ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাসজুড়ে বরিশালে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

‘বঙ্গবন্ধু অসহায়ের পাশে থেকে ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় করতে শিখিয়েছেন’

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৩ আগস্ট ২০১৮

 ‘বঙ্গবন্ধু অসহায়ের পাশে থেকে ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় করতে শিখিয়েছেন’

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকের নির্মম বুলেটে শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাতে শোকের মাসজুড়ে বরিশালে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দরিদ্র পরিবারে চোখ থাকতেও যারা ছানি, কর্নিয়া, নেত্রনালীর রোগসহ অর্থাভাবে চোখে লেন্স লাগাতে না পেরে অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বরিশাল সদর উপজেলার বাটনা, সাহেবেরহাট, কড়াপুরের দিনারেরপুল ও চরকাউয়ায় পৃথক চারটি ক্যাম্পের মাধ্যমে ১৫শ’ রোগী শনাক্ত করে ইতোমধ্যে এক হাজার রোগীর বিনামূল্যে ছানি, কর্নিয়া অপারেশন, চোখের লেন্স এবং ৫০ রোগীর নেত্রনালী অপারেশন করানো হয়েছে। অন্যদের অপারেশনপূর্ব চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শনাক্ত রোগীদের অপারেশন করানো হবে। দরিদ্র পরিবারের সহ স্রাধিক নারী-পুরুষের চোখের আলো ফিরিয়ে দেয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপনের পর এবার শোকের মাসজুড়ে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের দরিদ্র পরিবারের সদস্যের মধ্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নগরীর সাগরদী এলাকার প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে দুই শতাধিক রোগীর চোখের ছানি, কর্নিয়া ও নেত্রনালী অপারেশনসহ চোখের লেন্স লাগানোর জন্য শনাক্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে দরিদ্র পরিবারের এসব রোগীদের অপারেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শোকের মাসজুড়ে আর্থিকভাবে অসচ্ছল রোগীদের চক্ষু সেবার লক্ষ্যে নিজস্ব অর্থায়নে ব্যতিক্রমী ও মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করে সর্বত্র ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী এসআর সমাজ কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বৃদ্ধ মরিয়ম বিবি বলেন, শেষ বয়সে এসে অর্থাভাবে চোখের ছানি অপারেশন করাতে না পেরে এক ধরনের অন্ধত্ব অবস্থায় দিনাতিপাত করেছি। শেষ পর্যন্ত বিনা পয়সায় চোখের ছানি অপারেশন করাতে পেরে এখন আমি স্পষ্টভাবে দুনিয়ার আলো দেখতে পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, অপারেশন, ওষুধ, চশমা সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন রিপন (সালাহউদ্দিন রিপন) বাবায়। বিনিময়ে সে (রিপন) শুধু আমার কাছে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া চেয়েছেন। শুধু মরিয়ম বিবিই নয়, অনেক হতদরিদ্র ব্যক্তি চোখের চিকিৎসা বিনামূল্যে করাতে পেরে মহাখুশি। রোগীরা জানান, চোখের অসুখ নিয়ে তাদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল, যা ক্যাম্পের চিকিৎসকের পরামর্শে কেটে গেছে। অনেকেই টাকার অভাবে ও ভ্রান্ত ধারনায় থেকে দীর্ঘদিন চোখের চিকিৎসা করাননি। তারা চিকিৎসকের আশ্বাসে ও সালাহউদ্দিন রিপনের সম্পূর্ণ আর্থিক সহযোগিতায় বিনামূল্যে চোখের ছানি, নেত্রনালী অপারেশনসহ চশমা, ওষুধপত্রের মাধ্যমে পুনরায় দৃষ্টি ফিরে পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছেন। সালাহউদ্দিন রিপনের আর্থিক সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী এসআর সমাজ কল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। ইনস্টিটিউটের বরিশাল প্রধান ডাঃ নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শফিক শাহরিয়ার জানান, বিনামূল্যে এ ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশেরই ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেক রোগী টাকার অভাবে মূল্যবান চোখ দিনে দিনে নষ্ট করে ফেলছেন। তারা আরও বলেন, ইতোমধ্যে যাদের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে তারা পুনরায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন। অন্যদের অপারেশনপূর্ব পরামর্শ ও বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসা ক্যাম্পের অপর চিকিৎসক ডাঃ মীর নাজমুস সাদাত ও ডাঃ ফজলে রাব্বী বলেন, শোকের মাসজুড়ে স্বেচ্ছাসেবী এসআর সমাজ কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন রিপনের এই মহতী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা নিজেদের গর্বিত মনে করছি। তারা আরও বলেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাহউদ্দিন রিপনের ন্যায় সমাজের প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য ব্যক্তি নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শীঘ্রই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবে রূপান্তরিত হবে। সংস্থার সভাপতি নজরুল ইসলাম আকন ও প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ আব্দুল মালেক হাওলাদার, সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক আলম লিটন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ওহাব মিয়া, ডাঃ আব্দুল মালেক, রুস্তুম আলী ফরাজীসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, শুধু বিনামূল্যে চক্ষু সেবাই নয়, সংস্থার চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলহাজ মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন ব্যক্তিগত উদ্যোগে সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের সর্বত্র দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, পরীক্ষার ফি প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহযোগিতা, বিধবা, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা এবং গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসায় সবধরনের আর্থিক সহায়তা করে আসছেন। এছাড়া নারী জাগরণের অগ্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ অনুসরণ করে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন খামার করে দিয়ে সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার দরিদ্র পরিবারের ১৭ হাজার নারীকে আজ পুরোপুরি সাবলম্বী করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাহউদ্দিন রিপন অসহায় মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। সংস্থার চেয়ারম্যান আলহাজ মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানব কল্যাণে অসহায়ের পাশে থেকে ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় করতে শিখিয়েছেন। তার (বঙ্গবন্ধু) কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার পর তাদের অন্ন, বস্ত্র ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে বিশ্বজুড়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মানবতার মা হিসেবে খেতাব অর্জন করেছেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ও শেখ হাসিনার একজন সামান্য কর্মী হিসেবে আমি আমার সাধ্যের মধ্যে বরিশাল নগরী ও সদর উপজেলার একজন অসচ্ছল মানুষও যেন অর্থাভাবে অন্ধত্ব অভিশাপে না ভোগে সেই উদ্দেশ্য নিয়েই শোকের মাসজুড়ে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
×