ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ আগস্ট ২০১৮

গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার গুজব ছড়িয়ে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে দুই শতাধিক তরুণ ধানম-ি ৩/এ অফিসে লাঠিসোটা এবং ইট-পাটকেল নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীর কারও কারও মুখম-ল হেলমেট দিয়ে ঢাকা ছিল। এদের মধ্যে অর্ধেকের গায়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোশাক থাকলেও বাকিদের গায়ে সেই পোশাক ছিল না। এতে ছাত্রলীগের অন্ততপক্ষে ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৭ জনকে জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সীমান্ত স্কয়ারের (সাবেক রাইফেলস স্কয়ার) সামনে অবস্থান করেছিলেন। আর পুলিশের অবস্থান ছিল ঝিগাতলা মোড়ে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জনকণ্ঠকে জানান, পুলিশ জিগাতলা মোড় ও এর আশপাশে অবস্থা নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুর থেকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় শিক্ষার্থীদের পোশাক পরা কিশোর ও তরুণরা সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ তৈরি করে। বেলা আড়াইটার দিকে চার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন বলে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। এক শিক্ষার্থীর রগ কেটে ফেলা হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। পরে মাইকে ঘোষণা করা হয়, আমাদের চার শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন ও এক ভাইয়ের ওপর হামলা হয়েছে জিগাতলায়। তোমরা সবাই সেদিকে চলো। এ সময় দুই শতাধিক তরুণ দৌড়ে জিগাতলার দিকে আসতে থাকে। আসতে আসতে তরুণরা রাস্তার পাশের গাছের ডাল ভাঙতে থাকে। তারা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এদের কয়েকজনের মুখে হেলমেট পড়া ছিল। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের দিকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপস্থিত কর্মীদেরকে ধাওয়া দেয়। পরে তারা কার্যালয়ে ঢোকার আগে মূল রাস্তায় এদেরকে বাধা দেয়া হয়। এ সময় হামলাকারীরা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কর্মীরা বের হয়ে পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সময় দুই পক্ষে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। এই ঘটনার ভিডিও করার কারণে এক পথচারীর মোবাইল ফোন কেড়ে ভেঙ্গে ফেলেন হেলমেট পরিহিত এক হামলাকারী। এই হামলায় অন্ততপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগ কার্যালয় সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ কর্মীদের পাল্টা ধাওয়ার মুখে ছাত্র নামধারীদের একটি দল স্থানীয় ট্রাম্প ক্যাফেতে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে সেই ক্যাফেতে হামলা করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। আওয়ামী লীগ ধানম-ি কার্যালয়ে সামনে এক চা বিক্রেতা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে একদল আন্দোলনকারী ছাত্র পার্টি অফিসের দিকে আসতে থাকলে ঝামেলা বাধে। ছাত্ররা হঠাৎ করে জিগাতলা মোড় থেকে আসতে থাকে। তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। ছাত্ররা বাধা না মানলে বাগ-বিতণ্ডা হয়। ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান দিয়ে পার্টি অফিসের দিকে এগোলে পার্টি অফিসের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেন। ধাওয়ার মুখে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে সীমান্ত স্কয়ার এলাকায় অবস্থান নেয়। তাদের ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ধানমণ্ডি ২ নম্বর সড়কের স্টার রেস্তরাঁর দিকে সরে যায়। এদের অনেকে শিক্ষার্থীদের পোশাক পরা ছিল না। অনেকে হেলমেট পরাছিল। অনেকের হাতে লাঠি ও ইট ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে এক শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলার গুজব শুনে সায়েন্স ল্যাব এলাকা থেকে কিছু শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে ধানম-িতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে ছুটে যায়। এ সময় কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে শিক্ষার্থীরা। তখন কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বের হয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। আন্দোলনকারী একদল শিক্ষার্থী পার্টি অফিসের দিকে আসতে থাকলে ঝামেলা বাধে। ছাত্ররা হঠাৎ করে জিগাতলা মোড় থেকে আসতে থাকে। তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। ছাত্ররা বাধা না মানলে বাগ-বিতণ্ডা হয়। ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান দিয়ে পার্টি অফিসের দিকে এগোলে পার্টি অফিসে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেন। ধাওয়ার মুখে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে সীমান্ত স্কয়ার এলাকায় অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা আবার এগোতে চাইলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ফের তাদের ধাওয়া দেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বিকেল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এদিকে সংঘর্ষের সময় গুলি ছোড়ার দাবিও করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ। তবে কারা গুলি ছুড়েছে তা তারা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। টানা ছয় দিন ধরে রাস্তায় অবস্থানের কারণ জনজীবনে কার্যত স্থবিরতা নেমে এসেছে। এর মধ্যে দুই দিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। স্কুলড্রেস বিক্রি করেন এমন দোকানিরা জানান, বছরের এই সময় পোশাক বিক্রি না হলেও গত কয়েকদিন ধরে অস্বাভাবিক হারে পোশাক বিক্রি হচ্ছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ছাত্রদের পোশাক পরে অছাত্ররা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে বারবার সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বারবার বলছেন, ছাত্রদের আবেগ কাজে লাগিয়ে মতলবি মহল তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে মামলা ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের উস্কানিদাতা হিসেবে ২৮টি ফেসবুক ও টুইটার আইডি শনাক্ত করেছে পুলিশ। আইডির মালিক ও এ্যাডমিনদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। গত ২ আগস্ট রাজধানীর রমনা থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় অসংখ্য শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব, নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ, প্রধানমন্ত্রীর ভুল বার্তা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এজাহারে জুম বাংলা নিউজ পোর্টাল, বিএনপি সমর্থক গোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদ, এ্যাক্সিডেন্ট নিউজ, বাংলামেইল৭১, বাঁশেরকেল্লা, ফাইট ফর সারভাইভার্স রাইট, ফাঁকিবাজ লিঙ্ক, আন্দোলন নিউজ, রানা মাসুম-১ , নওরিন-০৭, দিপু খান বিএনপি, ইদ্রিস হোসেইন, এম আল আমিন-৯৯, বিপ্লবী কাজী, নাসিফ ওয়াহিদ ফায়জালসহ অনেকের ফেসবুকের নাম উল্লেখ রয়েছে।
×