ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ার ইদলিবে শেষ ঘাঁটি হাতছাড়া হতে চলেছে

পতনের মুখে বিদ্রোহীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩১ আগস্ট ২০১৮

পতনের মুখে বিদ্রোহীরা

সিরিয়ার সরকারী বাহিনী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেছে। এটি দখলে নিতে পারলে ২০১১ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরুর প্রথমবারের মতো দেশের বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণের বাশার আল আসাদের সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। বিবিসি ও আলজাজিরা। ইদলিবকে টার্গেট করে আসাদ বাহিনী যখন তাদের রণনীতি ঠিক করছে সেই সময়ে সিরিয়াকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো যেমন ইরান, রাশিয়া, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুতে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন করে বিন্যস্ত করছে। ইদলিবের জনসংখ্যা ২০ লাখ। হায়াত তাহরির আশশাম (এইচটিএস) নামে একটি গ্রুপ অব্জলটি নিয়ন্ত্রণ করছে। গ্রুপটির সঙ্গে এক সময় আল-কায়েদার সম্পর্ক ছিল। রুশ বিমান ও নৌবাহিনীর সহায়তায় আসাদ সরকার ওই শহর অভিমুখে হামলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অন্যদিকে আসাদ বাহিনী যেন সেখানে অভিযানে না যায় সে লক্ষ্যে মস্কো ও আঙ্কারা কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ শহর অভিমুখে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তুরস্ককে আরেক দফা অভিবাসীর ঢল সামলাতে হবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসাদ বাহিনীর ইদলিব আক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। কারণ ইতিপূর্বে অনেক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলে আসাদ সরকারকে ঠেকিয়ে রাখা কঠিন হবে। শহরটি টার্গেট এ বছর আগেও কয়েকবার হামলা হয়েছে। আগস্টে আরও আগের দিকে ইদলিবে এক বিস্ফোরণে ১২ শিশুসহ অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়। বলা হয়েছিল, সারমাদা শহরে অবস্থিত একটি ভবনে একজন অস্ত্র চোরচালানকারীর গোলাবারুদ মজুদ করা ছিল। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শেষ এলাকা ইদলিব। একে আসাদ বাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য বলে কয়েক মাস আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছে। রাশিয়া এবং ইরানের আসাদ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সময় সময় অভিযান বিদ্রোহীদের ঘাঁটিগুলো নির্মূল করে ফেলেছে। আসাদের সহায়তায় মস্কো ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় সামরিক তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষের জীবন এখন ঝুঁকির মুখে আছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে। দেশটিতে আসাদ পরিবারের চার দশকের শাসনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের মার্চে যে গণআন্দোলন শুরু হয় ক্রমেই তা গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়। এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া গৃহহীন হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ লোক, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। গৃহহীনদের মোটামুটি অর্ধেকের মতো দেশের ভেতরই বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। যদিও এখন পরিস্থিতি মোটামুটিভাবে আসাদের নিয়ন্ত্রণে কিন্তু তিনি এখনও স্পষ্টত জয় দাবি করার মতো অবস্থায় আসেননি। সিরিয়ার ইদলিবের বিদ্রোহীরা ১ আগস্ট ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করেছে। ইসলামপন্থী গ্রুপ আহরার আশ শাম এবং নুরুদ্দিন আল জাঙ্কিসহ ছয়টি বিদ্রোহী গ্রুপ এই ফ্রন্টে রয়েছে। ইদলিবের প্রভাবশালী জিহাদী গ্রুপ হায়াত তাহরির আশশামকে (এইচটিএস) অবশ্য এই ফ্রন্টে রাখা হয়নি। সিরীয় বাহিনীর কৌশল এখন পরিষ্কার। প্রচ- সামরিক হামলার পাশাপাশি তারা সমঝোতার কথা বলে। কিন্তু এটি আসলে আলোচনার মাধ্যমে আত্মসমর্পণের আরেক নাম। দীর্ঘদিন ধরে আসাদ সরকারের শাসনের বিরোধিতা করে আসা বিভিন্ন গ্রুপ এখন হাল ছেড়ে দিচ্ছে। অন্যরা বলছে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। একই সঙ্গে সিরীয় ও রুশ বাহিনীর সঙ্গে তাদের পেরে ওঠা কঠিন। রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাত, যুদ্ধ, দেশটির শহরগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। কিন্তু আসাদ সরকারের টিকে থাকার চেষ্টায় অনমনীয়।
×