ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে জানেন প্রধানমন্ত্রী ॥ কাদের

জাতীয় ঐক্যের নামে দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জাতীয় ঐক্যের নামে দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করা হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের এখতিয়ার একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি ছাড়া এ বিষয়ে আর কেউ কিছু জানেন না। নির্বাচনকালীন সরকার কখন হবে, সাইজ কি হবে? আকারে কতটা ছোট হবে, মন্ত্রিসভায় কতজন থাকবেন তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। দলের সাধারণ সম্পাদক হলেও আমিও এখন পর্যন্ত জানি না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের রাজশাহী মহানগর ও রাজশাহী জেলা নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার শুরুতে আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে মর্মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এমন বক্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ- এটা নিশ্চিত হলেও তা বলার দায়িত্ব সরকার কিংবা সরকারের কোন মন্ত্রীর নয়, দলেরও কোন নেতারও নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ নয়। নির্বাচন কমিশনই বলবে কবে নির্বাচন হবে। তাই যার যার সীমানার মধ্যে সীমিত থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকায় থাকলে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারের জন্য ভাল। আ’লীগ ছাড়া জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা হাস্যকর ॥ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ঘোষণা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে জাতীয় ঐক্যের নামে দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। যা দেশের জন্য কখনও শুভ হতে পারে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়াও ১৪ দলে আরও দল রয়েছে। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (এ) রয়েছে। দেশে আমাদের জোট ও মহাজোটের বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। দেশের বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কখনও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। ‘জাতীয় ঐক্য’ শব্দ দুটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যে নামেই তারা যান, ‘জাতীয় ঐক্য’ শব্দ দুটি তাদের ব্যবহার না করাই ভাল। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকা ভাল, গণতন্ত্রে প্রতিযোগিতা থাকবেই। আর নির্বাচন মানেই প্রতিযোগিতা, সেটা নির্বাচনে হবে। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে যে কোন জোটকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, আমরাও ১৪ দলীয় জোট করেছি। এছাড়া আমাদের মহাজোট রয়েছে। জাতীয় পার্টি (এ) মহাজোটে রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বেও ২০ দলীয় জোট রয়েছে। আবার যুক্তফ্রন্ট নামেও একটি জোট আত্মপ্রকাশ করেছে। সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে জোট-মহাজোট গঠিত হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কখনও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। এটা জাতীয় ঐক্য নয়, এটা সাম্প্রদায়িক ঐক্য। শতকরা ৯০ ভাগ ইউনিয়ন পরিষদে, উপজেলা পরিষদে আওয়ামী লীগ জিতেছে। কুমিল্লা ও সিলেট ছাড়া সব সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। সেই আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় না। জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন হলে আমরা ডাক দেব। এখন আমরা জনগণের ঐক্য চাই। দলে বিশৃঙ্খলা মনোনয়নের অসুস্থ প্রতিযোগিতা ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণের কাছে যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য তাঁকে মনোনয়ন দেয়া হবে। সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি হলো দেশের জনগণ। দলীয় নেতাকর্মী নয়। কারণ দল আর নির্বাচন এক কথা নয়। কেউ দলের মধ্যে প্রভাবশালী থাকতে পারেন। কিন্তু জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারেন। জনগণের কাছে যে বেশি জনপ্রিয় তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে যতই প্রভাবশালী নেতা হোন না কেন মনোনয়ন দেয়া হবে না। জরিপ রিপোর্ট আছে, সকলের আমলনামা, এসিআর আছে, ছয়মাস পরপর আপডেট হচ্ছে। সর্বশেষটাও যোগ হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ টিম যাচাই-বাছাই করছে। আমাদের জনমতের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দিতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, কারও অভিযোগ থাকলে সরাসরি লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় অফিসে অভিযোগ দেবে। এটা দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমাধান করবেন। আমার সঙ্গে আলোচনা করবেন। যদি আলোচনা যথেষ্ট না হয়, তাহলে দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেব। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে যারা সিদ্ধান্ত নেবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। যারা এসব করছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। আর ভবিষ্যতে যারা করবেন তাদের শাস্তি পেতে হবে। তিনি বলেন, রাজশাহীর নেতাদের ডাকার নিশ্চয় কোন কারণ আছে। রেসপনসিবল লিডাররা যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন তাহলে কর্মীরা কী শিখবে? আর আমাদের পার্টির ফান্ডও আছে, ২৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে, এবার ভাবছি আরেকটু বাড়াব। বৈঠকে রাজশাহী মহানগর ও জেলার নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় জেলা ও মহানগর নেতাদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কোন্ নেতা কোথায় কী করছেন, গ্রুপিং-বিভেদ সৃষ্টি করে বিরোধী পক্ষকে সুযোগ করে দিচ্ছেন, সব আমাদের জানা আছে। এখনও সময় আছে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। মনে রাখবেন, আগামী নির্বাচন খুবই চ্যালেঞ্জিং। এক্ষেত্রে দলের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশ হচ্ছে, দলের মধ্যে বিভেদ-দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না, সে দলের যত বড়ই নেতা হোন। সূত্র জানায়, আলোচনা শেষে রাজশাহী জেলা ও মহানগরের নেতারা ভেদাভেদ ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার অঙ্গীকার করেন। পরে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠা-ু, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ। রাজশাহীর নেতাদের মধ্যে ছিলেন রাজশাহী মহানগর সভাপতি ও সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, বাঘা উপজেলা সভাপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ।
×