ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ চায় আসন ধরে রাখতে, বিএনপি পুনরুদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১ আগস্ট ২০১৮

আওয়ামী লীগ চায় আসন ধরে রাখতে, বিএনপি পুনরুদ্ধার

এম এ রকিব, কুষ্টিয়া ॥ পদ্মা-গড়াই বিধৌত কুষ্টিয়ার গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী উত্তাপ। জেলার মোট চারটি সংসদীয় আসনেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যেতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। মনোনয়নের প্রত্যাশায় শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ। চালাচ্ছেন নিজ নিজ দলীয় হাইকমান্ডের কাছে জোর লবিং। তবে নমিনেশন দৌড়ে শাসক দল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই এগিয়ে রয়েছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। কোন কোন আসনে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতারা চান জেলার চারটি আসনে পুনরায় বিজয়ী হতে, অন্যদিকে বিএনপি চায় তাদের হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে। আগামীকাল গাইবান্ধা নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকা বিএনপি-জামায়াত দৃশ্যত মাঠে না থাকলেও তলে তলে প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি ভোটে আসলে কুষ্টিয়ার চারটি আসনেই নির্বাচন হবে প্রতিযোগিতামূলক। জমে উঠবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ভোটের লড়াই। কোথাও কোথাও আবার আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগই হতে পারে। কুষ্টিয়া থেকে এবারও দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি ও জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সহচর, বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলামও এবার নৌকা প্রতীক চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এদিকে প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে কোন প্রার্থী ভাল, কে লুটপাট-টেন্ডারবাজি করেছে, কে দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বা তৃণমূল নেতাদের বঞ্চিত করে দলকে আত্মীকরণ করেছে ইত্যাদি নিয়ে। পাশাপাশি পুরাতনদের হটিয়ে নতুন মুখও প্রত্যাশা করছে অনেক ভোটার ও তৃণমূল নেতারা। একসময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসন। কিন্তু এখন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেছে বিএনপির সেই দুর্গ। কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) ॥ দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে কুষ্টিয়া-১ আসন গঠিত। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত এ আসনটিতে ছিল বিএনপির দাপট। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দলটির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী এখন মাঠে সরব। অপরদিকে বিরোধে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। এ দলের বর্তমান ও সাবেক এমপি এবং তাদের কর্মীদের মধ্যে রয়েছে দা-কুমড়ো সম্পর্ক। ১৯৯১ খেবে ২০০১ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে বিএনপির আহসানুল হক ওরফে পচা মোল্লা জয়লাভ করেন। তার মৃত্যুতে পর ২০০৩ সালের উপনির্বাচনে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র বিএনপি নেতা রেজা আহমেদ বাচ্চু ওরফে বাচ্চু মোল্লা বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আলতাফ হোসেনকে পরাজিত করে এ আসনে এমপি হন দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ নেতা আফাজ উদ্দিন আহমেদ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। কিন্তু দলের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরী আনারস প্রতীক নিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নাটকীয়ভাবে বিজয়ী হন। স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগের সমর্থক ও ভোট বেশি হলেও এ আসনটি কোন্দলের কারণে বেশিরভাগ সময়ই হাতছাড়া হয় এবং জাতীয় পার্টি ও বিএনপির দখলে চলে যায়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান এমপি রেজাউল হকের স্বজনদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। ভাই টোকেন চৌধুরী ও ছেলে কলিন্স চৌধুরীর নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজিসহ বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত। তাছাড়া বর্তমান এমপি তার নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এসব রটাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, আমার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এখানে অনেক বেশি সংগঠিত ও শক্তিশালী। মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে মনোনয়ন দেয়া হলে অবশ্যই আমি মনোনয়ন পাব। অপরদিকে সাংগঠনিকভাবে এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদের অবস্থান বেশ মজবুত। আগামী নির্বাচনের জন্য তিনি মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি এলাকায় করছেন গণসংযোগ। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও যোগাযোগ রাখছেন দলের প্রবীণ এই নেতার সঙ্গে। আফাজ উদ্দিন বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চাইব। তবে নেত্রী যাকে নৌকা দেবেন তার পক্ষেও আমি কাজ করব। এ ক্ষেত্রে তিনি যোগ্য কাউকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান। এ দুজন ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য রশিদুল আলম। যদিও তিনি এলাকায় এখনও শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারেননি। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সরোয়ার জাহান বাদশাও নৌকার টিকেট চাইবেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। অপরদিকে বিএনপিতেও রয়েছে দলীয় কোন্দল। দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রেজা আহমেদ বাচ্চু ওরফে বাচ্চু মোল্লা ও সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেনের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং ও দ্বন্দ্ব-বিবাদ। তবে বাচ্চু মোল্লাকেই দলের একক প্রার্থী মনে করেন বেশিরভাগ নেতাকর্মী। প্রতিমন্ত্রী আহসানুল হক মোল্লার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে মনোনয়ন পান তার ছেলে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। বর্তমানে বাচ্চু মোল্লাই গণসংযোগের পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করার কাজে তৎপর রয়েছেন। দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ আলতাফ হোসেন, এ্যাডভোকেট রমজান আলীও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা বলেন, দল নির্বাচনে অংশ নিলে অবশ্যই মনোনয়ন চাইব। মাঠে আমি একাই আছি। এদিকে বর্তমান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে সাবেক খাদ্য প্রতিমন্ত্রী কুরবান আলীর ছেলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা শাহরিয়ার জামিল জুয়েল এবং জাসদ (ইনু) শরিফুল কবীর দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) ॥ মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-২ আসন রাজনীতির মাঠে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাসীন জোটের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়ি এ নির্বাচনী এলাকায়। এ আসনে মাহবুবুল হক হানিফ প্রার্থী থাকলেও জোটের স্বার্থে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি ছেড়ে দিতে হয় শরিক দল জাসদকে এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে এ আসনে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন হাসানুল হক ইনু। এ নিয়ে ওই সময় আওয়ামী লীগে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে মাহবুব-উল আলম হানিফকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন হাসানুল হক ইনু। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। প্রভাবশালী ওই দুই নেতার সমর্থকদের দ্বন্দ্ব বিবাদে মাঝে মধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এই এলাকার রাজনীতি। তাই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এবার আসনটিতে আর ছাড় দিতে নারাজ। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বড় দলে ছোটখাটো বিবাদ থাকতেই পারে। এগুলো সাময়িক। তবে সবাই স্বাধীন। যার যার দল ইচ্ছে করলেই প্রার্থী দিতে পারে। আমরা জোটে আছি। আর নির্বাচন জোটগতভাবেই হবে। রাজনৈতিক কারণে এখানে জোটগতভাবে ভোট করার ইচ্ছা আমার আছে। অপরদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও বসে নেই। আসনটি পুনরুদ্ধারে দলটির নবীন ও প্রবীণ নেতারা মাঠে নেমেছেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকন জোটের প্রার্থী হিসেবে এখন নির্বাচনী মাঠে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আরও রয়েছেন- বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আবদুল গফুরও মাঠে রয়েছেন। তবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জোটের প্রার্থী হিসেবে এ আসনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুই পাচ্ছেন নৌকার টিকেট এমনটিই এলাকায় প্রচার রয়েছে। এলাকায় তিনি গণসংযোগেও এগিয়ে রয়েছেন। প্রতি মাসে কয়েকবার তথ্যমন্ত্রী এলাকায় আসছেন এবং ঘর গোছানোসহ দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) ॥ জেলার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে কুষ্টিয়া সদর ও ইবি থানা এবং পৌর এলাকা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-৩ আসনটি জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। স্থানীয় নেতাদের মতে, বর্তমান এমপি হানিফের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এমপি হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও বাইপাস সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ তিনি করেছেন। মাত্র ৫ বছরেই ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে পুরো জেলার চেহারাই পাল্টে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই কেন্দ্রীয় নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম বলেন, তার (হানিফ) উন্নয়ন কার্মকা-, রাজনৈতিক ইমেজ এবং দলীয় অবস্থান এসব মূল্যায়ন করলে মাহবুব-উল আলম হানিফ এ আসনে একক এবং সম্ভাবনাময় প্রার্থী। এর বাইরে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী নেই। তিনি এমপি থাকা অবস্থায় এলাকায় যে উন্নয়ন কাজ করেছেন তার জন্য আগামী নির্বাচনে হানিফ ভাইকে জিততে কোন বেগ পেতে হবে না। মানুষ তাকে ভোট দিয়ে পুনরায় বিজয়ী করবে। মাহবুব-উল আলম হানিফ ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আগজর আলী, কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ ডাঃ এ এফ আমিনুল হক রতন। তারা ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামও এবার এই আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে তার ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র মতে, ব্যারিস্টার আমীর ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে গেলেও মাঠ ছাড়েননি। চরম দুঃসময়েও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও তার কন্যা ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর সহ¯্রাধিক উদ্যমী তরুণ-তরুণীকে সংগঠিত করে ‘সচেতন যুব সমাজ’ গঠন এবং তাদের মাধ্যমে উঠান বৈঠক ও গণসংযোগসহ নানা রাজনৈতিক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যারিস্টার আমীরের প্রস্তুত করা মাঠের ফসল ঘরে তোলে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন পান তারই হাতে গড়া আওয়ামী লীগ জেলা কমিটির সভাপতি প্রয়াত খন্দকার রশিদুজ্জামান দুদু। নির্বাচনে তিনিই বিজয়ী হন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে তার ঘনিষ্ট সমর্থকরা জানিয়েছেন। বসে নেই বিএনপির প্রার্থীরাও। জাতীয় পার্টি, জাসদ ও জামায়াতসহ আরও কয়েকটি দলের নেতারাও নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। আগামী একাদশ নির্বাচনে বিএনপি চায় হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। এ আসনে ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এ্যাডভোকেট শামিম-উল হাসান অপু ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিন বলেন, আমরা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আন্দোলন করছি। জনগণ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। অপরদিকে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নাফিজ আহমেদ খান টিটু। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ ইনু) প্রার্থী জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) ॥ কুমারখালী ও খোকসা উপজেলা নিয়ে গঠিত কুষ্টিয়া-৪ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হলেও দলীয় কোন্দল আগামী সংসদ নির্বাচনে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে রয়েছে। ক্ষমতার স্বার্থে দলীয় নেতারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। ২০০১ সালে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে এ আসনে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ গোলাম কিবরিয়ার পুত্রবধূ সুলতানা তরুণ। ওই সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী ছিলেন বর্তমান এমপি আবদুর রউফ। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সুলতানা তরুণ জয়লাভ করেন। আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আবদুর রউফ অল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সদর উদ্দিন খানকে মোকাবেলা করে। বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা ১৯৯১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে জয়লাভ করলেও চরম কোন্দলের কারণে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পরাজয় বরণ করতে হয়। ওই দুই বারই বিজয়ী হন বিএনপি দলীয় প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান এমপি আবদুর রউফের সঙ্গে দলের প্রভাবশালীসহ অনেক স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তেমন বনিবনা নেই। তাই আগামী নির্বাচনের আগেই যদি এই বিরোধ মিটিয়ে ফেলা না হয় তাহলে এর খেসারত ভোটের ময়দানে আওয়ামী লীগেকেই দিতে হতে পারে। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি আবদুুর রউফ ও সাবেক এমপি সুলতানা তরুণসহ প্রভাবশালী নেতারা মনোনয়নের প্রত্যাশায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এছাড়া এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ সদর উদ্দিন খান, মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলা মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ও কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন জাফর, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান খান এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সুফি ফারুক ইবনে আবু বকর আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে। বর্তমান এমপি আবদুর রউফ বলেন, এলাকায় যারা ভাল কাজ করেছেন তাদের কেউই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন না। খোকসা-কুমারখালীর মানুষ জানে আমি এলাকায় কী উন্নয়ন করেছি। তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জেলার বহু স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ভবন নির্মাণসহ এমপিও ভুক্তির কাজ আমি করেছি। আমার সময়ই খোকসা-কুমারখালী এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়াই নদীর ওপর কুমারখালী-যদুবয়রা ব্রিজ নির্মাণ কাজের টেন্ডারসহ ২০৬ কোটি টাকার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তাই আমার মনোনয়ন পেতে সমস্যা হবে না। মুষ্টিমেয় যারা কোন্দলে জড়িত তাদের পাশে কেউ নেই। আমার সঙ্গে সবারই সুসম্পর্ক রয়েছে। তবে যেই নৌকার টিকেট পান না কেন তিনি তার পক্ষেই কাজ করবেন বলে জানান। অপরদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় টিকেট পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ২০০৮ সালের এমপি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর শহীদ গোলাম কিবরিয়ার পুত্রবধূ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী মহিতুল ইসলামের আপন খালাতো সুলতানা তরুণ। এলাকায় তিনি ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সভা-সমাবেশসহ গণসংযোগ করছেন নিয়মিত। শুনছেন সাধারণ ভোটারদের সুখ-দুঃখের কথা। জেলায় তিনি একমাত্র সম্ভাব্য মহিলা প্রার্থী। সাবেক এমপি সুলতানা তরুণ বলেন, এমপি থাকাবস্থায় এলাকায় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করার পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছি। এখনও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছে। মনোনয়ন পেলে অবশ্যই আমি বিজয়ী হবো বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে খোকসা উপজেলা থেকে একমাত্র প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খানের সঙ্গেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের যোগাযোগও বেশ ভাল। তিনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সদর উদ্দিন খান বলেন, বিপুল ভোটের ব্যবধানে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। এবার খোকসা-কুমারখালীবাসীর বেশি করে সেবা দিতে চাই। জনগণের পাশে থেকে দলকে গুছিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াসহ আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। চারবারের খুলনা বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ এবং একবার দেশ সেরা নির্বাচিত উপজেলা চেয়াম্যান, কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান খান এবার নির্বাচনী মাঠে বেশ সরব রয়েছেন। তিনি নিয়মিত সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ ও ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কা-ের প্রচারের মধ্য দিয়ে এলাকায় নিজ প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। আবদুল মান্নান খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগে আছি এবং ভোটারদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে রয়েছি। কুমারখালী-খোকসা নির্বাচনী এলাকায় আমার অবস্থান ভাল। আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। তবে জননেত্রী যাকে দলীয় টিকেট দিবেন তার পক্ষে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করব। নির্বাচনী মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন আরেক নেতা মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ও কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন জাফর। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। দীর্ঘদিন আমি এ আসনে আওয়ামী লীগের হাল ধরে আছি। নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন সেই প্রার্থীর কর্মী হিসেবে নিরলস পরিশ্রম করেছি। এবার আমি শতভাগ আশাবাদী জননেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থী হিসেবে আমাকেই মনোনীত করবেন। অন্যদিকে এ আসনে ২০ দলীয় জোট থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক এমপি ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি এমপি হন। এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মেহেদী আহমেদ রুমী বলেন, কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা ভোট দিতে পারলে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ ইনু) থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকোনুজ্জামান রোকনের নাম শোনা যাচ্ছে।
×