ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

জাবালে নূরের মালিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জাবালে নূরের মালিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার দায়ের করা মামলায় জাবালে নূর বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ। ঘটনার ৩৮ দিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের জিআর শাখায় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (পরিদর্শক) শরিফুল ইসলাম। ছয় আসামিরা হচ্ছেন, জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম, দুই বাসচালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং দুই চালকের দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ। এদের মধ্যে শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন বাসটির চাপায় দুই শিক্ষার্থী মারা যায়। তবে কাজী আসাদ ও জাহাঙ্গীর আলম এখনও পলাতক। একইসঙ্গে চার্জশীটে দুইজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এরা হচ্ছে, সোহাগ আলী ও রিপন হোসেন। আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগপত্রটি আদালতের কাছে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপস্থাপন করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, চালক ও চালকের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে, তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ায়। এ সময় চালক মাসুম বিল্লাহ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীদের ওপর বাস উঠিয়ে দেয়। ঘটনাস্থলে দু’জন শিক্ষার্থী মারা যান। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সেদিন বাস দুটির চালক ও চালকের সহকারীরা দুই থেকে তিনবার ওভারট্রেকিং করে। অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তার ওপর জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে পড়ে। এতে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও নয়জন আহত হয়। নিহত দুই শিক্ষার্থী হচ্ছে, দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। এই ঘটনায় মিরপুর ও বরগুনা জেলায় অভিযান চালিয়ে জাবালে নূরের তিন বাসের তিন চালক এবং তাদের দুই সহযোগী এনায়েত ও রিপনকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)। এরপর গত ১ আগস্ট সন্ধ্যায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে জাবালে নূরের বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনকে (৬০) গ্রেফতার খবর জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গ্রেফতার হওয়া ছয়জনকে পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, জাবালে নূরের যে তিনটি বাসের রেষারেষিতে এ ঘটনাটি ঘটে। সেগুলোর নিবন্ধন নম্বর হলো ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭, ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০। এর মধ্যে ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯২৯৭ নম্বর বাসের চাপায় মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। এই বাসটি চালাচ্ছিলেন মাসুম বিল্লাহ। ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৬৫৭ নম্বর বাসের চালক ছিলেন জুবায়ের এবং ঢাকা মেট্রো ব-১১-৭৫৮০ নম্বরধারী বাসটির চালক ছিলেন সোহাগ। এরপর র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তিতে ঘাতক বাস জাবালে নূরের চালক মাসুম বিল্লাাহ জানান, তার বড় গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল না। হালকা যান প্রাইভেটকার ও ছোট মাইক্রোবাস চালনার জন্য লাইসেন্স নিয়ে তিনি বাস চালিয়ে আসছিলেন। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে ওইদিনই রাস্তায় নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুই শিক্ষার্থীকে বাসচাপায় ‘হত্যার’ বিচারসহ নিরাপদ সড়কের জন্য ৯ দফা দাবিতে চলে টানা আন্দোলন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হত্যার জন্য দায়ী জাবালে নূর পরিবহন রিমিটেডের রুট পারমিট বাতিলেরও দাবি তোলে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ১ আগস্ট জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের নিবন্ধন ও ফিটনেস সনদ বাতিল করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
×