ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে শৃঙ্খলা না ফেরার জন্য রাজনীতিকরাই দায়ী ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সড়কে শৃঙ্খলা না ফেরার জন্য রাজনীতিকরাই দায়ী ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনতে না পারার জন্য দেশের রাজনীতি ও রাজনীতিকরাই দায়ী। তিনি জানান, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বর্তমান দশম সংসদের ২২তম অধিবেশনে পাস হবে। এই অধিবেশন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞদের এক মতবিনিময় সভা শেষে তিনি আরও বলেন, আমাদের পলিটিক্সটা যদি পুরোপুরি ঠিক হতো, তাহলে বাংলাদেশের সব সেক্টর ঠিক রাখা যেত। এখানে আমাদের মূল সমস্যা। দুর্ঘটনার খবরে নিজের বেদনার্ত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, রাতে টিভি স্ক্রলে দুর্ঘটনার খবর দেখে সকালে আর পত্রিকা পড়ি না। পরে পড়ি, মনের ওপর প্রতিক্রিয়া হয়, মন্ত্রী কি মানুষ নয়? এগুলো কি আমাকে আলোড়িত করে না? আমার জীবনে কি এসবের প্রতিক্রিয়া নেই? প্রতিদিন এত লোক মারা যাচ্ছে কেন? ছোট ছোট ব্যাটারিচালিত রিক্সা, এ নগরীতে চলছে নতুন উপদ্রব, তারপর মোটরসাইকেল কয়েকদিন আগে দেখলাম ১০ জন মারা গেছে। তারা সবাই মোটরসাইকেল চালক। মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য ব্যাটারিচালিত ছোট অবৈধ যানগুলোকে দায়ী করলেও সেগুলোকে তুলতে না পারার জন্য রাজনীতিকদের দায়ী করেন মন্ত্রী। দেশে কয়েকশ ইজিবাইক কারখানা আছে, উৎসমুখ বন্ধ করতে পারিনি। চিঠি দিয়েছি, কথা বলেছি, মিটিংও করেছি, কিন্তু বাস্তবায়ন জিরো। মাঝে মাঝে অসহায় বোধ করি এ রকম কেন হয়। ইজিবাইক ২২টি সড়কে পুরোপুরি বন্ধ করতে পারলেও পুরোপুরি সফল হতে না পারার জন্য রাজনীতিকদের দায়ী করে তিনি বলেন, অন্যান্য সড়কে সরানো যেত, আমরা যদি জনপ্রতিনিধিরা আমাদের দেশের অনেক পলিটিশিয়ান এসবের পেছনে আছে। তারা পেছনে থেকে মদদ দেন। সড়কে শৃঙ্খলা অমান্যেও রাজনীতিকরা এগিয়ে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। আপনি দেখুন, ঢাকা শহরে পুলিশকে নিয়ে দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর সবাই এখন হেলমেট পরে চলে। যখন দেখবেন হেলমেট নেই, এরা পলিটিশিয়ান, এরা হচ্ছে রাজনীতির লোক। দে ডোন্ট কেয়ার। আমি এজন্য বলি, আমরা পলিটিক্সটাতে যদি শৃঙ্খলা ফেরাতে পারি সব জায়গায় শৃঙ্খলা ইজি হয়ে যায়। পথচারীরা যদি সড়কে আইন না মানে, তাহলে শুধু চালকদের মানিয়েও কাজ হবে না বলে মনে করেন মন্ত্রী। নিয়ম না মানার মানসিকতার পরিবর্তন না হলে মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু কিংবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তার সুফল পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। সভায় লেখক-কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনটি পুনঃবিবেচনা করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সেখানে অনেক ফাঁকফোকর আছে। সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। গত দুই বছরে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা কেন বাস্তবায়ন হয়নি, তা পর্যালোচনার নির্দেশ দেয়া উচিত। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, লাইসেন্সধারী চালকরা ওভারটেকসহ আইন অমান্যের কারণে দুর্ঘটনা ঘটালে ১০ বছরের জেল দেয়ার কথা বলছি। জানার পরও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া বা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালক দুর্ঘটনা ঘটালে ৩০২ ধারার মামলার বিধান রাখার জন্য বলছি আমরা। এখানে ইনটেনশন আছে, জেনে শুনেই এটা করা হচ্ছে। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি রস্তম আলীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা।
×