ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৭ জুলাই ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

এখন বর্ষা। বর্ষা যেহেতু, ঢাকার রাস্তাঘাট কাটাকাটি করতে হবে। হবেই। সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি। আর বৃষ্টির সময় কাটাকাটির উৎসব। জনদুর্ভোগ? ধুর মশাই! দুর্ভোগটুর্ভোগ নিয়ে ভাবলে চলবে? এই কাজ হচ্ছে। ওই কাজ হচ্ছে। না করলেই নয়। তা বর্ষার আগে করা যায় না? এখন করছেন, একটু সমন্বয় করে করুন। সরকারের সংস্থা দফতর, অধিদফতর নিজেদের মধ্যে কথাটথা বলতে পারে। কর্তাব্যক্তিরা বসতে পারেন এক টেবিলে। পারেন না? না। অত সময় নেই। আমি আমারটা বুঝি। সে তারটা। এভাবেই চলবে। আপনি আমজনতা। আপনি মানিয়ে নিন শুধু। এবং ঢাকার মানুষ বেশ মানিয়ে নিতে শিখেছে, বলতে হবে। প্রতিদিনের গঞ্জনা দিব্যি সহ্য করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। যেন নিয়তি। মেনে নিতেই হবে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। চলার অনেক পথ খোঁড়াখুঁড়িতে অর্ধেক হয়ে গেছে। সেখানে থৈ থৈ জল। খাল-বিলের চেহারা। এর তীর ঘেঁষে কোনরকমে চলছে গাড়ি। একটি একটি করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর চালক যদি সামান্য ভুল করে, সব শেষ। গাড়ি গর্তে! বর্ষা শুরুর পর থেকে এমন আশঙ্কা নিয়েই পথ চলতে হছে নগরবাসীকে। শ্রাবণে এসে দুর্ভোগটা যেন আরও বেড়েছে। যে রাস্তা ধরেই চলাচল করা হোক না কেন, কাটাকুটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কটির কথাই ধরা যাক, কী যে বেহাল অবস্থা! মহাব্যস্ত সড়কের একপাশ সেই কবে থেকে কাটা। নামমাত্র গাড়ি চলছে। হাঁটার পথও বিলীন প্রায়। তারও আগে থেকে টিএসসি বাংলা একাডেমি এলাকায় কাটাকাটি শুরু হয়। সেদিন শাহবাগ মোড় থেকে রিক্সায় ঢাবি ক্যাম্পাসের দিকে যাওয়ার সময় বুক হঠাৎ ধক্ করে উঠল। উপর থেকে হাতের বাম দিকে তাকাতেই দৃশ্যমান হলো দীর্ঘ এবং গভীর খাল। রাস্তার সমান্তরালে কাটা। একপাড় ভেঙ্গে পড়েছে। কাটা জায়গাটুকু এমনভাবে ঘিরে রাখা হয়েছে যে, ওপারের দৃশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় না। ফলে একেবারে বিপদ সীমানার কাছ দিয়ে চলছিল রিক্সা। চালককে হাতে ধরে থামাতে হলো। সতর্ক করার পর তিনি বিপদসীমা থেকে একটু সরে এলেন। এভাবে কোন রকমে রক্ষা পাওয়া গেল। ফকিরাপুল থেকে আরামবাগ যাওয়ার সময় দেখা গেল অভিন্ন চিত্র। প্রেসক্লাবের সামনেও তা-ই। শান্তিনগর এলাকার রাস্তা এমনিতেই জলে ডুবে থাকে। তার ওপর রাস্তা কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। আর মিরপুরের কথা তো বলাই বাহুল্য। হ্যাঁ, মেট্রেরেলের মতো বড় প্রাপ্তির আশায় কিছু দুর্ভোগ মেনে নিতেই হবে। কিন্তু মেট্রোরেল তো শহরের সব রাস্তায় বসানো হবে না। তাহলে এত কাটাচেরা কেন? অলিতে গলিতে গর্ত করে খাল-বিল-নদী বানানোর কি মানে? শান্তিনগরের বাসিন্দা আব্দুল হালিম এসব প্রশ্ন তুলে বলছিলেন, আমার মেয়েটা কীভাবে প্রতিদিন স্কুলে যায় আপনি ভাবতে পারবেন না। মিরপুরের এক যাত্রীর কাছে তাদের এলাকার অবস্থা জানতে চাইলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন। বলছিলেন, ঢাকা বসবাসের অযোগ্যÑ কিছুদিন আগেও এ কথা কথার কথা ছিল। এখন মোটামুটি বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তায় নামলে মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। শরীরে ক্লান্তি আসে বটে, মনটা বেশি আক্রান্ত হয়। কেবলই মনে হয়, এত উন্নয়ন হচ্ছে। আকাশ ঢেকে দেয়া ফ্লাইওভার। পদ্মার ওপর দীর্ঘতম সেতু। যমুনার ওপরও হচ্ছে। হচ্ছে আরও কত কী! কিন্তু শহর ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নিয়ে কেউ এগিয়ে আসছে না। আসছে বলে এখনও মনে হয় না। হয়? এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নতুন বাজেট ঘোষণা করেছেন মেয়র সাঈদ খোকন। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এবার ৩ হাজার ৫৯৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বাজেট পেশ করেছেন তিনি। বুধবার ডিএসসিসি ভবনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এ বাজেট ঘোষণা করা হয়। গত অর্থবছর ডিএসসিসির বাজেট ছিল তিন হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সে তুলনায় এবার ২৬১ কোটি আট লাখ টাকা বেশি বাজেট রাখা হয়েছে। এ টাকা যানজট নিরসন, জলাবদ্ধতা দূর করা, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল সংস্কার, বাজার আধুনিকায়ন এবং পরিবেশবান্ধব ঢাকা গড়ে তুলতে ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র। এই ব্যয় এবং আয়ের বিরাট ফিরিস্তিও দিয়েছেন তিনি। এত এত টাকার অঙ্ক। কিন্তু ফল পাবে তো ঢাকা দক্ষিণের মানুষ? উত্তর দেবে সময়। ঈদের কথা বলা প্রয়োজন। আরও একটি ঈদ সামনে। এবার ঈদ-উল- আজহা। ১২ আগস্ট জিলহজ মাসের চাঁদ উঠলে ২২ আগস্ট বাংলাদেশের মুসলমানরা কোরবানির ঈদ উদযাপন করবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সরকারী ছুটি। অনেকেই গ্রামের বাড়ি যাবেন ঈদ করতে। শুরু হয়ে গেছে মানসিক প্রস্তুতি। আগামী ৮ আগস্ট থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। চলবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কাউন্টারে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকেট পাওয়া যাবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এদিকে ঈদ-উল-আজহা মানেই সেক্রিফাইস। মনের পশু কোরবানি দেয়ার শিক্ষা নিতেই বনের পশু কোরবানি দেয়া হয়। এ জন্য প্রচুর গরু, ছাগল, মহিষ, উটের প্রয়োজন পড়ে। চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে প্রাথমিকভাবে এবার ঢাকায় ২২টি পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পশু নিয়ে আলোচনা সবে শুরু হচ্ছে। চলবে ঈদ পর্যন্ত।
×