ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধ ঠেকাতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা বিজিবির

টেকনাফে ১০ হাজার জেলে পরিবারে দুর্দিন

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 টেকনাফে ১০ হাজার জেলে পরিবারে  দুর্দিন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফে দশ হাজার জেলে পরিবার গত এক বছরের বেশি সময় ধরে নদীতে মাছ শিকার করতে না পেরে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধকল্পে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নাফ নদীতে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করেছিল। গত বছরের ২১ আগস্ট থেকে জেলেদের মৎস্য আহরণের ওপর মৌখিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিজিবি। যা এখনও বহাল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে রয়েছে টেকনাফের প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার। সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে বড় বড় ইয়াবার চালান দেশে প্রবেশ রোধকল্পে পরীক্ষামূলকভাবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে নাফ নদীতে এক মাসের জন্য জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করা হয়। এরপর শুরু হয় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। ওই নির্দেশের আওতায় এটিও যোগ হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলেরা খুশি হয়ে ইয়াবা পাচার রোধে সাড়া দেয়। একমাসের জন্য তারা কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করবে বলে মনস্থির করে। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে ইয়াবা কারবারিরা নাফ নদীর ধারে কাছেও যায়নি। ইয়াবা পাচার রোধে কিছুটা সফল হয়েছে প্রশাসন। ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গার ঢল নামলে সীমান্ত খুলে দেয়া হয়। বানের স্র্রোতের মতো অনুপ্রবেশ করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তবে নদীতে জেলেদের নৌকা নামানো বন্ধ থাকে। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে নাফ নদীতে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ রয়েছে। ফলে দৈনন্দিন সংসারের ব্যয় মেঠাতে না পেরে জেলে পরিবারগুলোতে অভাব অনটন দেখা দেয়। এতে দরিদ্র জেলে পরিবারগুলোর বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। শুধু জেলে পরিবারই নয়, বাজারে মাছের আকাল দেখা দেয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। টেকনাফ উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মোঃ সালাম জানান, নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় জেলেরা পরিবারের ব্যয়ভার মেঠাতে সাগরে মৎস্য আহরণ করে আসছিল। কিন্তু কোরবানির ঈদের আগের দিন থেকে বিজিবি সদস্যরা জেলেদের সাগরেও নামতে দিচ্ছে না। এতে দরিদ্র জেলে পরিবারগুলোর খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। উপকূলীয় মৎস্য ঘাটের অন্তত ১০ হাজার জেলে পরিবার বর্তমানে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। রেহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের কারও ‘পোষ মাস আবার কারও সর্বনাশ’ এ অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা সহকারী মৎস্য অফিসার শহীদুল আলম জানান, টেকনাফে ৭৭৮৩ জন নিবন্ধিত জেলে ও ইঞ্জিন-হস্তচালিত প্রায় দুই হাজার ফিশিং ট্রলার-নৌকা রয়েছে। যারা মূলত সাগর ও নদীতে মাছ শিকারের ওপর নির্ভরশীল। টেকনাফ দুই বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে.কর্নেল আছাদুদ জামান চৌধুরী জানান, সীমান্তে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জেলেদের সাগরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে এই পাড় থেকে কোন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে গিয়ে কোন ঘটনা ঘটাতে না পারে। আবার সেখান থেকে রোহিঙ্গারা যাতে এ দেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এ ব্যবস্থা সাময়িক বলে জানান তিনি। এদিকে কিছুদিন ইয়াবা পাচার বন্ধ থাকলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে ফের ইয়াবার চালান দেশে প্রবেশ করছে প্রতিনিয়ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কিছু কিছু চালান ধরাও পড়ছে। পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না ইয়াবা পাচার। কারণ আশ্র্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গারা স্বদেশে গিয়ে তাদের চেনাজানা স্থান থেকে নিয়ে আসছে ইয়াবার চালান। তারা আশ্র্রয় শিবিরে অবস্থান করে সব রকমের সুযোগ সুবিধা পাওয়া সত্বেও স্থানীয়দের আয়-রোজগারে ভাগ বসিয়েছে। দিনমজুর থেকে শুরু করে সব রকমের শ্রম কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। অতিরিক্ত রেশন বিক্রি, বিভিন্ন সংস্থা থেকে টাকা প্রাপ্তি, ছোটখাটো ব্যবসা করে অতিরিক্ত ইনকামসহ এনজিও সংস্থার নির্মাণ কাজেও শত শত রোহিঙ্গা দৈনিকভিত্তিক দিনমজুরের কাজ করে চলেছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয়দের মতে, রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা যেন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। স্থানীয়রা বলেন, ওই রোহিঙ্গাদের কারণে নানাভাবে কষ্টের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা। জেলেরা নদীতে ও সাগরে যেতে না পারায় এর প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারে। যে মাছ আগে প্রতিকেজি দুই থেকে তিন’শ টাকায় বিক্রি হত, তা বর্তমানে ৫-৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়রা বেশিদামে ওসব মাছ মুখে দিতে না পারলেও কিন্তু রোহিঙ্গারা ঠিকই চড়াদামে কিনে নিয়ে যাচ্ছে ওইসব মাছ।
×