ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোন সংলাপ নয় ॥ আগামী নির্বাচনে কোন দলকে আনার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কোন সংলাপ নয় ॥ আগামী নির্বাচনে কোন দলকে আনার প্রশ্নে  প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে দাওয়াত কিংবা সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না, কারও শক্তি নেই নির্বাচন ঠেকানোর। এ নির্বাচন ঠেকানোর শক্তি কারও নেই। বিগত জাতীয় নির্বাচন ঠেকানোর জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের নামে জ্বালাও-পোড়াও হলেও জনগণ তা প্রতিহত করেছে এবং এবারও তেমন কিছু হলে জনগণই মোকাবেলা করবে। আর তারা নাকি খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। কে নির্বাচনে এলো না এলো, এটা দেখার বিষয় সরকারের নয়। বিএনপি যদি মনে করে নির্বাচন করবে না, তাহলে করবে না। এখানে তো আমাদের বাধা দেয়ারও কিছু নেই বা দাওয়াত দেয়ার কিছু নেই, এটাই পরিষ্কার কথা। রবিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নির্বাচন নিয়ে সংলাপ আয়োজন ও তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগসহ বিএনপির বেশ কিছু শর্তের বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। ফোনও করেছিলাম, আপনারা জানেন, ধরেননি (খালেদা জিয়া)। খালেদা জিয়ার ছেলে (আরাফাত রহমান কোকো) যখন মারা গেলো তখন গেলাম, মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের সঙ্গে আমি আর আলোচনায় বসব না। আমারও আত্মসম্মানবোধ আছে। সে আমি ক্ষমতায় থাকি বা না থাকি, এখন যে যা-ই বলুন, তাদের সঙ্গে আমি অন্তত বসব না। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিএনপির সমালোচনা প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, ইভিএম হলো প্রযুক্তির একটা অংশ। এটার সুফল উন্নত বিশ্ব নিচ্ছে। কিছুটা হলেও তো এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বিএনপি ভোটে কারচুপি করতে পারবে না বলেই ইভিএমের বিরোধিতা করছে। আগামী এক শ’ বছরের জন্য ডেল্টা প্লান ঘোষণার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২১০০ সালে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, বদ্বীপকে বাঁচিয়ে রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য অভিঘাত থেকে বাঁচাতে এই প্লান। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেই ডেল্টা প্লান-২১০০ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কাজ চলছে। আগামী নির্বাচনে পুনর্বার বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ওপর আমার দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় জনগণ আবারও নৌকাকে বিজয়ী করে আমাদের দেশ সেবার সুযোগ দেবে। আর ক্ষমতায় না আসতে পারলে যারা আসবে তারা অতীতে যা করেছে লুটপাট, এতিমের টাকাও মেরে খাবে, এতিমদেরও বিপদ আসবে। সকলের জন্য বিপদ আসবে। সুদিন আসবে না দুর্দিনই আসবে। সেটা সম্পর্কে আশা করি, জনগণ সচেতন থাকবে এবং আমাদের আবার ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দেবে। আর জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। এ নিয়ে কোন আপসোস থাকবে না। নির্বাচনে আসা না আসা বিএনপির ব্যাপার ॥ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নানা শর্ত প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করিনি বা মামলা করিনি। এতিমের টাকা চুরি করার কারণে আদালতের রায়ে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। আর মামলাও দিয়েছে তারই পেয়ারের ফখরুদ্দিন-ইয়াজউদ্দিন-মঈন উদ্দীনরা। রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করতে হলে ২০১৪ সালের পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সময়ই করতে পারতাম। আর আদালতের রায়ে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। মুক্তি পেতে হলে আদালতের মাধ্যমেই পেতে হবে। আর দ্রুত মুক্তি চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুক। তিনি বলেন, বিএনপির এত নামীদামী আইনজীবী, ব্যারিস্টার অমুক তমুক রয়েছে। তারা কেন পারল না প্রমাণ করতে যে, খালেদা জিয়া নির্দোষ, তারা এতিমের টাকা মেরে খাননি। তাহলে এখানে আমাদের দোষ দিয়ে লাভটা কী। আর ১০টি বছর ধরে মামলা চলেছে। আমরা আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ করলে তো ১০ বছর লাগত না। কিন্তু আমরা তা করিনি। তবে তাদের (বিএনপি) নেত্রী জেলে আছে, তাদের আন্দোলন কই? তারা চাইলে আন্দোলন করুক। তিনি বলেন, বিএনপি হুঙ্কার দিচ্ছে নির্বাচন করবে না। সেটা তাদের দলের ওপর নির্ভর করবে, এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। আমাদের কি করার আছে? বিএনপি যদি মনে করে নির্বাচন করবে না, তাহলে করবে না। এখানে তো আমাদের বাধা দেয়ারও কিছু নেই বা দাওয়াত দেয়ার কিছু নেই, এটাই পরিষ্কার কথা। সীমিত ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ॥ সংবাদ সম্মেলনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। কারণ, এটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। আমাদের পরীক্ষামূলক করে দেখতে হবে। আর ইভিএমে ভোট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই হয়। ইভিএমটা নিয়ে আসার জন্য আমিই কিন্তু সব সময় পক্ষে ছিলাম। এখনও পক্ষে আছি। আমরা চাচ্ছি, কিছু কিছু জায়গায় শুরু হোক, সীমিত আকারে এটা দেখুক। প্রযুক্তির কোন সিস্টেম লস হয় কিনা, সেটা দেখা যাক। সেটা হলে সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা হবে। এটা এমন না যে এটাই শেষ কথা। আমরা সীমিত আকারে শুরু করি প্রযুক্তির ব্যবহার। বিএনপির বিরোধিতার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারচুরি করতে পারবে না বলেই বিএনপি ইভিএমে আপত্তি জানাচ্ছে। কারণ, তাদের জন্মটাই কারচুপির মাধ্যমে। তারা আবার কারচুপির কথা বলে। ইভিএম হলে সেটা কারচুপিটা করতে পারবে না। একের বেশি ভোট দিতে পারবে না, ব্যালটে সিল মারতে পারবে না, সেজন্যই তারা আপত্তি জানাচ্ছে। এটা স্পষ্ট। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের অংশ হিসেবেই ভোট দেয়ায় ইভিএম প্রবর্তনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, সবচেয়ে সুবিধা হলো, যেই মানুষটা ভোট দিতে যাচ্ছে, একটা টিপ দিয়ে ভোট দিয়ে আসছে এবং সঙ্গে সঙ্গে রেজাল্টটা পেয়ে যাচ্ছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ভোটে যে কারচুপির রাজনীতি, সেটা তো জিয়াউর রহমানই প্রথম এনেছে এদেশে। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সেটাকে বৈধ করতে চেয়েছে সে। অথচ আজকে সেই বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে! তারা তাদের জন্মস্থানটা খোঁজ করুক। কোথায়, কীভাবে বিএনপির জন্ম হয়েছে দেখুক। তাদের জন্মের সূত্রটা, লগ্নটা মনে করুক। দেখুক শুভ না অশুভ লগ্ন নিয়ে তারা জন্ম নিয়েছে। খালেদা জিয়ার আমলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটবিহীন নির্বাচনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটের কথা যদি কারও মনে থাকে, তারা (বিএনপি) কী করেছিল। ঘোষণা দিয়েছিল দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ক্ষমতায় ৩০ দিনও থাকতে পারেনি। জনগণ চাইলে তো পারত। কারচুরি করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল বলেই জনগণের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। আর বিএনপির সময় মাগুরা মার্কা, ঢাকা-১০ আসনের মতো প্রহসনের নির্বাচনের কথা জনগণ কী এত সহজেই ভুলে যাবে। দেশের জনগণ আবারও নৌকাকে বিজয়ী করবে ॥ আগামী নির্বাচন নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমার আস্থা আছে, বিশ^াস আছে। আমার কোন আকাক্সক্ষা নেই। আমরা টানা প্রায় দশ বছর ক্ষমতায় আছি বলেই উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হয়েছে, জনগণ তার সুফলগুলো ভোগ করছে। কাজেই মানুষ যদি চায় এই সুফলটা অব্যাহত থাকুক, একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ যদি চায়, আরও উন্নতি যদি চায়- আমার মানুষের ওপর এটুকু বিশ^াস আছে যে তারা আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আমাদের জয়ী করবে এবং সরকার গঠন করতে দেবে। তিনি বলেন, তবে ষড়যন্ত্রকারী তারাও সক্রিয়। এই ষড়যন্ত্রটা মোকাবেলা জনগণই করবে এটা আমি বিশ্বাস করি। জনগণের কাছে এটুকু বলব, আমরা যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারি তবে বাকি কাজগুলো অর্থাৎ যে আর্থ-সামাজিক উন্নতির কর্মসূচীগুলো হাতে নিয়েছি, সেগুলো যাতে আমরা সম্পূর্ণ করতে পারি। কারণ আমরা সরকারে আসতে পারলে এগুলো সম্পন্ন করতে পারব। মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে। আর না আসতে পারলে যারা আসবে তারা অতীতে যা করেছে লুটপাট, এতিমের টাকাও মেরে খাবে, এতিমদেরও বিপদ আসবে। সকলের জন্য বিপদ আসবে। সুদিন আসবে না দুর্দিনই আসবে। সেটা সম্পর্কে আশা করি, জনগণ সচেতন থাকবে এবং আমাদের আবার ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দেবে। নির্বাচন নিয়ে ড. কামালের বক্তব্যের জবাব ॥ ড. কামাল হোসেন বলেছেন আদৌ নির্বাচন হবে না। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তার মানে ওনারা বসেই আছেন, উত্তরপাড়ার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে পারে। আমাদের দেশে তো অনেকেই আছে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তাদের পছন্দ নয়। একটি অসাংবিধানিক সরকার এলে তারা পতাকা পাবেন, সুযোগ-সুবিধা পাবেন। সেদিকেই তো তারা চেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে বিশ্বাস করি। ড. কামাল সাহেবদেরও আন্দোলন করতে হবে। আর সেই আন্দোলন করে যদি উনি সফল হন, আর যদি উত্তরপাড়া থেকে কেউ আসে তাহলে উনারা সাফল্য অর্জন করবেন, এটাই তো? আসলে উনারা তো সুষ্ঠু গণতন্ত্র চান না। গণতন্ত্রটা হচ্ছে উনাদের বলার জন্য। আর প্র্যাকটিসটা হচ্ছে অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। আর ইনশাল্লাহ নির্বাচন হবে, নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ জনগণ যদি সঙ্গে থাকে, এই নির্বাচন কেউ বানচাল করতে পারবে না, এটাই হলো বাস্তবতা। যারা এতিমের টাকাও ছাড়ে না, যারা গরিবের রক্ত চুষে খায়- সেই সুদখোর-ঘুষখোর- মাকাল ফলগুলোকে কেন বাংলাদেশের মানুষ কাছে টেনে নেবে, সেটাই আমার প্রশ্ন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব নামীদামী, অনেক ভয়েস, তাদের আওয়াজটা একটু বেশি শোনা যায়। কারণ খালি কলসি বাজে বেশি, এটাই হলো বাস্তবতা। তবু আমি চাই যে, রাজনৈতিক জোট হোক, নির্বাচনে সবাই আসুক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। আর নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ জনগণের ভোট চুরি করতে তো আসিনি। জনগণকে দিতে এসেছি। আর জনগণের জন্য কাজ করেছি। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই, একথা তো আমি বার বার বলি। আর আমি যেটা বলি, সেটা বিশ^াস করি। কাজেই ইলেকশন হবে, ইলেকশন ঠেকানোর মতো কারও কোন শক্তি নেই। ড. কামাল হোসেনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ড. কামাল হোসেনও তো নির্বাচিত আনকনটেস্টেড হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সিট ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশে তো দল দুইটা। আওয়ামী লীগ এবং এ্যান্টি আওয়ামী লীগ। এটা ভাল যে তারা জোট করেছে, সেটা থাক। ড. কামালের পকেটে সবসময় টিকেট থাকে। যাতে কিছু একটা হলেই বিমানে উঠে বিদেশ পাড়ি দিতে পারে। নতুন রাজনৈতিক মোর্চা যুক্তফ্রন্টের অন্যতম প্রবীণ নেতা বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়াও তাঁকে সম্মান দেননি। বঙ্গভবন থেকে বের করে রেললাইন দিয়ে দৌড় দেয়ালেন। কাদের সিদ্দিকীও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু কে যেন বুদ্ধি দিল, রিজাইন করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ালেন। ভাবলেন ভোট পেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন। পরে নৌকা ছেড়ে দিয়ে তিনি হেরে গেলেন। মান্না আমাদের পার্টি করতে এসেছিলেন। স্বস্তি বোধ করেননি। সারাজীবন আওয়ামী লীগের বিপক্ষে লিখেছেন। আমি বললাম এত ভাল লেখেন, আপনার লেখার হাত ভাল। এতদিন বিপক্ষে লিখেছেন এবার পক্ষে লেখেন। তিনি লিখতেই পারেন না। লিখতে বললেই মান্না জুড়ে দেন কান্না আর আ স ম আবদুর রব ছাত্রলীগ করত। তিনি ছাত্রলীগ থেকে চলে গেলেন। আমরা ছাত্র বেলা থেকেই বলতাম-সময়ে নীরব-অসময়ে সরব-এই হলো আ স ম আবদুর রব। যাই হোক, তাদের নেতৃত্বে জোট হয়েছে থাক, অন্তত কনটেস্ট হবে। কারণ দেশে তো দুটো দল-একটি হলো আওয়ামী লীগ। আরেকটি এ্যান্টি আওয়ামী লীগ। কাজেই এ্যান্টি আওয়ামী লীগের তো একটা প্ল্যাটফর্ম লাগবে। তিনি বলেন, এই দেশের মানুষ এখন জানে, একটা গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে পরে দেশের যে উন্নতিটা হয়, এটা মানুষ খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে। সেই সচেতনতাটাও আছে। তারপরও ষড়যন্ত্র আছে, ষড়যন্ত্র থাকবে। যারা আমার বাবাকেই (জাতির পিতা) খুন করতে পারে, আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করে সফল হয়নি। হয়ত একদিন সফল হতেও পারে। এটা আমি সব সময় জানি। আর এটা জেনেই আমি বাংলাদেশে এসেছি। এটা জেনেই আমি রাজনীতি করে যাচ্ছি। আর এটা জেনেই কিন্তু আজকে এই উন্নয়নটা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভয়ে ভীত হয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। আমাকে কাজ করতে হবে। আর মৃত্যু, এটা তো উপরে আল্লাহর হাতে। আল্লাহ যখন লিখবে তখন মৃত্যু হবে। প্লেনের নাটবোল্ট তো খুলে গিয়েছিল, তাও তো বেঁচে গেছি। আল্লাহ তো আমাকে বাঁচিয়ে দিচ্ছেন বার বার। নিশ্চয়ই একটা কাজ দেয় এটুকু শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকতে হবে। তাই যতক্ষণ শ^াস আছে ততক্ষণ দেশের জন্য কাজ করে যাব। আমি একটা সময়ও নষ্ট করতে চাই না। কারণ সময়টা খুব মূল্যবান আমার দেশের মানুষের জন্য। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, একদিকে খুনী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী এমন বৈরি পরিবেশ মোকাবেলা করেই আমরা ক্ষমতায় এসেছি। সফলভাবে দেশ চালিয়ে দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছি। আর এবার টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হচ্ছে এবং জনগণ তার সুফলটা পাচ্ছে। এতটুকু যে করতে পেরেছি, আমি তাতেই খুশি। অন্তত মানুষকে দেখাতে পেরেছি যে, আন্তরিকতা ও দেশপ্রেম থাকলে দেশের উন্নয়ন করা যায়। আমরা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছি। আর অনেকের টার্গেটই তো আমি। একটু আন্দোলন দেখলেই তো অনেকে ঘাড়ে চড়ে বসেন। কেউ ঘাড়ে চড়ে বসলে আস্তে সরিয়ে দেই, তখন আবার পড়ে যায়। দেশকে উন্নতির শিকড়ে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কোন ম্যাজিক জানি না। দেশের প্রতি ভালবাসা, মানুষের প্রতি ভালবাসা আর কর্তব্যবোধ থেকেই দেশের জনগণ কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করব, দেশের উন্নতি করব এটাই হচ্ছে ম্যাজিক, আর কিছু না। আমি শ্রম দিতে পারি আর দেশের মানুষের জন্য কী করলে ভাল হবে, সেটুকু জানি। আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছি। নিজের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়েছি। সারাদেশ ঘুরে ঘুরে দেখেছি, মানুষের মূল সমস্যা কী কী। এ সময় গণমাধ্যম তার প্রতি বৈরী আচরণ করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো সব সময়ই মিডিয়ার বৈরী আচরণের শিকার হই। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় আমরা থাকি পাঁচ নম্বরে। যারা চুরি-ডাকাতি-খুনী-দুর্নীতিবাজ তারাই যেন বেশি ফেবার পায়। আর আমাদের পান থেকে চুন খসলেই সবাই চেপে ধরে। যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চায়নি সেই পাকিপ্রেমীদের বংশপরম্পরাই যেন সংক্রমিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীন করেছে, দেশকে সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছে- এটাই যেন আমাদের অপরাধ। বিএনপির কাছ থেকে কী ছবি বিকৃতি শিখেছে মিয়ানমার? ॥ মিয়ানমারে বিকৃত ছবি ছাপিয়ে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার ছবি বিকৃত করে জঘন্য কাজ করেছে। এতে দেশটি আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। তিনি বলেন, মিয়ানমার ছবি নিয়ে যা করল আমাদের দেশেও কিন্তু এই ঘটনা ঘটেছে। ছবি নিয়ে তেলেসমাতি কারবার করেছে বিএনপি-জামায়াত জোটও। তিনি বলেন, ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট এমন অপপ্রচার চালিয়েছে। একেবারে পবিত্র কাবা ঘরের সামনে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনের বিকৃত-মিথ্যা ছবি ছাপিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর নমুনাও আমরা দেখেছি। সুতরাং, এসব মানুষের কাছে ধরা পড়ে যায়। মিয়ানমার সরকারও ধরা পড়ে গেছে। তাই আমার প্রশ্ন হলো- এরা (মিয়ানমার) শিখল কার থেকে। বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে কি ছবি বিকৃতি করা শিখেছে মিয়ানমার? রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের আচরণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে সংঘাত চাই না। দেশটির ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। সহযোগিতা দিয়েছি। তাদের প্রত্যাবাসনে চুক্তিও হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনাও চলছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আপত্তিও করে না। বিসমটেক শীর্ষ সম্মেলনেও মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে তাদের কোন আপত্তি নেই জানিয়েছেন। কিন্তু মিয়ানমার বলে একটা, করে অন্যটা; এটাই হচ্ছে সমস্যা। ডেল্টা প্লান-২১০০ ॥ ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা প্লান-২১০০-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামী ১০০ বছরে কোন্ পর্যায়ে যাবে সেই পরিকল্পনা চলছে। ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত কী করব, তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, দিনবদলের সনদ চলছে। কাজ চলছে। তা অব্যাহত থাকবে। আর ২১০০ সালে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, বদ্বীপকে বাঁচিয়ে রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্যান্য অভিঘাত থেকে বাঁচাতেই এই প্লান। দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেই ডেল্টা প্লান-২১০০ বাস্তবায়ন হাতে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নেই। তবে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা গ্রহণে কাজ করে ফেলছি। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়া আসলে দেশের উন্নয়ন হবে না। সে লক্ষ্যে ২০১০ থেকে ২০, ২০২১ থেকে ৪১ সাল পর্যন্ত করণীয় অনেকদূর এগিয়েছে। ২০৪১ থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত কী হবে সেই পরিকল্পনাও দিয়ে যাচ্ছি। এ নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। দেশ এগিয়ে যাবে। বদ্বীপকে রক্ষা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেই ডেল্টা প্লান হাতে নেয়া হচ্ছে। জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নই আমার ইচ্ছা। আর কিছু চাই না।
×