ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সাগরে মৌসুমি নিম্নচাপ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৬ আগস্ট ২০১৮

প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সাগরে মৌসুমি নিম্নচাপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার বর্ষার বিদায় বেলায়ও দেখা মেলেনি কাক্সিক্ষত বৃষ্টি। প্রচণ্ড গরমে প্রকৃতিতে হাঁসফাঁস অবস্থা। ঠিক বর্ষার শেষ দিনে আবহাওয়া অফিস খবর দিল সাগরে স্থল মৌসুমি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দেশের সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় জেলাসমূহে স্বাভাবিক জোয়ারের ২ থেকে ৩ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। বাংলা মাস শ্রাবণকে বলা হয় বৃষ্টিপাতে মাস। এই মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় বলে মাসটিকে অনেক কবিতা, গান ও সমৃদ্ধ সাহিত্য রচনা করাও হয়েছে। অনেক চলচ্চিত্রও নির্মাণ করা হয়েছে এই মাসকে নিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি শ্রাবণের আচরণ দেখে এই মাসে চরিত্র ও ধরন বোঝা খুবই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ষড়ঋতুর এই বাংলায় অন্য মাসের ন্যায় এখন শ্রাবণের চরিত্রও বদলে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে ২০০১ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এই ১৮ বছরের মধ্যে ১৭ বছরই অত্যন্ত উষ্ণ ছিল। এবারে গ্রীষ্মে দেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা গেলেও বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিপাত প্রায় উধাও। মাঝখানে নিম্নচাপের প্রভাবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত বাদ দিলে এবারের শ্রাবণ প্রায় বৃষ্টিহীন থেকেছে। অথচ গত বছর শ্রাবণ জুড়ে ছিল বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অফিস বলছে এ বছর শ্রাবণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবার ছিল এ বছরে শ্রাবণের শেষ দিন। আজ থেকে প্রকৃতিতে নতুন ঋতু শরতের শুরু হচ্ছে। কিন্তু দু’একটি বিচ্ছিন্ন বৃষ্টির ঘটনা বাদ দিলে এ বছর শ্রাবণে বৃষ্টিপাত হয়নি বললে চলে। মাস জুড়ে ছিল গরমের বাড়াবাড়ি। এছাড়া এই মাসেই মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বর্ষার এই বিদায় বেলায় বৃষ্টি বদলের প্রচ- গরমের প্রভাব রেখেই বিদায় নিয়েছে শ্রাবণ। গত কয়েকদিনে প্রচ- গরমে প্রকৃতি যেন অতিষ্ট। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম বেশি অনুভব হচ্ছে। তারা জানায় নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হলে গরমের প্রভাব কেটে যাবে। গত কয়েকদিনে সাগরের লঘুচাপের কারণে প্রকৃতি অস্থির রয়েছে। বর্তমানে তা স্থল মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বুধবার আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি সামান্য পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে উপকূলীয় উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় স্থল মৌসুমি নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মৌসুমি নিম্নচাপটির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
×