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন। এদিকে খুলনা-৫ আসনে বিএনপি কখনও জয়লাভ করেনি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি এ আসনে কোন প্রার্থী না দিয়ে জামায়াতকে ছেড়ে দেয়। ২০০১ সালে জামায়াতের প্রার্থী সাড়ে ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে। আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপর রয়েছেন বিএমএর সাবেক কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডাঃ গাজী আবদুল হক। আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান এবং ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর। গাজী আব্দুল হক ২০০১ ও ২০০৮ সালে দলের কাছে মানানয়ন চেয়েও বঞ্চিত হন, জামায়াতকে ছাড় দেয়ার কারণে। এতে তিনি দমে যাননি। তিনি ধারাবাহিকভাবে এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, বিএনপি নেতা আলী মুনসুরের এলাকায় অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা এবার এ আসনে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা করতে রাজি নয়। এদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রার্থী হবেন বলে কার্যক্রম শুরু করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মোল্লা মজিবুর রহমান আলোচনায় রয়েছেন। খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) ॥ পাইকগাছা পৌরসভা ও পাইকগাছা উপজেলার ১০টি এবং কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের এ আসনটি। উপকূলবর্তী সুন্দরবন সংলগ্ন সংসদীয় এ আসন এলাকায় নির্বাচনী হাওয়া বইছে। মনোনয়ন পেতে সম্ভ্যাব্য প্রার্থীরা তৎপর রয়েছে। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ কয়েকজন নেতা এলাকায় পৃথকভাবে কর্মীসমর্থকদের দিয়ে নির্বাচনমুখী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। বিনএপির একাধিক নেতা তৎপর রয়েছেন। জামায়াতও নানাভাবে তৎপর রয়েছে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ নুরুল হক। তিনি এর আগে ১৯৯৬ সালে একই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নেতা এ্যাডভোকেট সোহরাব আলী সানা। আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য শেখ মোঃ নুরুল হক ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন- প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু, পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মোঃ রশিদুজ্জামান, বিএমএর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রী লীগের তুখোর ছাত্রনেতা অধ্যাপক ডাঃ শেখ শহীদ উল্লাহ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক প্রেম কুমার ম-ল। পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য বলেন, সিনিয়র দুই নেতার বিতর্কিত কিছু কাজ এবং রেষারেষির কারণে দলগত ঐক্য ও সংহতি নষ্ট হয়েছে। পাইকগাছা-কয়রা এলাকায় আওয়ামী লীগের জনসমর্থন বর্তমানে তুলনামূলক বেশি হলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তারা আরও বলেন, বর্তমানে এ আসনে জামায়াত অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। বারবার নির্বাচনে জামায়াতকে ছাড় দেয়ায় বিএনপিও সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। সারা দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ের পাশাপাশি এই নির্বাচনী এলাকায় যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে। সব কিছু মিলিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের জয়লাভের সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে কঠোরভাবে বিরোধ নিরসন এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে সফলতা পাওয়া যাবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ মোঃ নুরুল হক বলেন, দলের অভ্যন্তরে তিনি কোন বিরোধ সৃষ্টি করেননি। তিনি মূল স্রোতের সঙ্গেই আছেন এবং অল্প সংখ্যক যারা বিপরীতমুখী চলার চেষ্টা করছেন তারাও সময়মতো মূল ধারায় ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন। সীমানা প্রাচীর তোলা নিয়ে যে সমস্যা হয়েছিল তা বহু আগেই নিরসন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এমপি হিসেবে তার দুই টার্মে সরকারের সহযোগিতায় জেলার সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়া জনপদ পাইকগাছা-কয়রার অকল্পনীয় উন্নয়ন হয়েছে। শিবসা সেতু নির্মাণ, খুলনার সঙ্গে কয়রার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে কয়রা-পাইকগাছা ভায়া চাঁদখালী সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, সড়ক পাকাকরণসহ বহু উন্নয়ন কর্মকা- করেছেন। যে কারণে পাইকগাছা-কয়রার সর্বস্তরের মানুষ তাকে ‘উন্নয়নের রূপকার’ হিসেবে মনে করে। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাকে ভালবাসে। তাদের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী আবারও তিনি মনোনয়ন চাবেন। পার্টি প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা বিবেচনা করবেন বলে তিনি আশাবাদী। সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহরাব আলী সানা বলেন, তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালে তার নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ করে কয়রা উপজেলা এলাকায় আইলার মতো চরম দুর্যোগ ঘটে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সরকারের সহযোগিতায় বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণসহ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা প্রদানে দীর্ঘ সময় কেটে যায়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। বিতর্কিত কোন কাজ করেননি। তার সময়ে পাইকগাছা কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা, কয়রা মহিলা কলেজ সরকারীকরণ, বোয়ালিয়া সেতু নির্মাণসহ এলাকায় নজিরবিহীন উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বলেন, পার্টির প্রতি আমি কমিটেড। জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন নাও দেন, যাকে দিবেন নৌকা প্রতীকে তাকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, শতভাগ সততা, নিষ্ঠা ও ত্যাগের মাধ্যমে তিনি রাজনীতি করছেন। পাইকগাছা তার জন্মস্থান। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে বহুবার তিনি কয়রা-পাইকগাছায় সাংগঠনিক কাজে গিয়েছেন। এখনও নিয়ামিতভাবে এলাকায় যাচ্ছেন, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। জামায়াতের দুর্গ ভাঙ্গতে হলে তার বিকল্প কেউ নেই বলে তিনি মনে করেন। তিনি মনোনয়ন চাইবেন এবং নৌকা প্রতীক তিনিই পাবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নাম আলোচিত হলেও তিনি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি। পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মোঃ রশিদুজ্জামান মোড়ল বলেন, আগের বার তিনি মনোনয়ন চেয়ে পাননি। আগামী নির্বাচনে ফের মনোনয়ন চাবেন। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে বিএমএর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ শেখ শহীদ উল্লাহ বলেন, আমাদের পুরো পরিবারটিই আওয়ামী পরিবার। আমার বাবা পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন, বর্তমানে কার্যকরী পরিষদের সদস্য। ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলাম। গত পাঁচটি বছর ধরে এলাকায় গণসংযোগ করছি, ডায়াবেটিকস হাসপাতাল করে সেখানে নিয়মিত এলাকার মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান এ আসনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত এই অভিজ্ঞ চিকিৎসক। এদিকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি খুলনা-৬ আসনটিতে জামায়াতকে ছাড় দিতে রাজি নয়। পাইকগাছা-কয়রা এলাকার একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, এখানে জামায়াতের চাইতে বিএনপি শক্তিশালী। জামায়াতকে বারবার ছাড় দেয়ার কোন মানে হয় না। এ আসনে কয়রা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোমরেজুল ইসলাম এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মন্টু সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অনেক আগে থেকেই তৎপর রয়েছেন। জামায়াতের খুলনা মহানগর আমির আবুল কামাল আজাদ আগামী নির্বাচনে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপর রয়েছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আবুল কালাম আজাদও দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে কয়লা-পাইকগাছা আসনে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ ছাড়া এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন পার্টির জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, পাইকগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর। স্থানীয় জাপা নেতারা বলেন, শফিকুল ইসলাম মধু এলাকায় মতবিনিময়, কর্মিসভা করে বলেছেন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে তিনি নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন।
×