ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র যেভাবে করা হয়েছিল ছাত্র আন্দোলন ঘিরে

১৫ আগস্টের মধ্যেই নীলনক্সার বাস্তবায়ন!

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১০ আগস্ট ২০১৮

১৫ আগস্টের মধ্যেই নীলনক্সার বাস্তবায়ন!

বিভাষ বাড়ৈ ॥ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপে ‘কোটা সংস্কার’ ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও সরকারবিরোধী এজেন্ডা নিয়ে মাঠে সক্রিয় বিশেষ শক্তি। বন্ধ হয়নি সরকারবিরোধী মিথ্যা ও বিকৃত তথ্যনির্ভর অপপ্রচার। ছাত্রলীগকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করাসহ সরকারবিরোধী নানা প্রপাগান্ডা নিয়ে চলছে নতুন খেলা। শিশুদের আবেগ পুঁজি করে নাশকতায় উস্কানি দিয়ে সরকার উৎখাতের স্বপ্নে বিভোর তৃতীয় পক্ষের উদ্বেগজনক চেহারা। নীল নক্সা বাস্তবায়িত হলে ১৫ আগস্টের মধ্যে সরকার পতন ঘটবে এমন আশায় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে উদ্বেগজনক তথ্যও বেরিয়ে আসছে। কোটা সংস্কার ও নিপরাদ সড়ক চাই আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার পর সরকার ইতোমধ্যেই কাজ করেছে। নিরাপদ সড়কের জন্য অন্যতম দাবি নতুন আইন অনুমোদনসহ বেশকিছু কাজ চলছে। শিক্ষার্থীরাও ফিরেছে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শুরু হয়েছে ক্লাস। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় সরকারবিরোধী বিশেষ গোষ্ঠী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে ছাত্রদল-শিবিরের নাশকতার তথ্য-প্রমাণ একের পর বেরিয়ে এলেও তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে নারাজ বিশেষ গোষ্ঠীর আস্থাভাজন সুশীল সমাজের ব্যক্তিরাও। যারা রামদা চাপাতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মিছিল, ব্যাগে ব্যাগে রামদা নিয়ে ছাত্রদল-শিবিরের চিহ্নিত ক্যাডারদের ভিডিও ফাঁস গণমাধ্যমে আসার পরও ওদিকে চোখ তুলতে রাজি নন। তারা এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও সকল সংঘর্ষের জন্য সরকারকে দায়ী করে রীতিমতো সরকারবিরোধী প্রকাশ্য রাজনীতিকে নামছেন। এমনকি ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রদল-শিবিরের নতুন প্রপাগান্ডায় যোগ দিয়েছেন অনেকে। অনলাইনে চলছে এ প্রপাগান্ডা। যেখানে বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রদল-শিবির চালাচ্ছে অনলাইনে নিবন্ধন কার্যক্রম। নেয়া হচ্ছে ভোটও। ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসবে চিন্তিত করার আশায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে লাখ লাখ লোকের স্বাক্ষরিত আবেদন জমা দিয়ে চলছে অপপ্রচারসহ নানা তৎপরতা। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মেইল যোগে চলছে এ অপতৎপরতা। ঘটনা ইতোমধ্যেই নজরে এসেছে সরকার ও ছাত্রলীগ নেতাদের। তবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসছে নিরাপদ সড়কের জন্য শিশুদের আন্দোলনকে পুঁজি করে নাশকতায় উস্কানি দেয়া বিএনপি-জামায়াতের হাইকমান্ডের গোপন মিশনের চেহারা। মিশন বাস্তবায়িত হলে ১৫ আগস্টের মধ্যে সরকার পতন ঘটবেÑ এমন আশায় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে উদ্বেগজনক তথ্যও মিলছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ১৫ আগস্ট ঢাকায় আসার স্বপ্ন ছিল তারেক রহমানের ॥ নীল নক্সা বাস্তবায়িত হলে ১৫ আগস্টের মধ্যে সরকারের পতন ঘটত। আর ঐ দিনই লন্ডন থেকে দেশে ফিরতেন তারেক জিয়া। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের মোড়কে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র এমনই ছক আঁকা হয়েছিল। সূত্রগুলো বলছে, ৪ আগস্ট শনিবার ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। আন্দোলনকে সশস্ত্র রূপ দিতে ঐ দিন অন্তত তিন হাজার সশস্ত্র ক্যাডার ঢাকায় নামানো হয়েছিল। ধানম-ি দুই নম্বর সড়কে সংঘাত সৃষ্টিও করা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গুজব ছড়িয়ে লোকজনকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার কথা ছিল। বিক্ষুব্ধ মানুষজনকে ধানম-ি ৩ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ কার্যালয় আক্রমণে প্ররোচিত করা হয়েছিল। বিশেষ গোষ্ঠীর ধারণা ছিল, অফিসে শিক্ষার্থীদের ধরে আটকে রাখা ও ধর্ষণ করার গুজব ছড়ালে আওয়ামী লীগ অফিস জ্বালিয়ে দেবে জনতা। এরপরই সারা ঢাকায় পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এ সময় আরও ১০ হাজার বিএনপি জামায়াতের ক্যাডার রাস্তায় নামবে এবং তা-ব সৃষ্টি করবে। ৪ আগস্ট থেকে রাজপথ দখলে রেখে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থানের কর্মসূচী তৈরিই করে রেখেছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। লন্ডনে পলাতক দ-িত তারেক জিয়ার একটি বক্তৃতাও প্রস্তুত করা হয়েছিল। তারেক বিএনপি নেতাদের জানিয়েছিলেন যে, ১০ দিনের মধ্যেই সরকারের পতন ঘটানো হবে। পরিকল্পনা ছিল, রাজপথে জ্বালাও-পোড়াও এবং গণআন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দাতা দেশ একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য চাপ দেবে। আর এ রকম একটি সরকারের প্রধান হবেন বিশেষ গোষ্ঠীর পছন্দের ‘নিরপেক্ষ এক আইনজ্ঞ’। সে লক্ষ্যেই মোহাম্মদপুরে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে বৈঠকও হয়েছিল বলে ধারণা করছেন অনেকে। সূত্র নিশ্চিত করেছে, খালেদা জিয়াকে মুক্তির শর্তে ওই আইনজ্ঞের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিতে রাজি ছিল বিএনপি। ৬ আগস্ট নাগরিক সমাজের প্রেসক্লাবের সভায় ‘চলমান পরিস্থিতিতে’ একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি উত্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু এই নীল নক্সা বেশিদূর এগুতে পারল না। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যানুযায়ী, কিছু মানুষ বিশ্বাস করলেও অধিকাংশ মানুষই সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করা পুরনো, বিদেশী এবং সম্পাদিত ছবি ও ভিডিওগুলো বিশ্বাস করেনি। অনেকে উত্তেজিত হলেও খোঁজখবর নিয়ে আশ্বস্ত হন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ৪ আগস্ট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। ফলে, নীল নক্সার বাস্তবায়ন হয়নি। ৫ আগস্ট আবার আওয়ামী লীগ কার্যালয় আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল। ঐ দিন শাহবাগে জড়ো হওয়া অধিকাংশই ছিল ছাত্রদল এবং শিবিরের ক্যাডার। পুরো ঘটনা তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা নিয়ে অপতৎপরতা ॥ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও সীমাহীন ষড়যন্ত্র চলছে বলে নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যেখানে বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রদল-শিবির চালাচ্ছে অনলাইনে নিবন্ধন কার্যক্রম। নেয়া হচ্ছে ভোটও। ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসবে চিন্তিত করার আশায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে লাখ লাখ লোকের স্বাক্ষরিত আবেদন জমা দিয়ে চলছে অপপ্রচারসহ নানা তৎপরতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেও বলেছেন, ছাত্রলীগকে একটি মহল সন্ত্রাসী বানানোর জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। ছাত্রলীগের নামে অপপ্রচার করে তাদের জনবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। এসব উস্কানিমূলক ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। তোমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ফেসবুকে এ্যাটাক করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গালাম রাব্বানী বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপতৎপরতা চলছে। জামায়াত-শিবির কোটা আন্দোলনের মতো লন্ডনের নতুন হাওয়া ভবন থেকে দেয়া অর্থে ড. কামাল, জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থী সুশীলদের প্রত্যক্ষ মদদ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের এ যৌক্তিক আন্দোলন ভ-ুলের চেষ্টা করেছে। তবে তারা ব্যর্থ। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৭০০টি ফেসবুক আইডি শনাক্ত করেছি। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি এবং প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। যারা ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী থাকতে ১৫ আগস্ট বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন এবং খালেদা জিয়াকে জন্মদিন পালন করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি জানান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উস্কানি দিয়েছেন পাকিস্তানি দুই ইউটিউবার ॥ নিরাপদ সড়কের দাবিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দিয়েছেন পাকিস্তানি এক ইউটিউবার। তার নাম শাম ইদ্রিস। ৭ আগস্ট তার ভেরিফায়েড ইউটিউবে চ্যানেল শাম ইদ্রিস ব্লগ-এ এক মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। এ সময় তার সঙ্গে আরেক তরুণী ছিল। পাকিস্তানের জনপ্রিয় এই ইউটিউবার শাম ইদ্রিস সালাম দিয়ে বলেন, এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও। কারণ আমি আমার বাংলাদেশের ভক্তদের কাছ থেকে সহস্রাধিক বার্তা পেয়েছি। আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। এটা নিয়ে কেউ কথা বলছে না। এ সময় তার সঙ্গে থাকা তরুণী ঘটনার বর্ণনায় মিথ্যা তথ্য দিতে থাকেন। ওই তরুণী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে এবং কয়েকজন আহত হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ বিষয়ে প্রতিবাদ করছে। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে প্রতিবাদ করছিল। কিন্তু সরকার তাদের প্রতিবাদ করতে দেয়নি। প্রতিবাদী শান্ত শিক্ষার্থীদের সড়কে হত্যা করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে। ছাত্রীদের সড়কে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমি এ ধরনের ছবি দেখেছি। আমি মনে করছি, তারা কোন ভুল করেনি। তারা অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপদ করতে চেয়েছিল। তার কথা শেষ হওয়ার পর শাম ইদ্রিস আবার মিথ্যা তথ্য দিতে থাকেন। এই ইউটিউবার বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে সরকার একটি ইস্যু তৈরি করে টেলিফোন লাইন বন্ধ করে দেয়। গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করতেও বাধা দেয়। বিশ্ব জানে না একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচীতে নির্দোষ মানুষ মারা যাচ্ছে। অথচ কেউ কিছু বলছে না। এ সময় তরুণীটি আবার বলেন, সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিন। বন্ধু, পরিবার ও স্বজনের সঙ্গে এই ভিডিও শেয়ার করুন। নির্দোষ মানুষের সঙ্গে বেআইনি আচরণ করা হচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই। শাম ইদ্রিস ভিডিও শেষ করার আগে বলেন, আজ যা অন্যের সঙ্গে ঘটছে, তা আগামীতে আপনার সঙ্গেও ঘটতে পারে। তাই সচেতনতা সৃষ্টি করুন। নির্দোষ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। তার এই ভিডিও আড়াই লাখ মানুষ দেখছে। কয়েক হাজার ব্যক্তি এই ভিডিওতে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও একই নামে একটি ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। সেখানেও পাঁচ লাখ ৮২ হাজার বার ভিডিওটি দেখা হয়েছে। শাম ইদ্রিস পাকিস্তানের মডেল। নিজস্ব ওয়েবসাইটে তার পরিচয় লেখা হয়েছে, তিনি ইউটিউবার, পরিচালক, মিউজিশিয়ান ও ব্লগার। তার ফেসবুক পেইজে ছয় মিলিয়ন (৬০ লাখ) ভক্ত রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা বলেছেন, এ বিষয়ে অবশ্যই রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে পারে। সেজন্য প্রথমে আমাদের সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একটি মামলা রুজু করতে হবে। এরপর গুজব রটনাকারীর আইপি এ্যাড্রেস নিতে হবে। তা মামলায় উল্লেখ করতে হবে। গুজবকারী যে রাষ্ট্রেরই হোক, এটা কোন বিষয় না। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এই বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এই মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিতে পারে পুলিশ। এছাড়াও ইউটিউবকে মামলার বিষয়টি অবহিত করলে তারাও ব্যবস্থা নেবে। পৃথিবীর যেখান থেকেই গুজব বা ভুল তথ্য বা উস্কানি দেয়া হোক, তাকে আমাদের আইনে ধরা সম্ভব। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, যেখানে বসে যেই গুজব ছড়াক, তাকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব। এজন্য মামলার পর ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া যায়। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবসময় মনিটরিং করছি। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে ‘উস্কানিমূলক ও মিথ্যা’ খবর প্রচারের দায়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল জুম বাংলার সিইও ইউসুফ চৌধুরী (৪০) এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়ে সহিংসতার আহ্বান জানানোর অভিযোগে বুয়েটের ছাত্র দাইয়ান আলমকে (২২) গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এডিসি নাজমুল ইসলাম বলেন, দাইয়ান ফেসবুক লাইভ ও পোস্টসহ নানান কন্টেন্ট পোস্ট ও শেয়ার করে চলমান স্বাভাবিক আন্দোলনকে সহিংস করতে ভূমিকা রাখে বলে তদন্তে জানা গেছে। অন্যদিকে জুমবাংলা অনেকদিন ধরে অনলাইনে হলুদ সাংবাদিকতা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি চলমান আন্দোলনের সময় পোর্টালটি পুলিশের অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক ছবি প্রকাশ করে আন্দোলনকে উস্কে দেয়। এছাড়া গুজব ছাড়ানো ছাড়াও খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ তথ্য ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফার্মেসি বিভাগের মতিউর রহমান পিয়াল। যিনি শেখ হাসিনাকে ‘শেখ হায়না’ বলার মতো ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। যিনি এখন স্কালারশিপ নিয়ে বিদেশে আছেন বলে জানা গেছে। বুয়েটের আইপিই বিভাগের শিক্ষক পারমিতি প্রিয়ংকার বিরুদ্ধেও তীর্থ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ পোস্ট নেয়ার তথ্য মিলেছে। তিনি এখন বিদেশে পিএইচডিরত আছেন। দুজনের বিষয়ে তদন্তে মেনেছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বদিউল আলম মজুমদান ও আলোকচিত্রী শহীদুল আলমের ইস্যুতেও বিতর্ক ॥ ৪ আগস্ট বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে এনজিও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার তার নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠান করেছে। তার ভাষায় পারিবারিক অনুষ্ঠান। কিন্তু কোন প্রত্যক্ষদশী না পাওয়া গেলেও সে অভিযোগ করেছেন অনুষ্ঠান শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত যাওয়ার সময় গাড়িবহর ও তার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন অনকেই। যারা কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই প্রকাশ্যে সরকারকে দায়ী করছেন। যা গড়িয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। যারা সক্রিয় হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই আবার বিএনপির আস্থাভাজন বলে চিহ্নিত। প্রশ্ন উঠেছে তাদের সক্রিয় হওয়া ও সরকারের ওপর দায় চাপানোর উদ্দেশ্য নিয়ে। তবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ৪ আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িবহর ও আমার বাড়িতে হামলার ঘটনাটি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র তথ্যের গল্প ফাঁদছে। বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি অবশ্য বলেছেন, আমার জানামতে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের। রাষ্ট্রদূত আমার বাসায় যখন আসেন তখন তার সঙ্গে সিকিউরিটি প্রটেকশনের দুটি সরকারী গাড়ি ছিল এবং তাদের তৎপরতার ফলেই তিনি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত প্রস্তান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এদিকে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টায় আটক আছেন দৃক ফটোগ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ও ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলম। তার মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ভারতীয় আলোকচিত্রী রঘু রাই। প্রধানমন্ত্রীকে রঘু রাই লেখেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীকে সমর্থন ও সহযোগিতা করায় ২০১২ সালে ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আপনি সম্মানিত করেছেন। দেশ বিভাজনের সময় বাংলাদেশের অনেক কবি, লেখক, সঙ্গীতশিল্পী ভারতে চলে আসেন। শুধু সাংস্কৃতিকভাবে গভীর নয়, আত্মার দিক থেকেও আমাদের বন্ধন ভাল। তিন দশক ধরে দৃক ও পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে জানার সুযোগ আমার হয়েছে। তিনি শেখ সাহেবের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) একজন ভক্ত। তবে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন দৃক ফটোগ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা ও ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলম। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তা মশিউর রহমান সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন। মশিউর রহমান বলেন, ফেসবুক লাইভে দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছাত্র আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। শহিদুল আলমের বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, তার অপরাধটা রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যাকে আইনের সমস্ত রকম ফর্মালিটিজ দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার অপরাধটা রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ। সে বিদেশী চ্যানেলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা রকম অসত্য কথা বলেছে, উস্কানিমূলক কথা বলেছে। সরকার পতন হয়ে যায় এ রকম কথা বলেছে। কাজেই এই লোককে আপনার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে এটাই স্বাভাবিক। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ॥ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিটা পয়েন্টে পয়েন্টে ছাত্রদের কাছে গিয়েছি। তাদের সবক’টা দাবি সরকারের মেনে নেয়ার কথা বুঝিয়েছি। তাদের আশ্বস্ত করেছি যে যদি এ দাবি আদায়ে কালবিলম্ব বা গড়িমসি হয় তাহলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আপনাদের পাশে এসে আন্দোলন গড়ে তুলবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আয়োজিত এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতারা এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করতে বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতেই আজকের এ ছাত্র সমাবেশ। যারা ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, এদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে তাতে জামায়াত-বিএনপি, ছাত্রদল ছাত্রদের বিভ্রান্ত করে আন্দোলনের ফায়দা লুটতে চায়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে যৌক্তিক একটি আন্দোলনেও তারা বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়িয়েছে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার ও সীমাহীন গুজব ছড়াচ্ছে। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। তারা বলেন, আমারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে কোন আন্দোলনকে স্বাগত জানাই। তাদের যে কোন জাগরণ ও ন্যায়ের প্রতি নৈতিক সমর্থন রয়েছে। যারা একটি সামাজিক আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে অপরাজনীতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন হলো গণতন্ত্রের শর্ত কী আইনের শাসন নাকি সন্ত্রাসবাদী কায়দায় দেশকে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে? আজকে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তা অতীতেরই ধারাবাহিকতা। বিগত জাতীয় নির্বানের সময়েই বিএনপি-জামায়াত আগুন সন্ত্রাস এ পেট্রোল বোমার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চেয়েছে।
×