ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, আকাশবীণা

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, আকাশবীণা

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক সম্প্রচার শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট- ১। দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন (সাফ) চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সরাসরি প্রচারের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে এর আনুষ্ঠানিক শুভযাত্রা। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে এই সুবিধা পাবে দেশের বেসরকারী টেলিভিশন কেন্দ্রগুলো। উল্লেখ্য, বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ ব্যয় হয় ১৪ মিলিয়ন ডলার। বঙ্গবন্ধু স্যটেলাইট পুরোদমে কাজ শুরু করলে এই অর্থ আর বিদেশী মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে না। উপরন্তু এই স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি দেশের জন্য সংরক্ষিত রেখে বাকি ২০টি ভাড়া দেয়া যাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে। সন্দেহের অবকাশ নেই যে, আগামীতে এই খাতের সম্ভাবনা বিপুল এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎসও বটে। এর পাশাপাশি আকাশবীণার প্রথম আকাশ যাত্রার সংবাদটিও ইতিবাচক নিঃসন্দেহে। উল্লেখ্য, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নতুন বোয়িং, যেটি সর্বশেষ সংযুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিমানের বহরে। বুধবার ড্রিমলাইনার তথা আকাশবীণার প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে উড়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর। শ্রুতিমধুর নামটিও তাঁরই দেয়া। প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় যাত্রী পরিবহন করবে আকাশবীণা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অপেক্ষাকৃত সুদূর গন্তব্যে ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে যাতায়াত সুগম ও সাশ্রয়ী হবে। সে অবস্থায় বাংলাদেশ বিমানের উচিত হবে নতুন করে ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইটের পাশাপাশি ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আকাশবীণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল পনেরোটিতে। বিমানের লাভ-লোকসান নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এর অবসান হওয়া দরকার অনতিবিলম্বে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে পূর্ণ হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের জন্মের শত বছর। আর ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছর। এ কথা বলা মোটেও অত্যুক্তি হবে না যে, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশও। এ কথা তো ইতিহাসের অবিসংবাদী সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অসম্পূর্ণ ও অধরাই থেকে যেত। তবে শুধু স্বাধীনতা অর্জনের মধ্যেই বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি থেমে থাকেনি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও ছত্রছায়ায় একদা তথাকথিত উন্নত বিশ্ব কর্তৃক নিন্দিত ‘বটমলেস বাস্কেট’ এখন খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবছর জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫-এর ওপরে, যা অনেক দেশে প্রায় নজিরবিহীন। সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশকে অভিহিত করেছেন ‘বিশ্ব নেতা’ হিসেবে, যা অনুসরণীয় হতে পারে অন্যান্য দেশের। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু। বাস্তবায়িত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ অন্তত ১০টি মেগা প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথ ঘিরে। ড্রিমলাইনার সংযুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিমানে। এ সবই মাত্র কয়েক বছরে সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সাহসী, দূরদর্শী নেতৃত্বে। এও ইতিহাসের এক অমোঘ সত্য যে, জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ তথা মুজিব বর্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে তাঁরই কন্যার হাত ধরে। অতঃপর জাতির জনকের প্রজ্বলিত দীপ্ত শিখা তথা সমুজ্জ্বল আলো পৌঁছে যাক বাংলার ঘরে ঘরে, মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে-আকাশে-বাতাসে-ভূম-লে সর্বত্রÑ এই আমাদের প্রত্যাশা।
×