ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

নগরজুড়ে পরিবহন সঙ্কট

চুক্তিভিত্তিক ও হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৪ আগস্ট ২০১৮

   চুক্তিভিত্তিক ও হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালিক সমিতির হুঁশিয়ারির পরও রাজধানীতে চুক্তিভিত্তিক ও হেলপার দিয়ে বাস চালানো বন্ধ হয়নি। সেইসঙ্গে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলছে দেদার। কাগজপত্র ছাড়াও গাড়ি চালানোর অভিযোগ মিলেছে। তবে সোমবার পরিবহন মালিক সমিতি ও পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানীতে বাস চলাচল অনেক কম ছিল। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বলেছেন, ঈদে ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে চলতে দেয়া হবে না। চালকের সহযোগী (হেলপার) দিয়ে যাত্রীবাহী বাস চালানোয় ২ চালককে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির গঠিত ভিজিলেন্স টিম। সেই সঙ্গে কাগজপত্র না থাকায় ওই দুটি পরিবহনসহ মোট তিনটি বাসকে জব্দ করেছে টিম। সকাল থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভিজিলেন্স টিমের অভিযানে গাজীপুর পরিবহনের (১১-৮৮৪১) কোন ধরনের কাগজপত্র না থাকা ও গাড়ি চালানোর দায়ে চালকের সহযোগী আলমকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়। পাশাপাশি গাড়িটি জব্দ করা হয়। একই অপরাধে বোরাক পরিবহনের (১৪-২১৬২) চালকের সহযোগী বাপ্পীকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়। পাশাপাশি গাড়িটিও জব্দ করা হয়। এ সময় ফিটনেস সনদ ছাড়া গাড়ি চালানোর দায়ে ট্রান্সসিলভা পরিবহনের (১৫-৩৩৩২) গাড়িটি আটক করে রাখা হয়। এছাড়া টার্মিনাল থেকে কাগজপত্রবিহীন কোন গাড়ি চলতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি। ভিজিলেন্স টিমের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে সড়কে পরিবহন ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাস মালিক-শ্রমিকদের গঠিত সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোট ৪টি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হয়। টিমের সদস্যরা গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফিটনেসসহ যাবতীয় বৈধতা নিশ্চিত করে গাড়ি রাস্তায় নামতে দিচ্ছে। অন্যথায় টার্মিনাল থেকে গাড়ি বের হতে দেয়া হচ্ছে না। গঠিত কমিটির সংশ্লিষ্টরা মহাখালী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, গুলিস্তান-টিভিসি রোড, ফুলবাড়িয়া সিটি স্টপওভার বাস টার্মিনাল এবং মিরপুর, পল্লবী ও গাবতলী এলাকায় পরিবহন সংগঠনের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সেগুলো মনিটরিং করছেন। এর মধ্যে রাজধানীর পাঁচ হাজার বাস মালিককে মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। ১৫ আগস্ট থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট ॥ এদিকে ১৫ আগস্ট থেকে শুরু হবে ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। ঈদ ফেরত অগ্রিম টিকেট রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিক্রি শুরু হবে। ফিরতি টিকেট ১৫ আগস্টে পাওয়া যাবে ২৪ আগস্টের টিকেট। একইভাবে ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ আগস্ট যথাক্রমে পাওয়া যাবে ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮ আগস্টের টিকেট। টিকেট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টায়। বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রতিদিন ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করলেও ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে দৈনিক ৩ লাখ যাত্রী চলাচল করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরিবহন সঙ্কট ॥ শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন আর শ্রমিকদের অবরোধের পর রাজধানীতে ফের গণপরিবহন সচল হলেও বাস ও অন্যান্য গণপরিবহনের তীব্র সঙ্কট ছিল দিনভর। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কড়া নজরদারিতে গণপরিবহন কম নামায় শহরজুড়ে সকাল থেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মমুখী যাত্রীরা। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও দেখা মিলছে না কাক্সিক্ষত পরিবহন সেবার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোন বাসের দেখা না পাওয়ায় অনেকে হেঁটেই সকালে অফিসমুখী হয়েছেন। আবার কেউ কেউ অতিরিক্ত টাকা করে কেউ রিক্সা কিংবা ভ্যানে অফিসের পথে রওনা দেন। কোথাও কোথাও মিনি পিকআপগুলোও এখন যাত্রীদের ভরসা হয়ে উঠেছে। তবে বাস সংকটে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব বাসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে সেগুলোই রাস্তায় নামানো হয়েছে। তাছাড়া এখন বেশকিছু বাস মালিক-শ্রমিক সমঝোতায় টার্গেট প্রথায় চলাচল করছে। সায়েদাবাদ মোড় থেকে মোহাম্মদপুর যাওয়ার জন্য প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা হালিম ও সোহেল বলেন, তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সকাল দশটায় অফিস। তাই বাসা থেকে বের হয়েছেন আটটায় কিন্তু পৌনে দশটা পর্যন্ত কোন বাসেই উঠতে পারেননি। মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট, মিরপুরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাস চলাচল কম দেখা গেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আমরাও পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। এ জন্য আমরা কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সেগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্থানে আমাদের ভিজিলেন্স কমিটি কাজ করছে। এ কারণে ফিটনেসবিহীন বাসগুলো রাস্তায় নামতে না দেয়ায় বাস সঙ্কট হচ্ছে। সেগুলো উপযুক্ত করে তবে সড়কে চলাচল করবে এবং সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ততদিন পরিবহন সঙ্কটে সৃষ্ট দুর্ভোগের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। এদিকে পরিবহনের ফিটনেস ও লাইসেন্সের জন্য শুক্র ও শনিবার দুই দিন বিআরটিএ কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো খোলা রাখা হয়েছিল। কর্মকর্তারা জানান, ছাত্র আন্দোলন, মালিক সমিতির কঠোর সিদ্ধান্তও পুলিশের নজরদারির কারণে আগের চেয়ে বিআরটিএ কার্যালয়ে চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। বেশিরভাগ মানুষ গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট, নতুন লাইসেন্স নেয়া ও লাইসেন্স নবায়নের জন্য আসছেন। এদিকে ১০ আগস্ট থেকে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করলেও যাত্রী ভিড় তেমন একটা নেই। বেশিরভাগ টিকেট অবিক্রীত থাকার কথা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ১৬ আগস্ট থেকে বিআরটিসি ৪৫০টি বাস দিয়ে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস শুরুর কথা আছে। দিনভর অভিযান ॥ রাজধানীতে দিনভর অভিযান চালিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয়ে ভিজিলেন্স টিম। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা সামদানি খন্দকার জানান, কাগজপত্রে ত্রুটি থাকার কারণে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা রুটের ১০টি গাড়ি ছেড়ে যেতে দেয়া হয়নি। মিরপুরে সাতটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। হেলপার গাড়ি চালানোর কারণে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে একজনকে পুলিশে সোপর্দ করেছে ভিজিলেন্স টিম। কাগজে জটিলতা থাকায় বংশালে তিনটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
×