ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধুর জন্য ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৭:৪৩, ৩ আগস্ট ২০১৮

বন্ধুর জন্য ভালবাসা

যখন আকাশের ঘনকালো আঁধার করা মেঘের রাজ্যে ডানা ঝাঁপটাতে ওই পাখির আর ভাল লাগে না, তখন তৃষ্ণার্ত পায়েল পরা পাখির খুব সাধ জাগে রিমঝিম বৃষ্টির গানের সুরে ভিজতে কিংবা অপলক দৃষ্টিতে রোদ্দুর হাসি দেখতে। বৃষ্টি, রংধনু কিংবা রোদ নামধারী ওরা সবাই আসলে পাখির বন্ধু, কখনও বা আঁধার করা মেঘও। ‘বন্ধু’ হলো এমনই একটা স্বচ্ছ আয়না যাকে বলতে হয় না, বোঝাতে হয় না, অনুরোধ করতে হয় না কিংবা প্রয়োজন হয় না উপদেশ দিয়ে মনের কথা প্রকাশ করার। পারস্পরিক সমঝোতা, শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালবাসার অগাধ বিশ্বাসের সেতুবন্ধন হলো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের দুয়ার এতটাই বিশাল যে, বয়স, ধর্ম, গোত্র হিংসা, স্বার্থপরতা, লোভ, সব কিছুর উর্ধে পবিত্র এই সম্পর্ক হয়ে থাকে বাবা-মায়ের সঙ্গে, ভাই-বোনের সঙ্গে, সহপাঠীর সঙ্গে, সহকর্মীর সঙ্গে এমনকি তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বের অন্য প্রান্তে না দেখা কারও সঙ্গে। বন্ধুত্ব আকাশের মতোই অসীম আর সাগরের ঢেউয়ের মতো উচ্ছল যার কাছে গেলে সব কষ্ট ধুয়ে যায়। বন্ধুত্বের ভালবাসার কাছে অনেক কিছুই ম্লান হয়ে যায়। আর তাই তো ভালবাসা দিবস উদযাপিত হয় বন্ধুত্বের ভালবাসায়। নতুন অভিজ্ঞতা ছেলেবেলা! কিংবা মেয়েবেলা! যা-ই বলি না কেন স্কুল শুরুর দিনগুলোতে আমাদের অনেকেরই নতুন অভিজ্ঞতার নাম হয়ত একটাই, বন্ধুত্ব! পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে চেনা জগতটা যে এক লাফে অনেক দূর চলে গিয়েছিল সে তো বন্ধুদের হাত ধরেই। জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আজ যে যেখানেই থাকি না কেন চলার পথে বন্ধুত্ব নামের এই পাথেয়টির তুলনা বোধহয় আর কিছুর সঙ্গেই চলে না। এ এমনই বিষয় যেন কিছু না থাকলেও বন্ধুত্ব থাকলে চলে আবার সব থাকলেও বন্ধুত্ব ছাড়া চলে না! নানা সংস্কৃতিতে, নানা দেশে বন্ধুত্বের রীতিনীতিতে আগেও যেমন ভিন্নতা ছিল, এখনও তেমনি ভিন্নতা আছে। কিন্তু বন্ধুত্ব তো তাই যাকে কোন নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না, সংজ্ঞা দিয়ে বাঁধা যায় না। হয়ত তার প্রয়োজনও নেই। তবু মানুষ যুগে যুগে দেশে দেশে বন্ধুত্বকে যেমন উদযাপন করেছে তেমনি একে ব্যাখ্যা করারও চেষ্টা করেছে। বন্ধু নিয়ে মনীষীদের উক্তি এমন এককাল তো ছিলই যখন ‘ছেলেতে-মেয়েতে’ বন্ধুত্ব হলে তা কেবল ভালবাসা-প্রেমের সম্পর্ককেই বোঝাত! কিন্তু এই যুগ সে সব পেছনে ফেলে অনেক দূরই এগিয়েছে। তবু বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা দিয়ে শুরু করা যেতে পারে ‘বন্ধুত্ব বলিতে তিনটি পদার্থ বোঝায়। দুই জন ব্যক্তি ও একটি জগত। অর্থাৎ দুই জনে সহযোগী হইয়া জগতের কাজ সম্পন্ন করা। বন্ধু মোতাহার হোসেন চৌধুরীকে লেখা চিঠিতে নজরুল নিজের আবেগকে এভাবেই প্রকাশ করেছিলেন, ‘আমার চোখের জলের মতিহার, বাদল রাতের বুকের বন্ধু। যেদিন এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর আর সবাই আমায় ভুলে যাবে, সেদিন অন্তত তোমার বুক বেঁধে উঠবে। বন্ধুর জন্য ফ্যাশনেবল উপহার পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত হলেও বন্ধুত্ব সর্বজনীন। তাই এই দিবস পালনে কারোর কোন আপত্তি নেই। আজকের এই দিনে প্রাণের বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানাতে নিশ্চয়ই সবাই বিশেষ আয়োজন করবেন। কিংবা আয়োজনে ঘনঘটা না থাকলেও প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে নিশ্চয়ই মিলবেন। জানতে চাইবেন, বন্ধু কী খবর বল? কতদিন দেখা হয়নি...। সামাজিক ওয়েবসাইট ফেসবুক, টুইটার, মোবাইল ফোনে চলবে এসএমএস আদান-প্রদান। শুভেচ্ছা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় কার্ডের প্রচলন হারিয়ে যেতে বসেছে। তারপরও বন্ধু দিবসের কার্ড তুলে দেবেন বন্ধুর হাতে বন্ধু। পাশাপাশি ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহার সামগ্রী দেবেন কেউ কেউ। কী দেবেন বন্ধুকে আপনার বন্ধু যদি মেয়ে হয়, তাহলে দিতে পারেন গয়না, হাতঘড়ি, সুগন্ধি, শুভেচ্ছা কার্ড, শোপিস, চকোলেট বক্স, মগ, কাঠের তৈরি গয়নার বাক্স, মোমদানি, ফুলদানি, পেইন্টিংস, ফটোফ্রেম, পোশাক, ডায়রি, নোটবুক, মিউজিক প্লেয়ার, মেকআপ বক্স, প্রসাধনী, বই, শপিং মল বা বিউটি পার্লারের ডিসকাউন্ড কুপন ইত্যাদি। আপনার বন্ধু যদি ছেলে হয়, তাহলে দিতে পারেন হাতঘড়ি, সুগন্ধি, শুভেচ্ছা কার্ড, মম, মানিব্যাগ, পোশাক, রোমান্টিক গানের সিডি, বেল্ট, সিডি, ফটোফ্রেম, কলম, কোর্টপিন, টাই, অফিস ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি। বিশ্ব বন্ধু দিবস উপলক্ষে আমাদের দেশের মার্কেটগুলোতে বেশ ভিড় দেখা যায়। ঢাকার নিউমার্কেটে গিফট গ্যালারির বিক্রেতা রাশেদের মতে, বিশ্ব বন্ধু দিবসের বেশির ভাগক্রেতা হচ্ছে আমাদের দেশের তরুণ সমাজ। বন্ধু দিবসে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ফ্রেন্ডশিপ বেল্টের। তবে আপনি আপনার বন্ধুকে যা-ই উপহার দিন না কেন, আপনার উপহারটি তার কাছে বহু শ্রেষ্ঠ উপহার। এ ছাড়া বন্ধু দিবসের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে হলুদ গোলাপ আর ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের মতো বিষয়গুলোও। মজার ব্যাপর হলো, এই ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের ধারণাটিও এসেছে আমেরিকা থেকেই। আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে অনেক আগে থেকেই বন্ধুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যান্ড দেয়ার এই রীতি চালু আছে। তারা তাদের বন্ধুদের জন্য ব্যান্ড তৈরি করে। আর যাকে ব্যান্ড দেয়া হয়, সেও কখনোই ব্যান্ডটি খোলে না। আবার বন্ধুত্বের প্রতীক যে হলুদ গোলাপ সেই হলুদ রং হলো আনন্দের প্রতীক। আর হলুদ গোলাপ মানে শুধু আনন্দই নয়, প্রতিশ্রুতিও। কাজেই বন্ধুত্বের মাঝে যেন আনন্দের পাশাপাশি থাকে প্রতিশ্রুতিও সেই কথাটিই যেন মনে করিয়ে দেয় এই ভালোবাসা দিবস। অমরেশ বিশ্বাস ছবি : তুষার আহমেদ মডেল : রুবেল, রেইন, রিপা, আদর ও জুয়েল মেকআপ : নিমো বিউটি স্যালুন
×