ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তেতসুইয়া নোদার বয়ানে স্নিগ্ধ এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তেতসুইয়া নোদার বয়ানে স্নিগ্ধ এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিপুল বৈভবে এগিয়ে চলছে দ্বিবার্ষিকী এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। শিল্পরসিকের মন রাঙাচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রান্তরের ভাস্কর্য থেকে চিত্রশালার ছয় গ্যালারিতে ছড়িয়ে থাকা দেশ-বিদেশের শিল্পীদের শিল্পসম্ভার। আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনীর আঠারোতম আসরে চোখজুড়ানো শিল্পকর্মের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে শিল্পসংক্রান্ত সেমিনার। একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তন ও নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারগুলো আকর্ষণীয় হয়ে ধরা দিয়েছে শিল্পবোদ্ধাদের কাছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী ও শিল্প-সমালোচকদের শিল্প-ভাবনাগুলো উঠে এসেছে বৈঠকী আলাপে। প্রদর্শনীর তৃতীয় দিন সোমবার সকাল ও বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুটি সেমিনার। বিষয়ভিত্তিক সেমিনার দুটির শিরোনাম ছিল ‘আর্ট এ্যান্ড কনটেম্পরারি ন্যারেটিভস’ ও ‘আর্ট, পেডাগোগি এ্যান্ড প্রমোশন’। বিকেলের সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে। এতে আলোচনায় অংশ নেন জাপানের প্রখ্যাত শিল্পী ও টোকিও ইউনিভার্সিটি অব ফাইন আর্টস এ্যান্ড মিউজিকের ইমেরিটাস অধ্যাপক তেতসুইয়া নোদা, আন্তর্জাতিক শিল্প সমালোচক সংস্থার সাবেক সভাপতি মারেক বার্টেলিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র-সমালোচক ডেবোরাহ ডায়ার ফ্রিজেল। এ পর্বের সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রধান কিউরেটর তানজিম ইবনে ওহাব। সমাপনী বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক ও শিল্প-সমালোচক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বিশ্বখ্যাত জাপানি চিত্রশিল্পী তেতসুইয়া নোদা সেমিনারে অংশ নিয়ে এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য তুলে ধরেন। উপস্থাপন করেন তাঁর শিল্প-জীবনের অভিজ্ঞতার বয়ান। বলেন, এটা আশা করিনি যে এই প্রদর্শনীর জন্য কোন জাপানী শিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ব্যাপারে কিউরেটর হতে হবে আমাকে। শুধু তাই নয়, হঠাৎ করে শিল্পকর্ম নির্বাচন করার অনুরোধটি রক্ষা করাও ছিল আমার জন্য দুরূহ কাজ। তেলচিত্র প্রদর্শনে দেয়ালজুড়ে বের করে দিতে ১৬ মিটার জায়গা। হতে পারে সে কাজটি এই বিয়েনালের দীর্ঘতম চিত্রকম, তবে আমার পরিচয়টি কোনভাবেই একজন ভালো তেলচিত্র শিল্পীর পরিচয় না। প্রখ্যাত এই ছাপচিত্রীর আলোচনায় উঠে আসে সহজাতভাবেই জাপানে ছাপচিত্র সৃজনের পরিবেশের কথা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চারপাশে বনজঙ্গল ও কাঠের প্রাচুর্য থাকায় স্বাভাবিকভাবেই জাপানীরা ছাপচিত্রের কাঠখোদাই কৌশলটি রপ্ত করতে পারে। এমনকি জাপানের প্রাইমারি স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কাঠখোদাই বিষয়টি পড়াশোনা বাধ্যতামূলক। এটাও সত্য যে, জাপানের অনেক শিল্পীই ছাপচিত্রের অন্য কৌশলগুলো যেমনÑ এচিং, লিথোগ্রাফ কিংবা স্ক্রিন প্রিন্ট বিষয়ে পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়। সব মিলিয়ে মাধ্যমগত কারণেই জাপানের জীবনযাত্রার সঙ্গে ছাপচিত্রের সহজাত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আর এই বিষয়টি খুব ভালভাবে জানতে বাংলাদেশের পথিকৃৎ ছাপচিত্রী মোহাম্মদ কিবরিয়া। সে কারণেই তিনি ১৯৫৯ সালে টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ফাইন আর্টস এ্যান্ড মিউজিকে ভর্তি হন। একই বছরে আমিও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে চেলচিত্র বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করি। সেসময় আমি উপলব্ধি করলাম যে আমি শুধু কৌশলই নয়, এমনকি ছবি আঁকার বিষয়ের ক্ষেত্রেও ইউরোপীয় শিল্পীদের অনুসরণ করছি। এটা বোঝার পরই ঠিক করলাম যে, ছবি আঁকতে হলে আমাকে স্বতন্ত্র আঙ্গিক সৃষ্টি করতে হবে। সেই সময় ফটো-ইমেজের মাধ্যমে ছাপচিত্রের কৌশলকে আশ্রয় করে দৈনন্দিন জীবনের নানা বিষয় অবলোকন শুরু করলাম। আমার এই অভিজ্ঞতাটা বিনিময় করলাম বিয়েনালে অংশ নেয়া জাপানের চার ছাপচিত্র শিল্পীর উদ্দেশ্যে। সেমিনারের সকালের পর্বটি অনুষ্ঠিত হয় এিকাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে। এতে আলোচনায় অংশ নেন শিল্পী রশিদ আমিন, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক শায়লা শারমিন ও চিত্র-সমালোচক মঈনুদ্দিন খালেদ। এ পর্বের সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
×