ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিরাট অঙ্কের ফান্ড নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-বিএনপি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৮ আগস্ট ২০১৮

বিরাট অঙ্কের ফান্ড নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-বিএনপি

শংকর কুমার দে ॥ দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পর্দার অন্তরালে কলকাঠি নেড়ে তৎপরতা শুরু করেছে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি। এই ধরনের অশুভ শক্তিকে মাঠে নামাতে সহায়তা করছে যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী, বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী। বিরাট অঙ্কের ফান্ড নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে সরকারকে কোণঠাসা ও বেকায়দায় ফেলাই উদ্দেশ্য। এ ধরনের তথ্য পেয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্রদের আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে নেয় বিএনপি-জামায়াত, যার টেলিফোনের কথার অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। নিরপাদ সড়কের ছাত্রদের আন্দোলনকে পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তারা এখন আবার ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর নতুন ইস্যুকে পুঁজি করে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর কায়দা নিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো জন্য ফেসবুক আইডি, পেজ ও গ্রুপ, ইউটিউব, টুইটার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ব্লগ, ওয়েবসাইটের মাধ্যমকে বেছে নেয়া হয়েছে। এমনকি এই ধরনের অপপ্রচারের ঘটনাগুলো বিশ্বাসযোগ্য করতে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলকে ক্ষেপিয়ে তোলাই হচ্ছে উদ্দেশ্য। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র জোরদার করছে যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী ও বিএনপি-জামায়াত। আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিচিতি আছে এমন সুশীল সমাজের ব্যক্তি ও বুদ্ধিজীবীদের মাঠে নামিয়ে দিয়েছে তারা, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে ছড়ানো গুজব, মিথ্যা অভিযোগগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায়। এ ছাড়াও দেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারের প্রশাসনের ভেতরের বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বিএনপি-জামায়াত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ইস্যুতে সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের নানাভাবে বিতর্কিত করে আন্দোলন গড়ে তোলার কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে খবর পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখার জন্য যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী ও বিএনপি-জামায়াত ২৫০ কোটি টাকা দিয়েছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, যা পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা প্রকাশিত সংবাদ মতেই প্রকাশ পায়। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রেখে বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় এনে দেশে ঘাঁটি গেড়েছিল যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী। পুরনো কায়দায় বিএনপি-জামায়াত জোট আবারও দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তির সহায়তায় বিরাট অঙ্কের ফান্ড নিয়ে নানা ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। প্রথমে ছাত্রদের দিয়ে কোটা আন্দোলন, পরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন ও এখন ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ এনে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে বিএনপি-জামায়াত। তারা এই ইস্যুতে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, আমেরিকা, ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক মহলে লবিং শুরু করেছে। অথচ নাশকতার উদ্দেশে বিএনপির নেতৃবৃন্দের টেলিফোনে কথোপোকথনের অডিও ক্লিপ যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহল কোন কথাই বলছে না। আন্তর্জাতিক মহলে লবিং করার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষেপিয়ে তুলতে বিএনপি-জামায়াতকে সহায়তা করছে দেশের সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত সরকারবিরোধী ব্যক্তিবর্গের তৎপরতা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যখন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে তখন থেকেই বিচার ঠেকানোর জন্য বিদেশে লবিং শুরু করে বিএনপি-জামায়াত। বিদেশে লবিং করার ফলে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে পাকিস্তান, যার পেছনে রয়েছে আইএসআই। এমনকি একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের পর দেশটির সংসদ একটি রেজ্যুলেশন পাস করে, যেখানে মূলত বাংলাদেশের নিন্দা করা হয়। বাংলাদেশ তার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে মাঠে নামিয়ে ভারত বিরোধী অপপ্রচার চালানোর সেই পুরানো কায়দাকে আবারও সামনে আনার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এখন আবার বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব সৃষ্টি করে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার খেলায় মেতে ওঠেছে বিএনপি-জামায়াত, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরুর পর থেকেই বর্তমান সরকারকে উৎখাতের জন্য বিরাট অঙ্কের টাকায় বিদেশে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যে লবিস্ট নিয়োগ করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সরকার উৎখাতের জন্য নানা ধরনের অপপ্রচার করা হয়েছে। যেই মুহূর্তে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় বাস্তবায়ন করা হয়, জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টাসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে সেই মুহূর্তে ছাত্রদের দিয়ে কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন ছেড়ে ছাত্ররা যখন ক্লাসে ফিরে গেছে তখন ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ এনে নতুন ইস্যু তৈরি করে তা সামনে এনে পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন স্থিতিশীল তখন আবার অশান্ত-অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য পর্দার অন্তরাল থেকে কেউ কলকাঠি নাড়ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনের আগে আরও অনেক অনাকাক্সিক্ষত বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হবে যার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে বিচলিত ও বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×