ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাট চাষ কমলেও ভাল দামে খুশি কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 পাট চাষ কমলেও ভাল  দামে খুশি কৃষক

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর মাঠে মাঠে এখন সোনালি আঁশ পাটের কারবার নিয়ে ব্যস্ত কৃষক। এরই মধ্যে বাজারেও উঠতে শুরু করেছে পাট। প্রতিকূল আবহাওয়ায় রাজশাহীতে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে সোনালি আঁশখ্যাত পাটের আবাদ। তবে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় কম ফলনেই বেশি লাভে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। ক্ষেতের উৎপাদিত কষ্টার্জিত ফসল বিক্রি করে ভাল দাম পাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের চাষীদের আঙিনাজুড়ে এখন চলছে সোনালি উৎসব। রাজশাহী অঞ্চলে পুরোদমে পাট কাটা ও জাগ দেয়ার কাজ চলছে। পাট কাটা, পচানো ও শুকোনোর কাজেই দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের তৃণমূল কৃষক। এরই মধ্যে বাজারেও উঠেছে নতুন পাট। কৃষকরা জানান, আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় এবার বৃষ্টি কম হয়েছে এ অঞ্চলে। তাই ডোবা-নালা, খাল-বিলেও পানি কম। বেশিরভাগ গ্রামে মিনি পুকুর বা গর্ত তৈরি করে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট থেকে ছাড়ানো ছাল পচানোর কাজ চলছে। ভাল দামের আশায় সবকিছু ভুলে আবারও এই সোনালি আঁশকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন তারা। রাজশাহীর বিভিন্ন গ্রামের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা বলছেন, কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় এর কদর বাড়ছে। ফলে কৃষকরা পাটের ভাল দাম পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তারপরেও সরকার যদি পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে হারিয়ে যাওয়া সোনালি অতীত ফিরে পাবে পাটে। কৃষকের স্বপ্নও পূরণ হবে। রাজশাহীর পবা উপজেলার মথুরা গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন বলেন, এখন সরকারীভাবে খাদ্যশস্য মজুদে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়েছে। তাই এই অঞ্চলে আবারও পাটের চাহিদা বাড়েছে। পাটের হারিয়ে যাওয়া সুদিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। এজন্য অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা আগের চেয়ে বেশি জমিতে পাটের আবাদ করছেন। নুরুল আমিন জানান, গতবার তিনি এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। এ বছর দুই বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছেন। তবে গতবার বেশি বৃষ্টি হওয়ায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি। এবার অনেকেই মিনি পুকুর বা গর্ত তৈরি করে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট থেকে ছাড়ানো ছাল পচানোর কাজ করছেন। একই উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের কৃষক জয়নাল হোসেন বলেন, ভরা মৌসুমে বৃষ্টি হয়নি ঠিকই। কিন্তু শুরুর দিকে হরহামেশাই বৃষ্টি হয়েছে। আর অসময়ের এই বৃষ্টিতে গ্রামের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যায়। ফলে পাট চাষীরা সময়মতো বীজ বপন করতে পারেননি। এতে পাটের আবাদ এবার কিছুটা কমেছে। তবে শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এবার পাটের আবাদ করতে প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর বিপরীতে বিঘায় পাট উৎপাদন হয়েছে আট থেকে ১২ মণ। আর বাজারে এখন প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। গত বছর উঠতি মৌসুমে পাট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ফলে এবার পাট বেচে চাষীরা লাভের মুখ দেখছেন বলেও জানান কৃষক জয়নাল হোসেন। তবে মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না থাকলে পাটের দাম আরও বেশি হতো বলে মনে করেন পবা উপজেলার কর্ণহার গ্রামের কৃষক সাহবুল ইসলাম। তাই কৃষকরা যেন চলতি মৌসুমে পাটের ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য এখনই সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সরকার যদি পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে পাট ফিরে পাবে তার হারানো সোনালি অতীত। আর কৃষকের মুনাফার স্বপ্নপূরণ হবে বলেও দাবি করেন এই কৃষক। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, রাজশাহীতে এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৯১৫ হেক্টর। এর বিপরীতে পাটের আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। ফলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তথ্যমতে গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় আট হাজার বিঘা কম জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালি বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট কম উৎপাদন হয়েছে। তবে ফলন খারাপ হয়নি। এছাড়া বাজারে পাটের দাম ভাল। তাই কম ফলনেও কৃষকরা ভাল মুনাফা পাবেন। এতে পাটের প্রতি দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন কৃষি বিভাগের উর্ধতন এ কর্মকর্তা।
×