ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশৃঙ্খলার মহোৎসব

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৯ আগস্ট ২০১৮

বিশৃঙ্খলার মহোৎসব

মৃত্যুর ফাঁদের অপর নাম ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা। সর্বত্রই চলছে বিশৃঙ্খলার মহোৎসব। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। পরিবহন শ্রমিকদের বেপরোয়া ক্ষিপ্র গতি আশঙ্কাজনক। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও নিয়ন্ত্রণহীন গতি, লাগামহীন, ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অব্যবস্থাপনা। অসম প্রতিযোগিতায় নেমে ‘আগে যাব, বেশি পাব’ অর্থনৈতিক এই লাভ-লোকসানের হিসাব কষে সঙ্কীর্ণ ও খানাখন্দময় সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় হাজারো মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে চালকের বেপরোয়া লোভী মনোভাব ও নিয়ন্ত্রণহীন গতি। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে জানা যায়, কেবল গত ঈদে ঘরে ফেরাকে কেন্দ্র করে ১৩ দিনের ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৫ আর আহত হয়েছে ২ হাজার ৮৫৯ জন। আর গত তিন বছরে ঈদ-উল-ফিতরে ৬০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৮০৩ জন। ২০১৭ সালে ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৯৭ জন। আর আহত হয়েছেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন। পুলিশের পাঁচ বছরের হিসাব অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার ২৮০ জনের মৃত্যু হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম তাদের অবস্থা আমাদের ওপরে। কিন্তু দেশগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। অথচ এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা অনেক বেশি। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো সঙ্কীর্ণ রাস্তা, রোড ডিভাইডার না থাকা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, তরুণ চালকদের আধিক্য, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন মদ্যপ চালক, অস্বচ্ছ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া, অমনোযোগিতা, সিট বেল্ট না বাঁধা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, অদূরদশির্তা। অসম প্রতিযোগিতা, দুর্বল স্পিডবেকার, বেপরোয়া গতি, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ তিন চাকার যানবাহনের প্রবল বৃদ্ধি, ক্ষুদ্রযানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, বিধি লঙ্ঘন করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং, ট্রাফিক আইন অমান্য, দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও বেহাল সড়ক, বেপরোয়া গতি, ফুটপাথ দখল, লুকিং গ্লাস ব্যবহার না করা, ছোট-বড়, ধীরগতি ও অতিগতি এবং অযান্ত্রিক গাড়ি, যত্রতত্র পার্কিং, তদসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতা, খামখেয়ালিপনা, ঘুষ, দুর্নীতি ট্রাফিক পুলিশের অপেশাদারিত্ব, প্রকৃত দোষীদের শাস্তি আওতায় না আনাসহ বিবিধ কারণে রাস্তার বেহাল দশা আর সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ দিন কি দিন দীর্ঘতর হচ্ছে। এ মরণফাঁদ রোধ করতে হলে উপর্যুক্ত কারণগুলো চিহ্নিত করে আশু সমাধান করাসহ, ছোট গাড়ি কমানো, পাবলিক যানবাহন বৃদ্ধি, ফুটপাথ দখলমুক্ত করণ, লেন বৃদ্ধি, স্বচ্ছ ড্রাইভিং লাইসেন্স পদ্ধতি, অল্প দক্ষ বা অদক্ষ চালকের অনুমতি প্রদান না করা, গতিসীমা রোধ, তরুণ চালকদের নিষেধাজ্ঞা, ঘুষ-দুর্নীতিকে না বলে ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধসহ সঠিক পথে পরিচালনা করতে সকল আইন তৈরি ও যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ট্রাফিক পুলিশের পেশাদারিত্ব এবং প্রকৃত দোষীদের শাস্তি আওতায় নিয়ে আসলে দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব। জানেন তো ঠেলার নাম বাবাজি! পরিশেষে বলতে চাই, আমরা যে জাতি হিসেবে চূড়ান্ত পর্যায়ের বিশৃঙ্খল তা প্রতিটি কর্মকা-ে প্রমাণিত। সবার আগে আমাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা যত দিন না শৃঙ্খলিত ও সচেতন হব তত দিন সড়ক দুর্ঘটনারোধ দুঃসাধ্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে
×